এক অন্যরকম উত্তরপত্র

Showing posts with label যতিচিহ্ন. Show all posts
Showing posts with label যতিচিহ্ন. Show all posts

Wednesday 3 May 2017

যতিচিহ্ন / Punctuation

যতিচিহ্ন /Punctuation

ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা বা কথা যা বের হয় বাগযন্ত্রের সাহায্যে ফুসফুসের শ্বাসে। এসব কথা হতে পারে কবিতা, কাহিনি বা যে কোন রচনার সদৃশ। এরা কথ্যরূপে বা লেখ্যরূপে উপস্থিত হতে পারে। কথ্যরূপের দোষ না থাকলেও লেখ্যরূপের অনেক দোষ। ব্যাকরণে ধ্বনি, শব্দ, বানান ও বাক্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি যতিও। বাংলার যতি আর ইংরেজির Punctuation-এর ব্যবহার একই কারণ বাংলার যতি ইংরেজি থেকে হুবহু এসেছে (শুধু দাঁড়ি বাদে) যাদের ব্যবহারও একই রকম।

যতির ইতিহাস
দাঁড়ি (ইংরেজিতে ফুলস্টপ) বাদে বর্তমানে ব্যবহৃত সবগুলো যতিই ইংরেজি থেকে নেয়া। গ্রিক Punctus (বিন্দু) শব্দ থেকে ইংরেজি Punctuation এসেছে। এই বিন্দু বা Point থেকে Priod of fullstop ব্যবহৃত হয়।
যতির ব্যবহার শুরু এবং সার্থক ব্যবহারে যাঁদের অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছে—জন টমাস, উইলিয়াম কেরি (১৮৬১-১৮৩৪), জশুরা মার্শম্যান, রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
১৮০০ সালের শুরুতে তৈরি হয় বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। শুরু হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। মুদ্রণযন্ত্র তৈরির কারণ হিসেবে দেখা যায় বাংলায় ধর্মপ্রচারের জন্য বাইবেল অনুবাদ এবং পাঠ্যবই রচনা। শ্রীরামপুর মিশনের ছিলেন প্রধান ইংরেজ পাদরি উইলিয়াম কেরি। এছাড়া অন্য তিনজন ইংরেজ পাদরি ছিলেন—জন টমাস, জশুরা মার্শম্যান। তারাই প্রথম তাদের রচনায় ইংরেজি যতির (১৮০১) ব্যবহার শুরু করেন বলে ইংরেজি নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করে।
রাজা রামমোহন রায় প্রথম ইংরেজি যতি থেকে কয়েকটি যতি ব্যবহার করেন। ১৮২৩ সালে মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘প্রার্থনাপত্র’-এ শব্দযতি, ঊর্র্ধ্বযতি, বাক্যযতি, প্রশ্নযতি ও নমুনাযতি ব্যবহার করেন।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭—১৯০৫) রচনায় কয়েকটি যতির ব্যবহার (১৮৫২) লক্ষ করা যায়। অক্ষয়কুমার দত্তও (১৮২০—১৮৮৬) তাঁর গদ্যে যতি ব্যবহার (১৮৫২/৫৩) করেন। যতির সুষ্ঠু ও সার্থক ব্যবহারে (১৯৪৭) সবচে বেশি অবদান রয়েছে গদ্যের জনকখ্যাত লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১)। তিনি করলেন—বাংলা বর্ণমালার সঠিক উপস্থাপন, উচ্চারণ অনুসারে বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে ইংরেজি লিখন এবং যতির সুষ্ঠু ব্যবহার।

যতির সংজ্ঞা
রচনার সম্যক অর্থ বা ভাব পরিস্ফুটনের জন্য এবং শ্বাসগ্রহণের প্রয়োজনে যে বিরতি নেয়া হয় তাকে যতি বলে। অন্যভাবে বলা যায়, রচনা পাঠকালে শ্বাসগ্রহণের জন্য যে বিরতি/বিরাম/ছেদ নেয়া হয় সেই বিরতি বা বিরাম বা ছেদকেই যতি বলে। লেখক ব্যাকরণবিদ হায়াৎ মামুদ ও মাহবুবুল হক তাঁদের ব্যাকরণ বইতে যতির সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে, ‘বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বোঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যেসব চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেসবই যতি বা বিরাম বা ছেদ।’
বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ-এ যতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষ কথা বলার সময় মাঝে মধ্যে থামে। এই থামার মাধ্যমে কথার অর্থ স্পষ্ট হয়। অনেক সময়ে কথার সুর ওঠানামা করে। সেই ওঠানামা অর্থের পরিবর্তন ঘটায়। কথাকে লিখিতরূপ দেওয়ার সময়ে এই থামা এবং সুরের ওঠানামা নির্দেশের জন্য সাধারণত যতিচিহ্নের ব্যবহার হয়। এই গুলি বিরামচিহ্ন বা বিরতিচিহ্ন নামেও পরিচিত। যতিচিহ্নের প্রয়োগ যথাযথ না হলে বাক্য অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য হতে পারে, এমনকি প্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে।

যতির প্রয়োজনীয়তা
শ্বাসকে বিরতি দিতে এবং বাক্যকে অর্থবোধক করতে এবং সাজিয়ে তুলতে যতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন:
ক) যতি বাক্যকে অর্থবহ করে তোলে অর্থাৎ ভুল অর্থ থেকে বাক্যকে রক্ষা করে
খ) বাক্যের অর্থ সঠিক, পরিষ্কার, সহজ, সুন্দর ও স্পষ্ট করতে সাহায্য করে
গ) বক্তব্যেরস, সুর ও মেজাজ ঠিক রাখে
ঘ) শব্দ বা বাক্যকে শুদ্ধ করতে এবং নির্দিষ্ট ছক অনুসারে সাজিয়ে তুলতে সাহায্য করে
ঙ) বাক্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ বা বাক্যের মধ্যে সংগতি বজায় রাখে
চ) বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা বাক্য, খণ্ডবাক্যকে পৃথক ও সংযোগবদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং
ছ) সরল, যৌগিক ও জটিলবাক্য চিনতে সাহায্য করে এবং বক্তব্যের বিষয় অনুধাবন করতে সাহায্য করে

যতির অবস্থান
বাক্যের অর্থ ঠিক রাখার জন্য এবং শব্দ বা বাক্যকে পৃথক করতে যতি বাক্যে প্রথমে, মাঝে বা শেষে বসতে পারে। অনেকের ধারণা সময় অনুসারে ‘১ সেকেণ্ড বা তার দ্বিগুণ’ সময়ের বিরতির জন্য যতি বসে কিন্তু এটি যুক্তিসঙ্গত বিভাজন নয়।

বাংলাযতি
বাংলার প্রধান দুটি যতি
প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে যেসব যতি পাওয়া যায়
১. এক দাঁড়ি (।): এক দাঁড়ি বেজোড় বাক্যে বসে।
২. জোড় দাঁড়ি (॥: জোড় দাঁড়ি জোড় বাক্যে বসে।

১. ০।, ০।।, ০।০, ০॥০।
আর প্রাচীন আরবিতে ০ যতির সন্ধান পাওয়া যায়।
২. ত্রিবিন্দু : এটি অতএব চিহ্নের মতো।

যতির প্রকরণ (যতি কখনো শব্দ বা বাক্য থেকে দূরে বসে না)
ক) সমাপ্তিনির্দেশক যতি
বাংলা
ইংরেজি
চিহ্ন
নিয়ম ও অবস্থান
নমুনা
১. দাঁড়ি /পূর্ণযতি
ফুলস্টপ
. ।
পূর্ণবাক্যের শেষে বসে।
সে ভালো ছেলে।
২. প্রশ্নযতি/জিজ্ঞাসাযতি
কোশ্চেন মার্ক
?
প্রশ্ন করতে শেষে বসে।
তোমার নাম কী?
৩. আবেগযতি
এক্সক্লামেটরি মার্ক 
!
আবেগশব্দের শেষে বসে।
আবেগবাক্যের শেষে বসে।
বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য।
দৃশ্যটি কত চমৎকার!

খ) শব্দ, বাক্য ও খণ্ডবাক্য পৃথকিকরণ যতি
বাংলা
ইংরেজি
চিহ্ন
নিয়ম ও অবস্থান
নমুনা
৪. শব্দযতি

কমা
,
একই জাতীয় একাধিক শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পরে বসে।
মালেক, সোহাগ, হাসান ভালো বন্ধু। বন্ধু চাও, বন্ধু পাবে ভালো ব্যবহার।
৫. শব্দযোজক যতি
হাইফেন
-
সমাস জাতীয় শব্দ যুক্ত করতে মাঝে বসে।
আমাদের প্রীতি-উপহার নিও।
৬. বাক্যযতি
 /অর্ধযতি
সেমিকোলন
;
দুটি বাক্যকে জুড়ে দিতে তাদের মাঝে বসে।
বাংলাদেশের উপর দিয়ে বহু নদী বয়ে গেছে; এগুলো/নদীগুলো দেখতে মনোরম।
৭. নমুনাযতি
কোলন
:
বাক্যের মাঝে নমুনা দিতে বসে।
যেমন: ছাগল, গরুর ঘোড়া।
সিদ্ধান্ত হলো: সে সভাপতি হবে।
৮. নমুনাযোজক যতি

ড্যাশ
জটিল/যৌগিক বাক্যকে সংযুক্ত করতে বা শব্দের নমুনা হিসাবে মাঝে বা শেষে বসে।
তুমি আসো— তোমার উপকার হবে— অপকার হবে না। যদি তুমি আসো তাহলে তোমার উপকার ছাড়া অপকার হবে না। তুমি আসো এবং তোমার উপকার ছাড়া অপকার হবে না।
৯. ঊর্র্ধ্বযতি
/উদ্ধৃতি
কোটেশন মার্ক
‘ ’
“ ”
শব্দ বা বাক্যের দুই পাশে বসে।
‘ঝিঙেফুল’ ছোটদের চমৎকার ছড়ার বই।
ইমরান বলল, ‘সে প্রথম হয়েছে।’
১০. বর্ণলোপ যতি
ইলেক মার্ক
এ্যাপস্ট্রফি
যে স্থানে বর্ণ লোপ পায় সেই স্থানে বসে।
তোমার ’পরে/উপরে ঠেকাই মাথা।
১১. বিকল্পযতি
অবলিগ /

‘বিকল্প বা অথবা’ হিসেবে শব্দদ্বয়ের মাঝে বসে।
মন অর্থ আত্মা /হৃদয়।
১২. বিন্দুযতি
ডট
.

...
ক্রমিক সংখ্যার পরে বসে।
সংক্ষিপ্ত শব্দের পরে বসে।
অসমাপ্ত কথার পরে তিনটি বসে।
১. যতির ব্যবহার।
ড. শহীদুল্লাহ
হাজার বছর ধরে...

১৩. বন্ধনি
ব্রাকেট
( ) { }
[ ]
ব্যাখ্যা দিতে শব্দ বা বাক্যের দুইপাশে বসে।
তিনি চাটগাঁয় (চট্টগ্রাম) বাস করতেন।

গ) উৎপত্তি, গুরুত্ব ও আলংকারিক যতি
বাংলা
ইংরেজি
চিহ্ন
নিয়ম ও অবস্থান
নমুনা
১৪. ধাতুযতি
রুটওভার
ক্রিয়া জাতীয় শব্দের আগে বসে।
√চল+অন্ত =চলন্ত
১৫. উৎসযতি

< >
শব্দের উৎপত্তি বুঝাতে বসে।
মস্তক>মাথা, মাথা<মস্তক
১৬. সমযতি
ইজিকালটু
=
সমান বুঝাতে বসে।
২+২=৪
১৭. তারকাযতি
স্টারমার্ক
*
গুরুত্ব বুঝাতে বসে।
*বিজয় দিবস (রচনাটি গুরুত্বপূর্ণ)
১৮. অনুচ্ছেদ যতি
প্যারামার্ক
#
লিস্ট বা প্যারার প্রথমে বসে।
# একজোড়া জুতা
১৯. তিরযতি
এ্যারো
কিছু নির্দেশ করতে প্রথমে বসে।
→ দিয়ে যাও।
২০. বুলেট
বুলেট
নমুনা দিয়ে প্রথমে বসে।
যেসব কবিতা ছন্দে লেখা
• আমাদের ছোটনদী চলে বাঁকে বাঁকে।
২১. অনুপাত যতি
%

অনুপাত বুঝাতে পরে বসে।
মাথাপিছু আয় ৬০%

যতি ব্যবহারের নিয়ম
ক) সমাপ্তিনির্দেশক যতি
দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন, আবেগচিহ্ন ইত্যাদিকে সমাপ্তি নির্দেশক যতি বলে। এরা পুরো বিরতিতে বাক্যের শেষে বসে। যেমন :

১. দাঁড়ি/পূর্ণযতি (। ॥)
প্রাচীন কবিতায় এক লাইনে একদাঁড়ি আর জোড় লাইনে জোড়দাঁড়ি ব্যবহার করা হত। বর্তমানে গানের চরণে জোড়দাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ বাক্যের শেষে যে যতি ব্যবহার করা হয় তাকে দাঁড়ি বলে। বাক্যের সমাপ্তিতে দাঁড়ি বসে। বিশেষ্য দিয়ে বাক্য শুরু হলে আরেকটি সর্বনাম শুরুর আগে দাঁড়ি বসে। বিবৃতিবাচক বাক্যের শেষে বসে। যেমন: রহিম খুব ভালো ছাত্র। সে নিয়মিত লেখাপড়া করে।
দাঁড়ি বসে না : কবিতার বাক্য আর গদ্যের বাক্য একরকম নয় তাই কবিতার প্রতিটি পংক্তি বা চরণে দাঁড়ি বসে না।

২. প্রশ্নযতি (?)
প্রশ্ন করতে যে যতি ব্যবহার করা হয় তাকে প্রশ্নযতি বলে। ১৬ ক অর্থাৎ কে, কাকে, কার, কারা, কাদের, কি/কী /কী কী, কিসের, কেন /কিজন্য, কিভাবে, কেমন, কত, কোথায়, কোথা থেকে, কখন /কবে— প্রশ্ন করতে প্রশ্নযতি বসে। সন্দেহ বা সংশয়যুক্ত বাক্যেও প্রশ্নযতি বসে। তুমি কি পড়বে? তোমার নাম কী? কেনো পড়ালেখায় মন বসে না? তুমি কী যে বলো?
প্রশ্নযতি বসে না : বাক্যে প্রশ্ন শব্দটি উল্লেখ থাকলে প্রশ্নযতি বসে না। যেমন: আমি তাকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে পারে নাই। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে লজ্জা পায়।

৩. আবেগযতি (!)
আবেগ জাতীয় শব্দ বা বাক্যে যে যতি ব্যবহার করা হয় তাকে আবেগযতি বলে। বিস্ময়, হর্ষ/আনন্দ, বিবাদ, লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, দুঃখ, আনন্দ ইত্যাদি বুঝাতে শব্দের শেষে বা বাক্যের শেষে আবেগযতি বসে। আবেগ জাতীয় বাক্যে আবেগযতি বসে। যেমন: দৃশ্যটি কত সুন্দর! আবেগ জাতীয় শব্দের পরে আবেগযতি বসে। বাক্যের শেষে দাঁড়ি বসে। যেমন: আহ! তার বাবা আর নাই।
আবেগযতি বসে না : আবেগ জাতীয় শব্দটি বাক্যে উল্লেখ থাকলে বাক্যের শেষে আবেগযতি না বসে দাঁড়ি বসে। যেমন: সে আবেগের সঙ্গে কথাটি বলল। সে বিস্ময়ে লাফিয়ে উঠল। তাকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নাই। সে আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করে।

খ) শব্দ, বাক্য ও খণ্ডবাক্য পৃথকিকরণ যতি
‘শব্দযতি, শব্দযোজক যতি, বাক্যযতি/অর্ধযতি, নমুনাযতি, নমুনাযোজক যতি, উর্ধ্বযতি/উদ্ধৃতি, বর্ণলোপ যতি, বিকল্পযতি, বিন্দুযতি, বন্ধনি এরা শব্দ, বাক্যর খণ্ডবাক্য পৃথকি করে বলে এদের শব্দ, বাক্য ও খণ্ডবাক্য পৃথকিকরণ যতি বলে। যেমন:

৪. শব্দযতি (, ) /কমা
এক জাতীয় বহুশব্দ, খণ্ডবাক্যকে যুক্ত করতে যে যতি ব্যবহার করা হয় তাকে শব্দযতি বলে। স্বল্প সময় শ্বাস বা বিরতি নিতে শব্দযতি বসে। বিভিন্নভাবে শব্দযতি বসতে পারে। যেমন:
i. একই জাতীয় বহু বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়ার মাঝে শব্দযতি বসে। যেমন: করিম, রহিম, রাজু। সে, আমি, তুমি। ভালো, মন্দ। তার কাজ খাওয়া, পড়া, ঘুমানো।
ii. খণ্ডবাক্য/বাক্যাংশ যুক্ত করতে শব্দযতি বসে। যেমন: ভালো চাও, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো। আমাদের আছে শহিদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, রবীন্দ্র-জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী।
iii. সম্বোধনের পরে শব্দযতি বসে। যেমন: মঈন, তুমি একটি কবিতা লিখে দিও।
iv. বাক্যের শুরুতে কবির কবিতার নাম, হ্যাঁ, না, আচ্ছা, বেশ, সাপেক্ষ সর্বনাম (যে যা) ইত্যাদির পরে শব্দযতি বসে। যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চৌদ্দতম সন্তান। হ্যাঁ, তাকে আমি চিনি।
v. প্রত্যক্ষ উক্তি ‘বলে/বলেন/বলল’ পরে শব্দযতি বসে। যেমন: সে বলল, আমি কলেজে ভর্তি হয়েছি।
vi. তারিখ ও মাস এরপর বার থাকলে মাসের পরে শব্দযতি বসে। যেমন: ২২ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার ১৯৭০ সালে তার জন্ম হয়েছে। পাশাপাশি তারিখ ও বছর উল্লেখ থাকলে তারিখের পরে শব্দযতি বসে। যেমন: জানুয়ারি ১০, ২০১২।
vii. ঠিকানার ক্ষেত্রে সংখ্যার পরে শব্দযতি না বসে স্থানের নামের আগে বসে। আবার সংখ্যার আগে শব্দযোজক না দিলেও হয়। যেমন: ১৬ বেইলি রোড, ঢাকা ১০০০।
viii. কারো নাম এরপরে ডিগ্রি থাকলে নামের পরে শব্দযতি বসে। যেমন: ড. হুমায়ুন আজাদ, বাংলায় এমএ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ix. অংক জাতীয় সংখ্যায় কোটি, লক্ষ ও হাজার লিখতে শব্দযতি বসে। যেমন: বাংলাদেশের আয়তন ১, ৪৭, ৫৭০ কি. মি.।
শব্দযতি বসে না
i. কবিতার চরণ গদ্যের চরণের মতো না তাই প্রতিটি লাইনের শেষে শব্দযতি বসে না। হেডলাইন জাতীয় বাক্যে ‘কমা’ বসবে না। ‘যে’ উহ্য জাতীয় বাক্যে শব্দযতি হিসেবে। যেমন: সে বাসায় এসে দেখল, (যে) আমি বাসায় নাই।
ii. একই বাক্যে প্রথমে কর্তার মাঝে সেই কর্তার সর্বনাম ব্যবহৃত হলে সর্বনামের আগে কমা বসে না। যেমন: রহিম খুব জ্ঞানী, তাঁর কথা মতো কাজ করা ঠিক হবে।
iii. তারিখের বেলায় সংখ্যা পাশাপাশি বসলে শব্দযতি বসে কিন্তু তারিখের মাঝে মাসের নাম থাকলে শব্দযতি বসে না। যেমন: ১০/০১/২০১২ অথবা ১০-০১-২০১২ লেখা গেলেও লেখা যাবে না—১০, ১০, ২০১২ অথবা ১০.১০.২০১২ অথবা ১০ জানুয়ারি, ২০১২।
iv. ঠিকানার ক্ষেত্রে সংখ্যার পরে শব্দযতি বসে না। যেমন: ১৬, বেইলি রোড, ঢাকা ১০০০।
v. একাধিক বিশেষ্য, বিশেষণ বা সমাপিকা ক্রিয়া আলাদা করতে ‘ও’ বসে। অনেকগুলো নামের শেষে ‘ইত্যাদি’ থাকলে ‘কমা’ বসে আর ‘ইত্যাদি’ না থাকলে শেষটার আগে ‘ও’ বসে।
vi. অসমাপিকাক্রিয়ার পরে কমা বসে না। যেমন: সে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে স্কুলে যাবে।

৫. শব্দযোজক যতি /হাইফেন (-)
যে যতি দুই বা অধিক শব্দকে সংযুক্ত করে তাকে শব্দযোজক যতি বা হাইফেন বলে। প্রধানত সমাসবদ্ধ শব্দ ও দ্বৈতশব্দের মাঝে বসে। সাধারণত দ্বন্দ্ব সমাসে বসে। ভিন্নার্থক বা বিপরীত শব্দেও বসে। যে বা যা’র আগে বসে। নামশব্দ, পদমর্যাদা, দিক, সংখ্যার ব্যবধান, বিভক্তিকে নাম বা সংখ্যা থেকে পৃথক করতে বসে। দুই সমাস জাতীয় শব্দের মাঝে বসে। অন্যলাইনে লেখার প্রয়োজন হলে ভাঙাশব্দের মাঝে বসে। এর আগে শব্দযোজক বসে। যেমন: মা-বাবা, প্রীতি-ভালোবাসা, ত-প্রত্যয়, ণ-ধ্বনি। এটি রহিম-এর (অ-বর্ণের উচ্চারণ জাতীয়) বাড়ি।
শব্দযোজক যতি বসে না : উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি, নির্দেশক, বচন ইত্যাদির পরে শব্দযোজক বসে না। যেমন: উপ-সচিব, তাই-তো, সেলিনা-কে, লোক-টি, মানুষ-গুলো, বে-আইনি, লা-শরিক, উদ-দিন, আল-মামুন ইত্যাদি।

৬. বাক্যযতি/অর্ধযতি /সেমিকোলন (;)
বাক্যযতি শুধু অর্থবোধক বহুবাক্যেই বসে। বহুবাক্য বা একাধিক স্বাধীন বাক্যের মধ্যে অর্থের ঘনিষ্ট সংযোজন করতে যে যতি বসে তাকে বাক্যযতি বলে।
বাক্যযতি বসে না : বাক্যযতি শব্দে বা নমুনাশব্দে বসে না। বাক্যযতি কবিতায় আবশ্যক নয় কারণ কবিতার বাক্য আর গদ্যের বাক্য একরকম নয়। যেমন: আকাশ; আসমান; গগন।

৭. নমুনাযতি /কোলন (:)
নমুনাযোজক যতি ও কোলনড্যাশ-এর বিকল্প হিসেবে বর্তমানে বেশি ব্যবহার হয়। নমুনা (যথা, যেমন), বিপরীত অর্থ প্রকাশ, ব্যাখ্যা, হিন্টস, তালিকা, বিশদ মন্তব্য, সংলাপ, শিরোনাম, কার্যবিবরণী, বক্তৃতা, উদ্ধৃতি, বিবৃতি, ঘোষণা, সময়, ধারাবাহিকতা, উপস্থাপনা ইত্যাদিতে নমুনাযতি বসে। প্রতি, বিষয়, প্রসঙ্গ, তারিখ, নাম, ঠিকানা, জন্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অনুপাত, আদেশ বা প্রশ্ন জাতীয় রচনাতেও বসে। সংলাপের পরে বসে। যেমন: রহিম: কী ব্যাপার তুমি কাল স্কুলে আসনি কেনো?
অনুপাত বুঝাতেও নমুনাযতি বসে। যেমন: দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০: ৬।
নমুনাযতি বসে না : কোলনের স্থলে বিসর্গ আবার বিসর্গের স্থলে কোলন ব্যবহৃত হয় না। যেমন: পুন:প্রচার না হয়ে হবে পুঃপ্রচার।

৮. নমুনাযোজক যতি /ড্যাশ (— )
হাইফেন থেকে বড় যতিকে নমুনাযোজক যতি বলে। নমুনা, শূন্যস্থান ও অসম্পূর্ণ বাক্যে বসে। শব্দ ও তার অর্থ বুঝাতে বসে, ইতস্তত ভাব বা দ্বিধা বুঝাতে বসে, উদ্ধৃতিচিহ্নের পরিবর্তে বসে, উক্তি, প্রত্যক্তি ও কথার বিস্তার বুঝাতে বসে। সংলাপ প্রকাশের তালিকাবদ্ধ শব্দের পরে বসে। শব্দ টেনে লিখতে গেলে বসে। সংলাপের পরে বসে। যেমন: রহিম— কী ব্যাপার তুমি কাল স্কুলে আসনি কেনো?
উপসর্গকে পৃথক করে দেখাতে শব্দযোজক বসে। যেমন: আ—অকাজ, অভাব, অচেনা।
নমুনাযোজক যতি বসে না : কোলনের স্থলে বিসর্গ আবার বিসর্গের স্থলে কোলন ব্যবহৃত হয় না। বর্তমানে কোলনড্যাশ (:—)-এর ব্যবহার নাই বললেই চলে। কারণ কোলন কোলনড্যাশের স্থান দখল করেছে। অবলুপ্ত— যা লোপ পেয়েছে।

৯. ঊর্র্ধ্বযতি/উদ্ধৃতি /কোটেশন/ইনভারটেট কমা (‘ ’ “ ”)
একক উদ্ধৃতি: দ্বৈত উক্তির ভেতরটায় বসে। তবে বর্তমানে সবক্ষেত্রে জোড়ার পরিবর্তে একক উদ্ধৃতি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বই, পত্রিকা, চলচ্চিত্র, গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-উপন্যাস-এর নাম, কারো রচনার অংশ তুললে বসে।
জোড়া উদ্ধৃতি: উক্তির ক্ষেত্রে বসে। তবে বাংলায় এর ব্যবহার খুব কম।

১০. বর্ণলোপ যতি /ইলেক মার্ক /এ্যাপস্ট্রফি (’)
বর্ণের প্রথমে বা মাঝে বর্ণ বাদ দিতে যে যতি বসানো হয় তাকে বর্ণলোপ যতি বলে। ক্রিয়াবাদে অন্যান্য পদকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য। যেমন: উপর>’পর ইত্যাদি।
বর্ণলোপ যতি বসে না : পূর্বে সাধু ক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য বর্ণলোপ যতি বসানো হত কিন্তু এখন বসানো হয় না। যেমন: করিয়া>ক’রে। আবার দুই জন>দু’জন, পৌউষ>পো’ষ>পোষ লেখার ক্ষেত্রেও বসানো হয় না।

১১. বিকল্পযতি /অবলিগ (/)
দাঁড়ির চেয়ে বড়, ডানে মাথা হেলানো যতিকে বিকল্পযতি বলে। এরা শব্দের বিকল্প হিসেবে বসে। আবার ছন্দের পর্ববিভাজক চিহ্ন হিসেবেও বসে। অথবা, বিকল্প, তারিখ, ভগ্নাংশ, নাম্বার ইত্যাদির ক্ষেত্রেও বিকল্পযতি বসে।

১২. বিন্দুযতি /ডট (. ...)
শব্দ সংক্ষেপের জন্য একবিন্দু আর কথা সংক্ষেপের জন্য ত্রিবিন্দু বসে।
একবিন্দু: ইংরেজির দাঁড়িচিহ্ন। সংক্ষিপ্ত বর্ণ, ডিগ্রি, পদবি, দশমিক, তারিখ/সময়, টাকা-পয়সার পর্যায়ক্রম সংখ্যার পরে বসে। যেমন: ড. হুমায়ুন আজাদ ব্যাকরণবিষয়ক প্রবন্ধ লিখেছেন। ১. তার সঙ্গে তার দেখা হবে।
ত্রিবিন্দু: কথা গোপন রাখতে, শব্দ-বাক্য-পংক্তি-চরণ-স্তবক অথবা অনুচ্ছেদ উহ্য রাখতে ত্রিবিন্দু বসে। অনেকেই না জেনে ত্রিবিন্দুর বেশি ব্যবহার করেন।
বিন্দুযতি বসে না : পরিচিত শব্দ বা সংক্ষিপ্ত বর্ণের পরে একবিন্দু বসে না। যেমন: বি.এ/বিএ, এম.এ/এমএ, পি.এইচ.ডি/পিএইচডি, ডি.লিট/ডিলিট।

১৩. বন্ধনি /ব্রাকেট ( ) { } [ ]
ব্যাখ্যার জন্য বন্ধনি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত অংকের ক্ষেত্রে বেশি বসে। যেমন: তিনি চাটগাঁয় (চট্টগ্রাম) বাস করতেন। যদি দৈর্ঘ্য ৩০৫ সে.মি. (১০ ফুট) হয়; প্রস্থ ১৮৩ সে.মি. (৬ ফুট) হবে।