♦বাংলাদেশের উপজাতি_ক্ষুদ্র_জাতিসত্তা_নৃগোষ্ঠী নিয়ে একনজরেঃ
১। বাংলাদেশে বর্তমানে আদিবাসী বা উপজাতির সংখ্যা -৫০টি
নোটঃকম বা বেশি হতে পারে আপডেটটা জেনে নিবেন
২। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী - চাকমা
৩। সংখ্যাগত বিচারে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম উপজাতি - মারমা (মগ)
৪। সংখ্যাগত বিচারে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম উপজাতি - সাঁওতাল
৫। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের। এরা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে।
৬। 'চাকমা' শব্দের অর্থ মানুষ। 'ম্রো' শব্দের অর্থও মানুষ।
৭। উপজাতিদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান 'বিরিশিরি' নেত্রকোনায় অবস্থিত।
৮। স্বাধীনতা যুদ্ধে একমাত্র বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মারমা অধিবাসী ইউ কে চিং।
৯। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন উপজাতিদের বসবাসঃ
♦♦♦দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলঃ
♦চাকমা- পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) ও কক্সবাজার। তবে রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি চাকমা বসবাস করেন।
♦মারমা- পার্বত্য চট্টগ্রাম ( খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান)।মারমারা বহুপূর্বে 'মগ' নামে পরিচিত ছিলো।
♦ত্রিপুরা - পার্বত্য চট্টগ্রাম ( খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান), চট্টগ্রাম, নোয়াখালী। খাগড়াছড়ি ত্রিপুরাদের প্রধান আবাসস্থল। তারা 'টিপরা' নামেও পরিচিত।
♦♦মুরং - বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে তাদের বসবাস করতে দেখা যায়। তাদের 'ম্রো বা মারুসা' নামেও ডাকা হয়।
♦তঞ্চঙ্গ্যা- পার্বত্য চট্টগ্রাম ( রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান), চট্টগ্রাম, কক্সবাজার
♦লুসাই - পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন)
♦পাংখোয়া- রাঙ্গামাটি, বান্দরবান
♦খুমি - বান্দরবান
♦রাখাইন - পটুয়াখালী, বরগুনা, কক্সবাজার।
পটুয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বেশি রাখাইন রয়েছে। এরা মূলত মায়ানমার থেকে এসেছে।
♦♦বিঃদ্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি জাতিসত্তা বসবাস করে। তাদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি অন্যতম। ত্রিপুরাদের (টিপরা) বাংলাদেশের সিলেট ও কুমিল্লা জেলাতেও বসবাস করতে দেখা যায়।
♦♦উত্তর-পূর্ব অঞ্চলঃ
♦গারো - ময়মনসিংহ (গারো পাহাড়), শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল।
তাদের অন্যনাম ' মান্দি'
♦খাসিয়া- সিলেট ( জৈয়ন্তিকা পাহাড়), হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ।
♦তাদেরকে 'খাসি' বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
♦মণিপুরী- মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ। তাদের প্রধান আবাসস্থল মৌলভীবাজার। তাদেরকে 'মৈ তৈ' নামেও অভিহিত করা হয়।
♦হাজং- ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, সিলেট
♦পাঙন- মৌলভীবাজার
♦♦উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলঃ
♦সাঁওতাল - দিনাজপুর (প্রধান আবাসস্থল), রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
♦রাজবংশী - রংপুর (প্রধান আবাসস্থল) ,দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া
♦ওরাওঁ - দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া
♦♦কোল - চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী। এরা 'মুন্ডা' নামেও পরিচিত।
♦♦বিঃদ্রঃ ময়মনসিংহ জেলাতেও রাজবংশী উপজাতির বসবাসের অস্তিত্ব রয়েছে।
১০। উপজাতিদের জীবনধারাঃ
বাংলাদেশের অধিকাংশ উপজাতিরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্গত। নিচে কতিপয় পিতৃতান্ত্রিক উপজাতিদের সমাজব্যবস্থা আলোকপাত করা হলো-
★চাকমা সমাজঃ পিতৃতান্ত্রিক। গ্রামকে বলে 'আদাম বা পাড়া'। মৌজাপ্রধানকে
বলা হয় 'হেডম্যান'। তাদের প্রধান পেশা হলো কৃষি। জুমচাষ করাই
তাদের লক্ষ্য। উপজাতিদের মধ্যে চাকমারা সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত।
★মারমা সমাজঃ পিতৃতান্ত্রিক। গ্রামকে বলে 'রোয়া'। মৌজাপ্রধান হলেন হেডম্যান।
মারমারা ১৯৬১ সালে 'মগ ' নাম পরিত্যাগ করে বর্তমান 'মারমা' নামটি
ধারণ করে। তাদের প্রধান কাজও কৃষি।
★সাঁওতাল- পিতৃতান্ত্রিক। সমাজের মূলভিত্তি হচ্ছে 'গ্রাম-পঞ্চায়েত'।
★ মণিপুরী - পিতৃতান্ত্রিক।
★ত্রিপুরা- পিতৃতান্ত্রিক। তারা দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলকে তারা 'দফা' বলে।
★ মুরং- পিতৃতান্ত্রিক। তারা তাদের বাড়িকে 'কিম' বলে।
★লুসাই- পিতৃতান্ত্রিক।
★ওরাওঁ- পিতৃতান্ত্রিক। তাদের গ্রামপ্রধানকে 'মাহাতো' বলে।
★রাজবংশী- পিতৃতান্ত্রিক।
★হাজং- পিতৃতান্ত্রিক।
★খুমি- পিতৃতান্ত্রিক।
এবার কতিপয় মাতৃতান্ত্রিক উপজাতিঃ
★গারো সমাজ- মাতৃতান্ত্রিক। প্রথাগত আইন অনুযায়ী, পারিবারিক সম্পত্তির
মেয়েরা। গারো জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে 'আচিকমান্দি' (পাহাড়ের মানুষ)
বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।
★খাসিয়া - মাতৃতান্ত্রিক। খাসিয়া গ্রামগুলো 'পুঞ্জি' নামে পরিচিত। পুঞ্জিপ্রধানকে বলা হয় 'সিয়েম'। বাড়িতে মেহবান এলে তারা ' চা-পান-সুপারী' দিয়ে
আপ্যায়ন করে।
১১। উপজাতিদের ভাষাঃ
♦চাকমা - চাকমা ভাষা
♦মারমা- পালি/ প্রাইমাজা
♦সাঁওতাল - সাঁওতালি
♦ত্রিপুরা - ককবরক
♦গারো- আচিক খুসিক/ মান্দি
♦মুরং- ম্রো
♦মণিপুরী - মৈ তৈ/ মণিপুরী ভাষা
♦রাখাইন- আরাকানী/ রাখাইন ভাষা
♦ওরাওঁ- কুরুখ/ শাদরি
♦খাসিয়া- মন খেমে
♦হাজং- হাজং ভাষা
♦রাজবংশী- কামরূপী রাজবংশী
♦কোল- কোল/মান্দারী/ খেড়োয়াড়ী
১২। উপজাতিদের ধর্মঃ
♥♥আদিবাসীদের অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী
♦বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী- চাকমা, মারমা, মুরং, রাখাইন
♦হিন্দু ধর্মের অনুসারী - সাঁওতাল, ত্রিপুরা
♦সনাতন ধর্মের অনুসারী - মণিপুরী
♦খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী - গারো, খাসিয়া
♦ ইসলাম ধর্মের অনুসারী - পাঙন , মৈ তৈ পাঙন, লাউয়া
♦প্রকৃতির উপাসক- ওরাওঁ
১৩। উপজাতিদের উৎসবঃ
চাকমাঃ
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বলা হয় বিজু।
ফাল্গুনী পূর্ণিমা এদের ধর্মীয় উৎসব।
মারমাঃ
মারমা বর্ষবরণ উৎসবের নাম- সাংগ্রাই।
রাখাইনঃ
রাখাইন বড় ধর্মীয় উৎসব - বুদ্ধপূর্ণিমা
বর্ষবরণ উৎসবের নাম সান্দ্রে।
মুরংঃ
মুরংদের দেবতার নাম ওরেং
মুরং উপজাতির বর্ষবরণ উৎসবের নাম ছিয়াছত।
গারোঃ
গারোদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নাম ওয়ানগালা।
বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি।
#তথ্য সহযোগিতায়ঃ মোঃ_দেলোয়ার_হোসেন
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,ডেমরা কলেজ,ঢাকা-১৩৬
মোঃ আনিছুর রহমান, সদস্য।
জাকির'স বিসিএস স্পেশাল'স।