রূপতত্ত্ব-ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ)
বর্তমানে পদকে শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থবোধক বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি হলো শব্দ। আর শব্দের সঙ্গে বিভক্তিযুক্ত হলে হয় পদ। কথার ক্ষুদ্রতম অংশকে শব্দ বলে। কথাকে ভাঙলে বাক্য পাওয়া যায়। বাক্যকে ভাঙলে পদ আর পদকে ভাঙলে পাওয়া যায় শব্দ+বিভক্তি (নামবিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি)। তাই বলা হয়, বিভক্তিযুক্ত শব্দই পদ। শব্দ ও পদ রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। শব্দ ও পদ নির্মাণের নানান দিক ব্যাকরণের যে অংশে উপস্থাপিত বা আলোচিত হয় তাকেই বলা হয় রূপতত্ত্ব। ড. হুমায়ুন আজাদ বলেন: রূপতত্ত্ব হচ্ছে শব্দের আভ্যন্ত ও সংগঠন বিশ্লেষণের বিদ্যা। বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইতে বলা হয়েছে, রূপতত্ত্বের দুটি প্রধান এলাকা হলো: শব্দনির্মাণ ও পদনির্মাণ। এছাড়াও দুটি গৌণ এলাকা আছে। যেমন : শব্দশ্রেণি নির্ধারণ এবং শব্দের উৎস নির্ণয়।
শব্দশ্রেণির প্রকরণ
শব্দ বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি দুটি মিলে যে শব্দ তৈরি করে তাকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। শব্দশ্রেণিকে আট ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. বিশেষ্য : নামবাচক শব্দ।
২. সর্বনাম : নামের পরিবর্তনবাচক শব্দ।
৩. বিশেষণ : দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণবাচক শব্দ।
৪. ক্রিয়া : কর্মবাচক শব্দ।
৫. ক্রিয়া বিশেষণ : ক্রিয়া বিশেষণবাচক শব্দ।
৬. অনুসর্গ : সম্পর্ক স্থাপনবাচক শব্দ।
৭. যোজক : সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচনবাচক শব্দ।
৮. আবেগশব্দ : আবেগবাচক শব্দ।
বিশেষ্য /Noun
নামবাচক শব্দকে বিশেষ্য বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে কোন ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, সমষ্টি, স্থান/দেশ, কাল, গুণ, ক্রিয়া, কর্ম ও গুণের নামকে বিশেষ্য বলে। বিশেষ্যকে আবার বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে। কে, কি, কারা দিয়ে প্রশ্ন করলে বিশেষ্য পাওয়া যায়। বচন ও লিঙ্গ বিশেষ্যের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ্য কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নামবাচক বিশেষ্য / Proper Noun : ডাকনামকে সংজ্ঞাবাচক শব্দ বা নামবাচক শব্দ বলে। যেমন:
ব্যক্তি : হাসান, ইমরান, আসিফ, ফারজানা, নাবিলা, মেধা, মিলন, মাটি, নাবা, নিশি, নজরুল।
স্থান/দেশ/গ্রাম : ঢাকা, বরিশাল, ফেনি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ, আমেরিকা, সেনগাঁও
গ্রন্থ : গীতাঞ্জলি, ঝিঙেফুল, অগ্নিবীণা, হাসু, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, ছানাবড়া, কুরআন।
নদী : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা।
পর্বত : হিমালয়, ককেশাস, হিন্দুকুশ।
একক সৃষ্টি : সূর্য, পৃথিবী।
২. জাতিবাচক বিশেষ্য/Common Noun : যে নামে একককে চেনা যায় না তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : হাসান, হাসিনা।
প্রাণী : ঘোড়া, ছাগল, কুকুর, বেড়াল (গরু জাতিবাচক কিন্তু ‘লালি’ ডাকনাম তাই নামবাচক)।
বিষয় : ফুল, পাখি, জাতি, একক সৃষ্টি, ভাষা, বই।
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য /Material Noun
যে নামে বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
তরল : পানি, দুধ, তেল, মধু, সিরাপ।
পানীয় : কোক।
কঠিন : লোহা, সোনা, পাথর, বরফ।
বায়বীয় : বাতাস, গ্যাস।
বৃক্ষ : আমগাছ, জামগাছ।
লেখাপড়া : বই, খাতা, কলম।
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য/বহুবচনজাতীয় বিশেষ্য/Collective Noun : যে নামে সমষ্টি বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : দল, বাহিনী, সংঘ, সভা, সমিতি, পঞ্চায়েত, বহর, জনতা।
প্রাণী : ঝাঁক, পাল।
৫. গুণবাচক বিশেষ্য: /Abstract Noun : বিশেষ্যের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে বিশেষ্য তৈরি হয় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সততা>সৎ, বীরত্ব>বীর, তারল্য>তরল, তরুণ>তারুণ্য, সৌন্দর্য>সুন্দর, দৈন্য>দীন (বিশেষ্য>বিশেষণ)।
৬. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য/Verbal Noun : ক্রিয়ার সাথে প্রত্যয়যুক্ত করে যে বিশেষ্য তৈরি করা হয় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : গমন, দর্শন/দেখা, শোনা।
সর্বনাম /Pronoun
বিশেষ্য বা নামপদের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। যেমন: আমি—আমরা, তুমি— তোমরা, তুই—তোরা, আপনি—আপনারা, সে—তারা/ওরা/এরা, তিনি/ইনি/ উনি—তাঁরা/ওঁরা/এঁরা। পক্ষ (পুরুষ) ও বচনের উপর নির্ভর করে সর্বনাম বিভিন্নরূপ ধারণ করে। সম্মানিত ব্যক্তি হলে সর্বনামে চন্দ্রবিন্দু বসে। সর্বনাম কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন:
প্রকরণ
|
একবচন
|
বহুবচন
|
১. ব্যক্তিবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি বোঝায়।
বক্তাপক্ষ
শ্রোতাপক্ষ
অন্যপক্ষ
|
আমি, আমাকে
তুমি, তুই, তোকে
আপনি, আপনাকে
সে (নর), শে (নারী), তিনি, তার, তাকে
এ, এর, ও, ওর
|
আমরা, আমাদের
তোমরা, তোমাদের, তোরা, তোদের
আপনারা, আপনাদের
তারা, তাদের, এরা, এদের, ওর, ওদের
|
২. নির্দেশকবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তির কাছ থেকে সামীপ্য বা দূরত্ব নির্দেশ করে।
|
এ, এই, এটা, ইনি, ইহা
ও, ওরা, ওটা, উনি, উহা
|
এরা, ইহারা
ওগুলো, ওদের, ওরা
|
৩. অনির্দেশকবাচক /অনির্দিষ্টবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে কোনো অনির্দিষ্ট বা পরিচয় হীন ব্যক্তি, বস্তু বা ভাব বোঝায়। কোন, কেহ, কেউ, যা কিছু,
|
কোন কিছু
|
কেউ কেউ, কিছু কিছু
|
৪. প্রশ্নবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা বোঝায়।
|
কে, কি/কী, কেন, কাহার, কিসের
|
কোনগুলো, কে কে, কী কী, কার কার
|
৫. সংযোগবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে দুই বা অধিক ব্যক্তি বা বস্তু সংযোগ বোঝায়।
|
যে, যেটি, যা তা, যে সে, যিনি, যিনি, তিনি, যাহা
|
যে যে যা যা, যারা যারা, যাকে যাকে, যেগুলো, যারা, যাহারা
|
৬. আত্মবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি নিজকে বোঝায়।
|
স্বয়ং, নিজ, আপনি, খোদ
|
আপনারা
|
৭. সমষ্টিবাচক
/সাকল্যবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি, বস্তু বা ভারে সমষ্টিকে বোঝায়।
|
সব, সকল, উভয়, সমুদয়, তাবৎ
| |
৮. ব্যতিহার
যে সর্বনাম দিয়ে সর্বনামের দ্বিত্ব রূপ বোঝায়।
|
আপনি, নিজে
|
আপনা আপনি, নিজে নিজে
|
৯. অন্যাদিবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে অন্য বা অপরকে বোঝায়।
|
অন্য, অপর, পর
|
অন্যরা, অপররা, পররা
|
১০. সাপেক্ষ সর্বনাম
যে সর্বনাম একে অন্যের উপর নির্ভরশীল এবং এরা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়।
|
যে-সে, যেমন-তেমন, যতক্ষণ-ততক্ষণ, যাকে-তাকে
|
যাদের-তাদের
|
বিশেষণ / Adjective
বিশেষ্য ও সর্বনামের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণকে বিশেষণ বলে। কেমন, কতো, কিভাবে, কয়টা দিয়ে প্রশ্ন্ করলে বিশেষণ পাওয়া যায়। সংখ্যা ও নির্দেশক বিশেষণের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনামের আগে বসে নামকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) গুণবাচক : দক্ষ, ঠান্ডা, চৌকস, মধুর, কর্কশ, রাগী, ভদ্র ইত্যাদি।
খ) রূপবাচক : সবুজ, সুন্দর, নীল, কাল, সাদা ইত্যাদি।
গ) অবস্থাবাচক : ফুটন্ত, ঘুমন্ত, শহুরে, সুফলা, রোগা, তাজা, খোঁড়া, পড়া, শোনা ইত্যাদি।
ঘ) অনির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক : শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, অনেক অনেক।
ঙ) নির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক : একশটি, দশটি, পঞ্চাশটি ইত্যাদি।
চ) স্থানবাচক : স্থান+ই— পাবনাই, ঢাকাই, মিরপুরি, স্থান+ঈয়— ইউরোপীয় ইত্যাদি।
ছ) সর্বনামবাচক : যত— তত, এত, কত, কেমন, এই, সেই, কোন, কোন কোন, স্বীয় ইত্যাদি।
জ) উপাদানবাচক : বস্তু+এ— বেলে, মেটে, কাগুজে, বস্তু+র— তালপাতার, লোহার ইত্যাদি।
ঝ) প্রশ্নবাচক : কত, কেমন, কোন ইত্যাদি।
ঞ) বর্ণবাচক : লাল, কাল, সাদা, নীল, ফ্যাকাশে ইত্যাদি।
ট) ক্রিয়াবাচক : গেল/গত/আসছে/আগামী, চলন্ত/চলমান,বাড়ন্ত, পতিত, নিবু নিবু, কাঁদো কাঁদো।
ঠ) ধ্বনাত্মকবাচক : শব্দ+এ— ঝকঝকে, কনকনে, ঝমঝমে, ঝিরঝিরে, গমগমে, ফুরফুরে, থইথই।
ড) বিশেষণে বিশেষণ : দারুণ প্রাণবন্ত, টকটকে লাল, ধবধবে সাদা ইত্যাদি।
ঢ়) সম্বন্ধবাচক : শব্দ+র/এর=অনেক দূরের, মাটির ঘরের, গরিবের ছেলে, আনন্দের সংসার।
২. ভাব বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনাম ছাড়া অন্য শব্দকে বিশেষিত করে তাকে ভাব বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) বিশেষণীয় বিশেষণ : যে বিশেষণ নাম বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন : অতি, সামান্য।
খ) অব্যয়ের বিশেষণ : যে বিশেষণ অব্যয়কে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ। যেমন : ধিক-শত ধিক
গ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : খুব তাড়াতাড়ি, আরো জোরে, বড় সুন্দর, অতি চমৎকার
গঠনের দিক দিয়ে বিশেষণ দুই প্রকার। যেমন :
১. মৌলিক বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বিশেষণ বলে। যেমন: ভালো, মন্দ।
২. সাধিত বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত বিশেষণ বলে। সাধারণত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত বিশেষণ তৈরি করা হয়। যেমন : চলন্ত, ডুবন্ত, সামাজিক।
তুলনামূলক বিশেষণ /অতিশায়ন বিশেষণ :
Degree /তুলনা
|
Positive /গুণ
|
Comparative
/দুয়ের মধ্যে তুলনা
|
Superlative
/অনেকের মধ্যে তুলনা
|
English
|
Adjective /Adj
Good, beautiful
|
Adjective+er
more +Adj
better, more beautiful
|
Adjective +est
most +Adj
best, most beautiful
|
তৎসম শব্দ
|
বিশেষণ
|
বিশেষণ +য়ান
|
বিশেষণ +ষ্ঠ
|
লঘু
অল্প
বৃদ্ধ
শ্রেয়
|
লঘীয়ান
কনীয়ান
জয়্যান
শ্রেয়ান
|
লঘিষ্ঠ
কনিষ্ঠ
জেষ্ঠ্য
শ্রেষ্ঠ
| |
বাংলা শব্দ
|
বিশেষণ
|
চাইতে, চেয়ে, থেকে, অধিক, অপেক্ষা,
অনেক, বেশি, অল্প, কম
|
সবচাইতে, সর্বাধিক
সবচে, সর্বাপেক্ষা
|
‘তর’ সংস্কৃত ‘তরপ/তরক/ষ্টরচ’ প্রত্যয় থেকে এবং ‘তম’ সংস্কৃত ‘তমট/তমপ’ প্রত্যয় থেকে বাংলা ‘তর ও তম’ হয়েছে। বিশেষণের তুলনা দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তর’ আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তম’ বসে। এরা বিশেষ্যবাচক শব্দে বসে না। যেমন: বৃহৎ: বৃহত্তর— বৃহত্তম, দীর্ঘ: দীর্ঘতর—দীর্ঘতম। এমন বহু শব্দ রয়েছে। যেমন : হীনতর, মহত্তর, ক্ষুদ্রতর, উন্নততর, উচ্চতর, দীর্ঘতর, গুরুতর, এগারতম, পঞ্চাশতম, মহত্তম, নীচতম, প্রিয়তম, মধুরতম, ক্ষুদ্রতম, যোগ্যতম ইত্যাদি। কিন্তু সংস্কৃত শব্দে য়ান—ষ্ঠ বসলে তর—তম বসে না। শ্রেয়— শ্রেয়ান— শ্রেষ্ঠ, লঘু— লঘীয়ান— লঘীষ্ঠ, অল্প— কনিয়ান— কনিষ্ঠ। কনিষ্ঠতর বা কনিষ্ঠতম বসে না। বাংলা শব্দে দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে বিশেষণের আগে ‘হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা’ ব্যবহার করা হয় অথবা অনেক, বেশি, খুব’ বসানো হয় কম বুঝাতে ‘অল্প বা কম’ বসানো হয় আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘সবচে, সবথেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়।
ক্রিয়া / Verb
ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে। ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে ক্রিয়াপদ হয়। কাজবাচক শব্দই ক্রিয়া। ধাতু দুই প্রকার। যেমন:
১. মৌলিক ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন: কর, পড়, দেখ।
২. সাধিত ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। অথবা যে ধাতুকে ভাঙলে প্রত্যয় পাওয়া যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন: করা, পড়া, দেখা, পড়ি, পড়ছি ইত্যাদি।
ক্রিয়ার প্রকরণ
যে শব্দ দিয়ে কাজ করা বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। ক্রিয়া কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) অনুক্ত ক্রিয়া : যার ক্রিয়া থাকে না।
খ) ভাব প্রকাশক ক্রিয়া : সমাপিকা, অসমাপিকা।
গ) কর্ম প্রকাশ ক্রিয়া : সকর্মক, অকর্মক, দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া।
ঘ) গঠনগত ক্রিয়া : একক ক্রিয়া, দ্বিত্ব ক্রিয়া, মিশ্রক্রিয়া, অস্তি বাচক ক্রিয়া, নেতিবাচক ক্রিয়া।
নিচে সকলপ্রকার ক্রিয়ার সংজ্ঞা ও নমুনা দেয়া হলো:
১. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) বই (কর্ম) পড়ে (ক্রিয়া)।
২. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম আছে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) তাকে (ব্যক্তিকর্ম) একটি বই (বস্তুকর্ম) পড়তে দিয়েছে (ক্রিয়া)।
৩. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নাই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) সবসময় পড়ে (ক্রিয়া)।
৪. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনেছে।
৫. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনে...। এ বা র-বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদকে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ বলে।
তবে অসমাপিকাকে সমাপিকা করতে আরেকটি ক্রিয়া লাগে। যেমন: সে একটি বই কিনে হাসানকে উপহার দেবে।
৬. যৌগিক ক্রিয়া: একাধিক ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অথবা কর্তার কাজ শেষ করতে একের অধিক ক্রিয়া থাকলে যৌগিক ক্রিয়া হয়। দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকার একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। যেমন: খেয়ে ফেলল, বসে পড়ল, ঘুমিয়ে গেল, করতে পারবে। সে বইটি পড়তে থাকল।
৭. সমধাতুজ ক্রিয়া: বিশেষ্য যদি ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই ক্রিয়াকে সমধাতুজ ক্রিয়া বলে। যেমন: সে জব্বর ঘুম ঘুমিয়েছে।
৮. নামক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে নামক্রিয়া বলে। যেমন: বেতা (বেত+আ), বাঁকা, ছাপা, ফলা ইত্যাদি।
৯. প্রযোজক ক্রিয়া: কর্তার কাজ কর্মকে দিয়ে শেষ হলে সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখান। শিক্ষক ছাত্রকে পড়ান। দেখা— দেখান/দেখানো, পড়া—পড়ান/পড়ানো, জানা— জানান/জানানো, শেখা—শেখান /শেখানো।
১০. অনুক্তক্রিয়া বা সহযোগী ক্রিয়া বা সাহায্যকারী বা সংযোক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যে না থেকে বা উহ্য থেকে শব্দের সংযোগ স্থাপন করে তাকে সহযোগী বা সংযোক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (হয়) ছাত্র। ফুলটি (হয়) সুন্দর।
১১. মিশ্রক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কাট, গা, ছাড়, ধর, মার ইত্যাদি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে মিশ্রক্রিয়া বলে। যেমন: শয়ন করা, গ্রহণ করা, প্রদান করা, গমন করা, শ্রবণ করা, দর্শন করা, জিজ্ঞাসা করা, নির্বাসিত করা, দূরীভূত কর, আগমন করা, আহার/ভক্ষণ করা, লাফ/লম্ফ দেয়া, নিদ্রা যাওয়া, ঝমঝম করা ইত্যাদি।
১২. অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্তা থাকে না বা কর্তা উহ্য থাকে তাকে অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: এখানে আসো। বইটি পড়। রোদে দৌড়াদৌড়ি করবে না। শিক্ষককে সম্মান করবে।
১৩. ভাববাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না বা উহ্য থাকে তাকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: রোম একদিনে তৈরি হয় নাই। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। বাচ্যপ্রধান বাক্যের ক্রিয়াকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে।
সমাপিকা ক্রিয়ার অসমাপিকা ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
১. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয়। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
২. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে না।
৪. সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে বিভক্তি বসে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে এ/ও/তে/ল বিভক্তি বসে।
৫. সমাপিকা ক্রিয়ার কোন সহায়ক ক্রিয়া থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সহায়ক ক্রিয়া থাকে।
৬. সমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খায়। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খেয়ে স্কুলে যায়।
ক্রিয়া বিশেষণ /Adverb
ক্রিয়ার দোষ, গুণ প্রকাশকারীই ক্রিয়া বিশেষণ। অথবা ক্রিয়ার বিশেষণকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা ক্রিয়াকে যে শব্দ বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা যে বিশেষণ ক্রিয়ার অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন: অবস্থা=ভাব—আস্তে আস্তে চল, কাল—আগে/পরে গেলে সুফল পাবে। ক্রিয়া বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) পদবিন্যাসগত প্রকরণ
১. একক ক্রিয়া বিশেষণ: একটিমাত্র ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে, জোরে, ধীরে, তাড়াতাড়ি, শক্ত/ দৃঢ়ভাবে, শান্ত ভাবে ইত্যাদি।
২. দ্বিত্ব ক্রিয়া বিশেষণ: দুটি ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে অস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, চুপি চুপি, চুপে চুপে, ভয়ে ভয়ে, বিন্দু বিন্দু, কেঁদে কেঁদে, বারবার, গুটিগুটি, চুপিচুপি।
৩. বিভক্তিযুক্ত বা বিভক্তিহীন: বিভক্তিযুক্ত: ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে ইত্যাদি। বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ ইত্যাদি।
খ) অর্থ ও অন্বয়গত প্রকরণ
১. ধরনজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: টিপটিপ, হনহন, শনশন, পনপন ইত্যাদি।
২. কালজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: এখনি, সপ্তাহ, আজকাল, পরশু, আগামিকাল, পরদিন, আগামিদিন, ততক্ষণে, ঠিকসময়ে, ভোর না হতেই, অনেকক্ষণ ইত্যাদি।
৩. স্থানজ্ঞাপন ক্রিয়া বিশেষণ: এখানে, সেখানে, ওখানে, সামনে, পেছনে, কোথায়, যেথায়, এধারে, ওধারে, ওপরে, নিচে।
ক্রিয়া বিশেষণের গঠন
ক্রিয়া বিশেষণ কয়েকভাবে গঠন করা যেতে পারে। যেমন :
১. বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ+ক্রিয়া।
২. বিভক্তিযুক্ত : ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে +ক্রিয়া।
৩. দ্বৈতশব্দ : বিন্দু বিন্দু, বারবার, কেঁদে কেঁদে, গুটিগুটি, চুপিচুপি +ক্রিয়া
৪. তুলনামূলক শব্দ : শব্দ+মতো, মতন, মাত্র বসে ক্রিয়া বিশেষণ প্রকাশ করে। চাওয়ামাত্র, ঠিকমতো একই শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যেমন: মন্দটি, মন্দ বাক্য ইত্যাদি।
অনুসর্গ /কর্মপ্রবচনীয় শব্দ /Preposition
যেসব শব্দ বাক্যে স্বাধীনরূপে বসে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে, শব্দ ও শব্দ বা বাক্য ও বাক্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বাক্যে বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয় তাদের অনুসর্গ বলে। অনুসর্গগুলোর কাজ ইংরেজি ভাষার Preposition-এর মতো। তবে প্রিপজিশনগুলো শব্দের আগে বসে আর অনুসর্গগুলো শব্দের পরে বসে তাই এর নাম অনুসর্গ। কারক ছাড়াও অনুসর্গের প্রয়োগ আছে। বিভক্তি আর অনুসর্গের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিভক্তি হলো অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি আর অনুসর্গ হলো অর্থপূর্ণ শব্দ। অনুসর্গগুলোর যে চেহারা তা সাধারণত আর কোন পরিবর্তন লাভ করে না। এজন্য অনুসর্গগুলো যোজকের মধ্যে ফেলা হয়। বাংলায় প্রায় প্রতিটি কারকেরই বিভক্তিসিদ্ধ ও অনুসর্গসিদ্ধরূপ লক্ষ্য করা যায়। গঠন অনুসারে এবং উৎস অনুসারে অনুসর্গ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
গঠন অনুসারে অনুসর্গ দুই প্রকার। যেমন :
১. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ: সাধারণ নাম বা প্রাতিপদিক অনুসর্গ এ-বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন : আগে, পরে, ওপরে, কাছে, কারণে, জন্যে, মধ্যে, মাঝে, মাঝারে, সনে, সঙ্গে, তরে, নামে, পানে, পক্ষে, দিকে, পাশে, সামনে, সম্মুখে, করে, হতে, থেকে, চেয়ে, দিয়ে, লেগে, বদলে, বাদে।
২. বিভক্তিহীন অনুসর্গ: অধিক, অবধি, জন্য, পর, প্রতি, বই, বশত, বিনা, বিনে, বিনি, বিহনে, দ্বারা, কর্তৃক, ছাড়া, ব্যতীত, ভিন্ন, মতো, সহ, সহিত, হেতু, দারুণ, বনাম, বরাবর, বাবদ ইত্যাদি।
উৎস অনুসারে অনুসর্গ চার প্রকার। যেমন :
ব্যাকরণের শব্দশ্রেণি অনুযায়ী বাংলা ভাষায় অনুসর্গগুলো বিশেষ্যজাত ও ক্রিয়াজাত-দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথম শ্রেণির অনুসর্গগুলো বিশেষ্য, যোজক ইত্যাদি শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। যেমন: নিকট, সঙ্গে, আগে ইত্যাদি আর ক্রিয়াজাত অনুসর্গগুলো জন্মেছে ক্রিয়াপদ থেকে। যেমন: বলে, ধরে, চেয়ে। নাম অনুসর্গগুলো আবার উৎস অনুযায়ী সংস্কৃত, তদ্ভব ও দেশি, বিদেশি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) সংস্কৃত অনুসর্গ
অপেক্ষা : এ জীবন অপেক্ষা প্রিয় আর কিছু নাই।
অভিমুখে : নদী চলিয়াছে সমুদ্র অভিমুখে।
উপরে : সবার উপরে মানুষ সত্য।
কর্তৃক : আজ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই মঞ্চের, উদ্বোধন হবে।
কারণে : পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও।
জন্য : হিমগিরি ফেলে নিচে নেমে এলে কিসের জন্য?
দিকে : নদী কি কখনো উৎসের দিকে যায়?
দ্বারা : পরিশ্রমের দ্বারা, সততার দ্বারা নিজেকে যথার্থ মানুষ হিসাবে গড়ে তোল।
নিকট : নগরের নিকটেই অরণ্য।
ন্যায় : লটারিতে পুরস্কার লাভের স্বপ্ন মরীচিকার ন্যায় মিলাইতে দেরি হইল না।
পশ্চাতে : অন্ধের মতো সুখের পশ্চাতে ছুটিয়ো না।
প্রতি : অধমের প্রতি একটু কৃপা করবেন, এই প্রার্থনা।
মধ্যে : কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই।
মাঝে : ‘আমার কাজের মাঝে মাঝে, কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
সঙ্গে : অকারণে মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করবে না।
সম্মুখে : বিপদের সম্মুখে নির্ভয় থেকো।
সহিত : রামের সহিত সীতাও বনে যাইতে চাহিলেন।
সাথে : করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পঞ্জা।
সামনে : গুরুজনের সামনে অসভ্যতা করতে নাই।
খ) দেশি (তদ্ভব) অনুসর্গ
আগে : মরিব তোমার আগে।
আশে : কে জানে কিসের আশে এসেছি হেথায়।
কাছে : বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও।
ছাড়া : এ ছাড়া আর উপায় কী বল।
তরে : কীসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশ্বাস।
পানে : মুখ পানে চেয়ে দেখি, ভয় হয় মনে।
পাশে : আয়, আমার পাশে এসে বোস।
বই : আমার একটি বই দুটি মেয়ে নয়, একে আমি এমএ পর্যন্ত পড়াব।
বিনা : চাষির পরিশ্রম বিনা কোন ফসলই ফলে না।
ভিতর : কার মনের ভিতর কী আছে কে জানে?
গ) বিদেশি অনুসর্গ
দরুন : বন্যার দরুন এক বছর ফসল ভাল হয়নি।
বদলে : কিছু মানুষ আছে, যারা কাঞ্চনের বদলে কাচ পছন্দ করে।
বনাম : আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের খেলার আকর্ষণই আলাদা।
বাবদ : ঘড়ির দাম বাবদ কত দিতে হবে আপনাকে?
বরাবর : এই পথ বরাবর মিছিল এগোবে।
ঘ) ক্রিয়াজাত অনুসর্গ
করে, করিয়া : যদি বাস না পাও, ট্যাকসি করে চলে এসো। আগে লোকে জাহাজে করিয়া বিলাত যাইত।
চেয়ে, চাইতে : আমি মৃত্যু চেয়ে বড়, এই কথা বলে, যাব আমি চলে।
থেকে : ওর কথা থেকে কিছুই বোঝা গেল না।
দিয়ে, দিয়া : পথ দিয়ে কে যায় গো চলে, ডাক দিয়ে সে যায়।
ধরে, ধরিয়া : টানা দুমাস ধরে গ্রীষ্মের বন্ধ মজা মন্দ নয়।
লাগিয়া, লাগি : প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে। সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু।
হতে, হইতে : আকাশ হতে খসল তারা। কলিকাতা হইতে দিল্লি কত দূর?
সকলপ্রকার অনুসর্গের প্রয়োগ
১. বিনা/বিনে : কর্তৃ কারকের সঙ্গে-তুমি বিনা/বিনে আমার কে আছে?
বিনি : করণ কারকের সঙ্গে-বিনি সুতায় গাঁথা মালা।
বিহনে : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
২. সহ : সহগামিতা অর্থে-তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
সহিত : সমসূত্রে অর্থে-শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
সনে : বিরুদ্ধগামিতা অর্থে-দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।
সঙ্গে : তুলনায়-মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না।
৩. অবধি : পর্যন্ত অর্থে-সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪. পরে : স্বল্প বিরতি অর্থে-এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না।
পর : দীর্ঘ বিরতি অর্থে-শরতের পর আসে বসন্ত।
৫. পানে : প্রতি, দিকে অর্থে-ঐ তো তিনি ঘর পানে ছুটেছেন।
৬. মত : ন্যায় অর্থে-বেকুবের মত কাজ করো না।
তরে : মত অর্থে-এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম।
৭. পক্ষে : সক্ষমতা অর্থে-রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
সহায় অর্থে-আসামির পক্ষে উকিল কে?
৮. মাঝে : মধ্যে অর্থে-সীমার মাঝে অসীম তুমি।
একদেশিক অর্থে-এ দেশের মাঝে এক দিন সব ছিল।
ক্ষণকাল অর্থে-নিমেষ মাঝেই সব শেষ।
মাঝারে : ব্যাপ্তি অর্থে-আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
৯. কাছে : নিকটে অর্থে-আমার কাছে আর কে আসবে?
কর্ম কারকে ‘কে’ বোঝাতে-রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।
১০. প্রতি : প্রত্যেক অর্থে-মণ প্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেবো।
দিকে বা ওপর অর্থে-নিদারুণ তিনি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।
১১. হেতু : নিমিত্ত অর্থে-কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া।
জন্যে : নিমিত্ত অর্থে-এ ধনসম্পদ তোমার জন্যে।
সহকারে : সঙ্গে অর্থে-আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
বশত : কারণে অর্থে-দুর্ভাগ্য বশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।
যোজক / Conjunction/Connective
যোজক দুই বা অধিক শব্দ অথবা বাক্যকে সংযোজক, বিয়োজক সংকোচন ঘটায়। যেমন: ও, এবং, আর, তাই, কিন্তু, অধিকন্তু, সুতরাং, কিংবা, অথবা নতুবা, নয়তো, অথচ, বরং, কারণ, কারণে, মাত্রই, শীঘ্রই, উভয়ই, ছাড়া, যদি, যদিও, যে যেন, যখন, যহেতু, যথেষ্ট, যাতে, যতক্ষণ, পূর্বে, জন্য, শর্তেও, পরিবর্তে, অন্যথায়, আলবত, নিশ্চয়ই, তে, তো, পাছে, দিয়ে, দ্বারা, কর্তৃক, হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও, মতো, মতন, ন্যায়, পারা, কি/কী, কেন/কোন, বুঝি, যত—তত, এতই—যে যেমন—তেমন, যখন—তখন, যথা—তথা, যেরূপ—সেরূপ, যেই—অমনি, না—আরও, যিনি—তিনি, যে—সে, যা—তা, যা—তাই ইত্যাদি। এসব যোজককে ‘সাধারণ যোজক, বৈকল্পিব যোজন, বিরোধমূলক যোজন, কারণবাচক যোজন, সাপেক্ষ যোজন’ ইত্যাদির মধ্যে ফেলে বাক্য তৈরি করা যায়। শব্দ বা বাক্যে যোজক ব্যবহৃত হলে এদের আগে বা পরে যতি ব্যবহৃত হয় না। যোজক কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. সাধারণ যোজক : সাধারণ যোজক দুটি শব্দ বা বাক্যকে সংযুক্ত করে। শব্দ ও শব্দকে যুক্ত করতে ‘ও’ ব্যবহার করা হয়। বাক্য ও বাক্যকে যুক্ত করতে ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়। শব্দ কিংবা বাক্য দুই ধরনেই ‘আর’ ব্যবহার করা যায়। যেমন:
শব্দ যোজক: রহিম ও করিম দুই ভাই। রহিম আর করিম পরস্পর পরস্পরের সাথী। একজীবনে সুখ ও দুখ দুই ঘুরে ঘুরে আসে। আমাদের কথা আর ওদের কথার সাথে মিল রয়েছে।
বাক্য যোজক: সাকিব স্কুলে যায় এবং মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। তুমি সেখানে যাবা এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবা। দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় আর দুটি শব্দের মিলনে সমাস হয়।
২. বৈকল্পিক যোজক : বৈকল্পিক যোজক একাধিক শব্দ বাক্য বা বাক্যের মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করে। যেমন: নীল বা কালো যেকোনো একটি হলেই লেখার কাজ চলবে। তোমাকে সারাদিন খুঁজলাম অথচ তোমাকে পেলাম না। হয় তুমি না হয় তোমার ভাই কাজটি করে দেবে।
৩. বিরোধ যোজক : বিরোধমূলক যোজক দুটি বাক্যের বক্তব্যের মধ্যে সংশোধন বা বিরোধভাব প্রকাশ করে। যেমন: তোমাকে ডাকলাম কিন্তু সারা পেলাম না। এত পানি ঢাললাম তবু গায়ের গরম গেলো না।
৪. কারণ যোজক : কারণ যোজক দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোক ঘটায় যার একটি অন্যটির কারণ প্রকাশ করে। যেমন: গতকাল সামিহা স্কুলে যেতে পারে নাই কারণ সে অসুস্থ ছিল। সামিহা অসুস্থ থাকার কারণে গতকাল স্কুলে যেতে পারেনি। যেহেতু সে অসুস্থ তাই সে স্কুলে যেতে পারে নাই। সময় নাই তাই সে সম্পূর্ণ উত্তর লিখতে পারে নাই। তুমি কথারাখো নাই অতএব তোমাকে নেয়া হবে না। তাড়াতাড়ি চলো নইলে গাড়ি ধরতে পারবা না। কর্মক্ষেত্র ডিজিটাল করো নতুবা দেশ ডিজিটাল হবে না।
৫. সাপেক্ষ যোজক/শর্ত যোজক : যেসব যোজক একে অন্যের পরিপূরক তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। সাধারণত এরা দ্বিত্বযোজক হয়। যেমন: ‘যতি-তবে, যত-তত, যথা-তথা, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যেরূপ-সেরূপ’ দুটি বাক্যকে সংযুক্ত করে। যেমন: যদি তুমি আসো তবে আমি কাজটি করব। যত গর্জে তত বর্ষে না।
৬. সম্বোধন যোজক : যেসব যোজক বাক্যে প্রথমে বসে কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে তাদের সম্বোধনসূচক যোজক বলে। যেমন: হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও ইত্যাদি।
৭. সাদৃশ্য যোজক : যেসব যোজক বাক্যে বসে বস্তুতে বস্তুতে বা প্রাণীতে প্রাণীতে তুলনা করে তাদের সাদৃশ্যসূচক যোজক বলে। অন্যভাবে বলা যায় তুলনামূলক যোজককে সাদৃশ্য যোজক বলে। যেমন: মতো, মতন, ন্যায়, পারা ইত্যাদি।
৮. প্রশ্নর সংশয় যোজক : যেসব যোজক প্রশ্ন বা সংশয় প্রকাশ করে তাদের প্রশ্ন ও সংশয় যোজক বলে। যেমন: কি/কী, কেন /কেনো, নাকি, নাকো, বুঝি ইত্যাদি।
৯. সম্মতি ও অসম্মতি যোজক : যেসব যোজক সম্মতির অসম্মতি প্রকাশ করে তাদের সম্মতি ও অসম্মতিসূচক যোজক বলে। যেমন: হ্যাঁ, আচ্ছা, হু, বটে, আজ্ঞা। না, নয়, নাই, নহে, উঁহু, মোটেও না ইত্যাদি এগুলো অসম্মতিসূচক অব্যয়।
১০. অনুকার যোজক :যেসব যোজক বাক্যে বসে ধ্বনি সৃষ্টি করে তাদের অনুকার যোজক বলে। যেমন: কড়কড়, মরমর, ঝমঝম, শনশন, ঝুমঝুম, গুড়–গুড়, গরগর, কা কা, কুহুকুহু, কটকট, টুংটাং, ঝপাঝপ, টপাটপ, ঝাঁঝাঁ, খাঁখাঁ, কচকচ, কটকট, টলমল, ঝলমল, চকচক, ছমছম, টনটন, খটখট ইত্যাদি।
১১. দ্বিত্ব যোজক : যেসব যোজক দুটি বাক্যকে যুক্ত করতে বসে তাদের দ্বিত্ব যোজক বলে। যেমন: যত— তত, এতই—যে, যেমন— তেমন, যখন— তখন, যথা—তথা, যেরূপ— সেরূপ, যেই— অমনি, না—আরও, শুধু-আরও/ও ইত্যাদি।
আবেগশব্দ/ Interjection
যেসব শব্দ বাক্যে বসে বাক্যের ভাব বৃদ্ধি করে তাদের আবেগশব্দ বলে। যেমন: মরি মরি, উঃ /উহ্ /উঁহু, আঃ, ছি ছি, হ্যাঁ, না, কী বিপদ, হায়রে লজ্জা, আলবত, নিশ্চয়ই, বেশ তো, তো, পাছে, কী মজা, হায়, হু, বেশ, না, শাবাস, বাঃ, কী জ্বালা, আরে, অ্যাঁ, আহা, হে বন্ধু, ওরে, মাগো মা, যাক গে ইত্যাদি। এসব শব্দের পরে কমা বসে না।
0 comments:
Post a Comment