বাক্যসংকোচন /এককথায় প্রকাশ
বাক্যসংকোচন হলো বহুপদের সমষ্টিতে একটি পদ। বহুপদকে একপদে পরিণত করাকে বাক্যসংকোচন বলে। অথবা কথার অর্থপূর্ণ সংকোচিত ভাবই বাক্যসংকোচন। মানুষের মনে ভাবের সীমা নাই। আর এই ভাবকে ভাষায় প্রকাশ করে মানুষ তার ভাব-আবেগ-প্রয়োজন আর কর্তব্য পূরণ করে। বাক্যসংকোচনের মাধ্যমে ভাবগুলো সহজে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার জন্য বাক্যের বহুপদকে একপদে পরিণত করাকে বাক্য সংকোচন বলে। যেমন: এক সঙ্গে যারা যাত্রা করে —সেটিকে আমরা এককথায় বলি ‘সহযাত্রী’।
বাক্যসংকোচনের প্রয়োজনীয়তা
অল্পকথায় মনের ভাব প্রকাশ করতে, কথাকে সহজ, সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও শক্তিশালী করতে, নতুন শব্দ তৈরি করতে এবং সময় বাঁচাতে বাক্যসংকোচনের গুরুত্ব অনেক।
বাক্যসংকোচনের নিয়ম
বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে বাক্যসংকোচন করা যায়। যেমন:
১. প্রত্যয়যোগে : যা চলছে—চলন্ত (কৃৎ প্রত্যয়—চল+অন্ত), বেনারসের তৈরি—বেনারসি (তদ্ধিত প্রত্যয়—বেনারস+ই)।
২. সমাসযোগে : জায়া ও পতি—দম্পতি (দ্বন্দ্ব সমাস), ত্রি ভুজের সমাহার—ত্রিভুজ (দ্বিগু সমাস), মহান যে নবি—মহানবি (কর্মধারয় সমাস), চিরকাল ব্যাপিয়া সুখি—চিরসুখি (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস), দশ আনন যার—দশানন (বহুব্রিহী সমাস), মরণ পর্যন্ত— আমরণ (অব্যয়ীভাব সমাস), অন্য+ দেশ— দেশান্তর (নিত্যসমাস)।
৩. উপসর্গযোগে : বৃষ্টির অভাব—অনাবৃষ্টি (অনা+বৃষ্টি)।
৪. অনুকার শব্দযোগে : নূপুরের ধ্বনি—নিক্কণ।
৫. ভিন্ন শব্দযোগে : লোক গণনা — আদমশুমারী।
বাক্যসংকোচনের কিছু নমুনা
অ
অনুকরণ করবার ইচ্ছা — অনুচিকীর্ষা
অনুকরণ করা যায় এমন — অনুকরণীয়
অনুমানের যোগ্য — অনুমেয়
অনুষ্ঠানের যোগ্য — অনুষ্ঠেয়
অনুসন্ধান করবার ইচ্ছা — অনুসন্ধিৎসা
অনুকরণ করতে ইচ্ছুক — অনুচিকীর্ষু
অনুসরণ করা হয়েছে এমন — অনুসৃত
অতি উচ্চ হাসি— — অট্টহাস্য
অত্যন্ত প্রফুল্ল — উৎফুল্ল
অহনের অপর ভাগ — অপরাহ্ণ
অন্বেষণ করা হয়েছে যার — অন্বিষ্ট
অর্ধেক সম্মত — নিমরাজী
আ
আকাশ পৃথিবীর সঙ্গে যেখানে মিশেছে — দিগবলয়, চক্রবাল
আট মাসে জন্মেছে যে — আটাশে
আগামিকালের পরের দিন — পরশ্ব, পরশু
আঙুলে পরার অলংকার — অঙ্গুরীয়
আপনাকে কেন্দ্র করে যার চিন্তা — আত্মকেন্দ্রিক
ই
ইন্দ্রের অশ্ব — উচ্চৈঃশ্রবা
ইন্দ্রের সারথি — মাতলি
ইতিহাস জানেন যিনি — ঐতিহাসিক
ইতিহাস বিষয়ে অভিজ্ঞ যিনি — ইতিহাস বেত্তা
ঈ
ঈষৎ উষ্ণ — কবোষ্ণ, কদুষ্ণ
ঈষৎ মধুর — আমধুর
ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী — আস্তিক
ঈশ্বর-প্রেরিত দূত — পয়গম্বর
ঈষৎ বক্র — বঙ্কিম
ঈষৎ পাণ্ডুবর্ণ — ধূসর
উ
উপকার করার ইচ্ছা — উপচিকীর্ষা
উপকার করতে ইচ্ছুক — উপচিকীর্ষু
উপকারে বিনিময়ে উপকার — প্রত্যুপকার
উড়তে পারে যে — উড়ুক্কু
উচ্ছিষ্ট নয় যা — অনুচ্ছিষ্ট
উদগিরণ করা হয়েছে যা — উদগীর্ণ
উষ্ণতা পরিমাপের যন্ত্র — তাপমান
ঊ
ঊর্ধ্ব ও বক্রভাবে যা গমন করে — তরঙ্গ
ঊর্ধ্ব থেকে নিম্নে গমন — অবতরণ
ঋণ গ্রহণ করে যে — অধমর্ণ
ঋ
ঋণ দান করে যে — উত্তমর্ণ
এ
একই গুরুর শিষ্য — সতীর্থ
একই মায়ের পুত্র — সহোদর
একই সময়ে বর্তমান — সমসাময়িক
একান্ত গুপ্ত — নিগুঢ়
একটি পক্ষের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ — পক্ষপাত
একই অর্থবিশিষ্ট শব্দ — প্রতিশব্দ
ঐ
ঐশ্বর্যের অধিকারী — ঐশ্বর্যবান
ঔ
ঔষধ পাওয়া যায় যেখানে — ঔষধালয়
ও
ওজন পরিমাপের যন্ত্র — তুলাদণ্ড
ওষ্ঠ ও অধর — ওষ্ঠাধর
ক
ক্ষমা করবার ইচ্ছা — তিতিক্ষা
ক্ষমার যোগ্য — ক্ষমার্হ
কর্ণ পর্যন্ত — আকর্ণ
কণ্ঠ পর্যন্ত — আকণ্ঠ
কোকিলের ডাক — কুহু
খ
খাবার ইচ্ছা — বুভুক্ষা
খেয়া পার করে যে — পাটনি
খেলায় পটু যে — খেলোয়াড়
খরচের হিসাব নাই যার — বেহিসাবি
গ
গৃহে থাকে যে — গৃহস্থ
গভীর রাত্রি — নিশীথ, নিশুতি
গভীর নিদ্রায় মগ্ন — নিষুপ্ত
ঘ
ঘামের দ্বারা সিক্ত — ঘর্মাক্ত
ঘোরানো হচ্ছে যা — ঘূর্ণ্যমান
ঘাম ঝরছে যার — গলদঘর্ম
ঘর নাই যার — হা ঘরে
ঘণ্টাধ্বনিতে যে সময় নির্দেশ করে — ঘড়িয়াল
চ
চক্ষুর প্রসাধন দ্রব্য — অঞ্জন
চোখে যা দেখা যায়
বা চক্ষুর দ্বারা যা দৃষ্ট বা লব্ধ — চাক্ষুষ
চিরকাল মনে রাখার যোগ্য — চিরস্মরণীয়
চোখের পাতা — নিমিষ, নিমেষ, পলক
চক্ষুর দ্বারা গৃহীত — গোচর
চক্ষুর সম্মুখে — প্রত্যক্ষ
চিত্রের অবিকল নকল — প্রতিচিত্র
চার খণ্ডে চেরা — চৌচির
ছ
ছবি আঁকার বস্ত্র — চিত্রপট
ছবি আঁকে যে — চিত্রকর
ছল করে কান্না — মায়াকান্না
ছড়াছড়ির ফলে নষ্ট হবার অবস্থা — ছয়লাপ
ছেদনের যোগ্য — ছেদ্য, ছেদনীয়
জ
জয় করবার ইচ্ছা — জিগীষা
জানবার ইচ্ছা — জিজ্ঞাসা
জলে চরে যে — জলচর
জয় উপলক্ষে নির্মিত স্তম্ভ — জয়স্তম্ভ
ঝ
ঝন ঝন শব্দ — ঝনৎকার
ঝাড়ামোছা করা হয় যার দ্বারা — ঝাড়ন
ট
টলে পড়ে যাবার মতো অবস্থা — টলায়মান
টোল পড়েনি যাতে — নিটোল
ঠ
ঠাকুরের পূজার মণ্ডপ — ঠাকুর দালান
ঠাকুরের ভাব — ঠাকুরালি
ঠেঙিয়ে যারা দুস্যুতা করে — ঠ্যাঙাড়ে
ড
ডুব দিতে পটু — ডুবুরি
ডানা আছে যার — পক্ষী
ডানার অভ্যন্তর — পক্ষপটু
ঢ
ঢাকের প্রবল আওয়াজ — ঢক্কানিনাদ
ত
তরঙ্গ আছে যার — তরঙ্গিণী
তন্তু বয়ন করে যে — তন্তুবায়
তিন কালের ঘটনা যিনি দেখতে পান — ত্রিকালদর্শী
তলস্পর্শ করা যায় না — অতলস্পর্শী
দ
দেখবার ইচ্ছা — দিদৃক্ষা
দেখতে ইচ্ছুক — দিদৃক্ষু
দূর করা হয়েছে যাকে — দূরীকৃত
দাড়িগোফ জন্মায়নিক যার — অজাতশ্মশ্রু
দেশকে ভালবাসেন যিনি — দেশপ্রেমিক
দিনের শেষ ভাগ — অপরাহ্ণ
দিনের আলোর রাতের অন্ধকারের সন্ধিক্ষণ — গোধূলি
দিনে যে একবার আহার করে — একাহারী
দান করা উচিত — দাতব্য
দগ্ধ করা যায় না যা — অদাহ্য
ধ
ধনুর দ্বারা যে যুদ্ধ বা শিকার করে — ধানুকী
ধ্যানের যোগ্য যিনি — ধ্যেয়
ধূলায় পরিণত — ধূলিসাৎ
ধূম উদগিরণ করছে যা — ধূমায়মান
ধুনকের শব্দ — টংকার, বিষ্ফার
ধ্যানে মগ্ন যিনি — ধ্যানমগ্ন, ধ্যানস্থ
ন
নিতান্ত দগ্ধ হয় যে সময়ে — নিদাঘ
নাটকের অভিনয় হয় যেখানে — নাট্যশালা
নাই অলংকার যার — নিরলংকার
নয়রত্নের সমাহার — নবরত্ন
নতুন চাল খাবার অনুষ্ঠান — নবান্ন
নীল আভা যার — নীলাভা
প
পঙ্কে জন্মে যে — পঙ্কজ
পান করবার ইচ্ছা — পিপাসা
পরের সৌভাগ্য দেখলে যে কাতর হয় — পরশ্রীকাতর
প্রিয় বাক্য বলে যে নারী — প্রিয়ংবদা
পরস্পর আলিঙ্গন — কোলাকুলি
ফ
ফল পাকলে যে গাছ মরে যায় — রষধি
ফল প্রসব করে যা — ফলপ্রসূ
ফল ভোজন করে যে — ফলাহারী
ব
বৃদ্ধি পাচ্ছে যা — বর্ধিষ্ণু
বশ হয়েছে যে — বশীভূত, বশংগত
বিশেষভাবে জানেন যিনি — বিশেষজ্ঞ
বিজ্ঞান জনেন যিনি — বৈজ্ঞানিক, বিজ্ঞানী
বুদ্ধের উপাসনা করেন যিনি — বৌদ্ধ
বক্রভাবে গমন করে যে — ভুজগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম
বিদেশে থাকে যে — প্রাবাসী
বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান — বিদ্রোহ
ভ
ভিক্ষার অভাব — দুর্ভিক্ষ
ভূষণাদির শব্দ — শিঞ্জন, টুংকার
ভ্রমরের শব্দ — গুঞ্জন
ভেতর থেকে গোপনে ক্ষতিসাধন — অন্তর্ঘাত
ভ্রমণ করান হচ্ছে যাকে — ভ্রাম্যমাণ
ভবিষ্যতে যা ঘটবে — ভবিতব্য
ম
মরবার ইচ্ছা — মুমূর্ষা
ময়ূরের কণ্ঠের মতো রং যার — ময়ূরকণ্ঠী
মমতা নাই যার — নির্মম
মুষ্টির দ্বারা পরিমাপের যোগ্য — মুষ্টিমেয়
য
যা বৃদ্ধি পাচ্ছে — বর্ধিষ্ণু
যা ক্ষয় পাচ্ছে — ক্ষয়িষ্ণু
যা নিবারণ করা কষ্টকর — দুর্নিবার
যা চুষে খাবার যোগ্য — চুষ্য, চোষ্য
যা আসবে — আগামী
যা হবে — ভাবি
যা দমন করা যায় না — অদম্য
যা বলা হয়নি — অনুক্ত
র
রাজ্যর সিংহাসন — রাজ্যপাট
রাজপথে যে ডাকাতি করে — রাহাজান
রব শুনে আসে যে — রবাহুত
রাত্রির মধ্যভাগ — মহানিশা
রৌদ্র ও ছায়ার সংযোগ — ধূপছায়া
রুচির যোগ্য — রোচ্য
ল
লাভ করার ইচ্ছা — লিপ্সা
লক্ষ্য করার যোগ্য — লক্ষণীয় [স্ত্রীলোকের]
লাঠি খেলায় যে পটু — লেঠেল, লাঠিয়াল
লুঠ করে যে — লুটেরা
লবণ তৈরি করে যে — লাবণিক
লকলকে জিহ্বা যার — লেলিহান
শ
শুনবার ইচ্ছা — শুশ্রূষা
শত্রুকে বধ করে যে — শত্রুঘ্ন
শুভক্ষণে জন্মেছে যে — ক্ষণজন্মা
শোক নাই যার — অশোক
শিশুকাল থেকে — আশৈশব
শব্দ শুনে যে লক্ষ্যভেদে সমর্থ — শব্দভেদী
শ্রমের দ্বারা যে জীবিকা নির্বাহ করে — শ্রমজীবী
স
সহ্য করা যার স্বভাব — সহিষ্ণু
সরোবরে জন্মে যা — সরোজ, সরসিজ
স্বামী নাই যার — বিধবা
সমুদ্রের গর্জন ধ্বনি — কলল
সাগর সমেত পৃথিবী — সসাগরা-পৃথিবী
সামান্য উষ্ণ — কবোষ্ণ
সহজে যা হজম হয় — সুপাচ্য
সিংহের গর্জন — নাদ
হ
হস্তীর চিৎকার — বৃংহণ, বৃংহিত
হরিণের চামড়া — অজিন
হরণ করার ইচ্ছা — জিহীর্ষা
হৃদয়ে গমন করে যা — হৃদয়ঙ্গম
হাতের লেখা পুস্তকের খসড়া — পাণ্ডুলিপি
হাস্য-রসাত্মক নাটক — প্রহসন
হরণ করতে ইচ্ছুক — জির্হীষু
হৃদয় বিদীর্ণ করে যা — হৃদয়বিদারক
0 comments:
Post a Comment