রূপতত্ত্ব-শব্দগঠনের উপায় (সন্ধি)
বিভিন্নভাবে সন্ধিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন: সন্ধি অর্থ মিলন অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দকে যে সূত্রে একশব্দ করা হয় তাকে সন্ধি বলে। অথবা প্রথম শব্দের শেষবর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথমবর্ণ মিলে নতুন শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। অথবা উচ্চারণের সময় কাছাকাছি দুবর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণ সংযোগে বা লোপে নতুন অর্থবোধক গঠিত শব্দকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থসংগতিপূর্ণ দুটি শব্দকে একশব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। সন্ধি মিলন, বিকৃত ও লোপেও হয়ে থাকে। যেমন : মিলন (প্রথম শব্দে শেষ বর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম বর্ণ): বিদ্যা +আলয়=বিদ্যালয়। বিকৃতি (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): উৎ+চারণ=উচ্চারণ, যাচ +না =যাচঞা। লোপ (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): অতঃ+এব=অতএব, উৎ+স্থান =উত্থান /ইতি+আদি =ইত্যাদি, ইতি+মধ্যে =ইতোমধ্যে।
ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে সন্ধির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন :
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ : বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. সুকুমার সেন : পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: একাধিক ধ্বনির মিলন, লোপ বা পরিবর্তনের নাম সন্ধি।
অশোক মুখোপাধ্যায় : একান্ত সন্নিহিত বা অব্যবহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
জ্যোতিভূষণ চাকী : দ্রুত উচ্চারণের ফলে পরস্পর সন্নিহিত ধ্বনির পরিবর্তন হয়।
এতে দুটি ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন কিংবা লোপ হতে পারে। এরূপ মিলন
বা লোপ বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।
সন্ধির উপাদান
সন্ধি নিয়মের কয়েকটি উপাদান রয়েছে। যেমন : ধ্বনি ও বর্ণ, পূর্বপদ অর্থাৎ প্রথম শব্দ, পরপদ/উত্তর শব্দ অর্থাৎ দ্বিতীয় শব্দ।
সন্ধির কাজ বা সন্ধির প্রয়োজনীয়তা
সন্ধির কাজ হলো উচ্চারণ ঠিক রাখার নতুন শব্দ গঠন করা। ভাষার জন্য সন্ধির ব্যবহার খুব প্রয়োজন। যেমন: সন্ধি ভাষাকে শ্রুতিমধুর, প্রাঞ্জল ও সংক্ষিপ্ত করে, উচ্চারণ ও বানান শুদ্ধ ও সঠিক করে, দুটি বর্ণে মিলন, বিকৃত ও লোপ ঘটিয়ে একটি বর্ণের মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করে এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ও বিস্তার ঘটায়।
শব্দ উচ্চারণের সুবিধার্থে এবং ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সন্ধির উদ্ভব হয়েছে। সন্ধির জন্যই দুটি শব্দ একসঙ্গে উচ্চারণ করা যায়। সাধারণত দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় তবে বিকৃতি বা লোপেও সন্ধি হয়। আবার সকল ক্ষেত্রে সন্ধি হয় না। যেমন: অর্থ+ অভাব= অর্থাভাব, দুর+অবস্থা=দুরাবস্থা, মান+অভিমান =মানাভিমান ইত্যাদি।
নামের ক্ষেত্রেও সন্ধির সুবিধা নেয়া হয়। যেমন শরৎ+চন্দ্র=শরৎচন্দ্র /শরচ্চন্দ্র, রবি+ইন্দ্র =রবীন্দ্র। তবে সন্ধিজাত বা সমাসজাত নামবাচক শব্দ একশব্দ হয় তা আগের লেখকগণ করতেন না তবে বর্তমানে করা হয়। যেমন: রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, পরমেশ প্রসন্ন, বসন্ত কুমার।
সন্ধির প্রকার
বিভিন্নভাবে সন্ধির প্রকরণ দেখানো যায়। যেমন:
উৎপত্তিগত
|
গঠনগত
|
অনিয়মগত
|
১. সংস্কৃত সন্ধি
সংস্কৃত শব্দ+সংস্কৃত শব্দ
২. দেশি সন্ধি
দেশি শব্দ + দেশি শব্দ
সংস্কৃত ও দেশি শব্দের
মিলনে সন্ধি হয় না
|
১. স্বরসন্ধি
২. ব্যঞ্জনসন্ধি
৩. বিসর্গসন্ধি
স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি
দুটির ক্ষেত্রেই হতে পারে—
১. অন্ত সন্ধি
অসমবর্ণের মিলনে তৈরি—
নৌ+ইক=নাবিক,
ভজ+ক্ত =ভক্ত
২. বহিঃসন্ধি
সমবর্ণের মিলনে তৈরি-মহা
+আশয়=মহাশয়
|
নিপাতনে সন্ধি:
কিছু সন্ধিজাত শব্দ সন্ধির প্রকৃত নিয়ম না মেনে তৈরি হয় বলে তাদের নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন:
১. স্বরনিপাতনে সন্ধি
গো+অক্ষ = গবাক্ষ
২. ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি
পর+পর = পরস্পর
|
সন্ধি বিভিন্ন প্রকার। যেমন :
১. স্বরসন্ধি: স্বরবর্ণ ও স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন: নর+অধম= নরাধম।
২. ব্যঞ্জনসন্ধি : স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন: পরি+ছদ=পরিচ্ছদ, দিক+অন্ত=দিগন্ত, উৎ+ লাস =উল্লাস।
৩. বিসর্গসন্ধি (ঃ উঠে যায়): বিসর্গবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। সাধারণত ‘র’ ও ‘স’-এর সংক্ষিপ্ত রূপকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন: ততঃ+অধিক=ততোধিক, মনঃ+ রম=মনোরম, অন্তঃ>অন্ত, নমঃ>নমস।
৪. নিপাতনে সন্ধি : নিয়মহীনভাবে যে সন্ধি হয় তাকে নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: গো+অক্ষ=গোঅক্ষ বা গোবক্ষ বা গোবাক্ষ না হয়ে হবে গবাক্ষ, এখানে ‘ব’ না থাকা শর্তেও ‘ব’ এসেছে। দুভাবে নিপাতনে সন্ধিকে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) স্বরনিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে স্বর ও স্বর সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরনিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: অন্য+অন্য= অন্যান্য, আইন+অনুসারে=আইনানুসারে।
খ) ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জন সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: এক+দশ=একাদশ, তৎ+কর=তস্কর, পর+পর= পরস্পর, বন+পতি=বনস্পতি।
স্বরসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. আ (া )
অ +অ =আ : নরাধম (নর +অধম), নবান্ন, পলান্ন, হিতাহিত, শশাঙ্ক, হিমাচল, দাবানল,
নীলাকাশ, নীলাম্বর, ভেদাভেদ, সূত্রানুসারে
অ +আ =আ : হিমালয় (হিম+আলয়), সিংহাসন, নবাগত, লোকালয়, জলাশয়, বিবেকানন্দ, দণ্ডাদেশ
আ +অ =আ : যথার্থ (যথা+অর্থ), মহার্ঘ, ভিক্ষান্ন, পূজার্চনা
আ +আ =আ : বিদ্যালয় (বিদ্যা +আলয়), মহাশয়, শিক্ষায়তন, সদানন্দ
২. ঈ (ী)
ই +ই =ঈ : রবীন্দ্র (বরি +ইন্দ্র), মহীন্দ্র, অতীন্দ্র, অভীষ্ট, অতীষ্ট, প্রতীতি, অধীন, অতীত
ই +ঈ =ঈ : প্রতীক্ষা (প্রতি +ঈক্ষা), পরীক্ষা, সমীক্ষা, গিরীশ, অধীশ্বর, ক্ষিতীশ, মনীশ
ঈ +ই =ঈ : রথীন্দ্র (রথী+ইন্দ্র), অবনীন্দ্র, সতীন্দ্র, সুধীন্দ্র, ফণীন্দ্র, মহীন্দ্র, শচীন্দ্র
ঈ +ঈ =ঈ : শ্রীশ (শ্রী+ঈশ), মহীশ
৩. ঊ (ূ)
উ +উ =ঊ : কটূক্তি (কটু+উক্তি), সাধূক্তি, ভানূদয়, বিধূদয়, গুরূপদেশ, অনূদিত, মরূদ্যান
উ +ঊ =ঊ : লঘূর্মি (লঘু+ঊর্মি), সিন্ধূর্মি, অনূর্ধ্ব, তনূর্ধ্ব, বহূর্ধ্ব
ঊ +উ =ঊ : বধূৎসব (বধূ+উৎসব), ভূত্থিত, বধূক্তি
ঊ +ঊ =ঊ : ভূর্ধ্ব (ভূ+ঊর্ধ্ব), সরভূর্মি
৪ এ (ে)
অ +ই =এ : শুভেচ্ছা (শুভ+ইচ্ছা), নরেন্দ্র, দেবেন্দ্র, প্রেমেন্দ্র, গজেন্দ্র, জয়েন্দ্র, স্বেচ্ছা, পূর্ণেন্দু
অ +ঈ =এ : অপেক্ষা (অপ+ঈক্ষা), গণেশ, নরেশ, সুরেশ, প্রাণেশ, ভবেশ, পরমেশ্বর, সর্বেশ্বর
আ +ই =এ : যথেচ্ছা (যথা+ইচ্ছা), যথেষ্ট, মহেন্দ্র, রাজেন্দ্র
আ +ঈ =এ : মহেশ (মহা+ঈশ), রমেশ, ঢাকেশ্বরী, উমেষ
৫ ও (ো)
অ +উ =ও : সহোদয় (সহ+উদয়), দামোদর, উত্তরোত্তর, নরোত্তম, পরোপকার, বোধোদয়, প্রশ্নোত্তর,
হিতোপদেশ, সর্বোত্তম
অ +ঊ =ও : নবোঢ়া (নব+ঊঢ়া), চলর্মি, দেহোর্ধ্ব, পর্বতোর্ধ্ব, গৃহোর্ধ্ব
আ +উ =ও : যথোচিত (যথা+উচিত), মহোৎসব, যথোপযুক্ত, মহোপকার
আ +ঊ =ও : পদ্মোর্মি (পদ্ম+ঊর্মি), গঙ্গোর্মি, মহোর্মি, মহোর্ধ্ব
৬ ঐ (ৈ)
অ +এ =ঐ : জনৈক (জন+এক), হিতৈষী
অ +ঐ =ঐ : মতৈক্য (মত+ঐক্য), রাজৈশ্বর্য
আ +এ =ঐ : তথৈব (তথ+এব), সদৈব, তথৈবচ, বসুধৈব
আ +ঐ =ঐ : মহৈশ্বর্য (মহা+ঐশ্বর্য), মহৈরাবত
৭. ঔ (ৌ)
অ +ও =ঔ : বনৌষধি (বন +ওষধি), জলৌকা
অ +ঔ =ঔ : পরমৌষধি (পরম+ঔষধি), উত্তমৌষধি,
আ +ও =ঔ : মহৌষধি (মহা +ওধষি), লতৌষধি, সদৌজস্বী
আ +ঔ =ঔ : মহৌষধ (মহা +ঔষধ), মহৌদার্য, দিবৌষধ, মহৌৎসক
৮. আর
অ +ঋ =অর : দেবর্ষি (দেব +ঋষি), সপ্তর্ষি
আ +ঋ =অর : মহর্ষি (মহা +ঋষি), রাজর্ষি
ব্যতিক্রম : উত্তম+ঋণ=উত্তমর্ণ, অধম+ঋণ=অধমর্ণ, বন্যা+ঋত=বন্যার্ত, বেদনা+ঋত=বেদনার্ত
৯, য-ফলা, ই/ঈ+অ/উ/ঊ/এ
: অতি+অন্ত =অত্যন্ত, অতি+আচার=অত্যাচার, অতি+উন্নতি=অত্যুন্নতি, প্রতি+ঊষ=প্রত্যূষ, প্রতি+এক=প্রত্যেক, নদী+অম্বু=নদ্যম্বু, যদ্যপি, প্রত্যক্ষ, গত্যন্তর, ব্যর্থ, ইত্যবসর, প্রত্যাগমন, অভ্যাগত, ইত্যাকার, ইত্যাদি, প্রত্যাদেশ, অত্যাশ্চর্য
১০. ন্ব, /শ্ব/স্ব অনু/মনু+অ/ই/এ=ন্ব, শু+অ/অ=শ্ব, সু+অ/আ=স্বা
: অনু+ইত=অন্বিত, মনু+অন্তর=মন্বন্তর, পশু+আচার=পশ্বাচার, সু+অচ্ছ=স্বচ্ছ, সু+আগতম=স্বাগতম, অন্বেষণ, পশ্বধম, স্বল্প, স্বস্তি , স্বাগত
১১. অয়, আয়, আয়ি, এ+অ=অয়, এ+আ=অয়া, ঐ+অ=আয়, ঐ+ই=আয়ি
: শে+অন=শয়ন, শে+আন= শয়ান, গৈ+অক= গায়ক, নৈ+ইকা=নায়িকা, নয়ন, বয়ন, নায়ক, গায়িকা
১২. অব, আব, আই, ও+অ=অব, ও+আ=অবা, ও+ই=ই, ও+এ=এ ঔ+অ=আব, ঔ+ই=আবি, ঔ+ই=আবু
: ভো +অন=ভবন, গো +আদি=গবাদি, পো +ইত্র=পবিত্র, গো +এষণা=গবেষণা, পৌ +অক=পাবক, নৌ +ইক=নাবিক, ভৌ +উক=ভাবুক, পবন
১৩. অ/আ/আই, ঋ+অ=অ, ঋ+আ=আ, ঋ+ই=আই
: পিতৃ+অনুমতি=পিত্রানুমতি, পিতৃ+আলয়=পিত্রালয়, ভ্রাতৃ+ইচ্ছা=ভ্রাত্রিচ্ছা, পিত্রাদেশ
ব্যঞ্জনসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. গ, ক +অ=গ, ক +আ=গা, ক+উ=গু, ক+ঈ=গী, ক+ঐ=গৈ
: দিক+অন্ত =দিগন্ত, বাক+আড়ম্বর=বাগাড়ম্বর, প্রাক+উক্ত=প্রাগুক্ত, বাক+ঈশ=বাগীশ, প্রাক+ ঐতিহাসিক = প্রাগৈতিহাসিক, বাগর্থ, পৃথগন্ন, বাগীশ্বরী
২. চ্চ. ৎ+চ=চ্চ, দ+চ=চ্চ
: উৎ+চারণ=উচ্চারণ, বিপদ+চয়=বিপচ্চয়, শরচ্চন্দ্র, সচ্চিন্তা, চলচ্চিত্র
৩. চ্ছ, অ+ছ=চ্ছ, আ+ছ=আচ্ছ, ই+ছ=ইচ্ছ, উ+ছ=উচ্ছ, ৎ+ছ=চ্ছ, দ+ছ=চ্ছ, ৎ+শ=চ্ছ, ৎ+স=চ্ছ, দ+শ=চ্ছ
: স্ব+ছন্দ=স্বচ্ছন্দ, আ+ছন্ন=আচ্ছন্ন, পরি+ছেদ=পরিচ্ছেদ, অনু+ছেদ=অনুচ্ছেদ, তৎ+ছবি=তচ্ছবি, বিপদ+ ছায়া=বিপচ্ছায়া, উৎ+শৃঙ্খলা=উচ্ছৃঙ্খলা, কুৎ+সিত=কুচ্ছিত, তদ+শক্তি=তচ্ছক্তি, প্রচ্ছদ, একচ্ছদ, মুখচ্ছবি, বৃক্ষচ্ছায়া, অঙ্গচ্ছেদ, অবচ্ছেদ, কথাচ্ছলে, খেলচ্ছলে, পরীক্ষাচ্ছলে, ব্যবচ্ছেদ, আলোকচ্ছটা, আচ্ছাদন প্রতিচ্ছবি, বিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন তরুচ্ছায়া, উচ্ছেদ, সচ্ছাত্র, তচ্ছায়া, উচ্ছিন্ন, তচ্ছিদ্র, উচ্ছ্বাস, চলচ্ছক্তি, উচ্ছন্ন, উচ্ছব, বচ্ছর
৪. জ /জ্জ /জ্ঝ চ+অ=জ, ৎ+জ=জ্জ, চ+জ=জ্জ, ত/দ+জ=জ্জ, ৎ+ঝ=জ্ঝ, দ+জ=জ্জ, দ+জ=জ্ঝ
: অচ+অন্ত =অজন্তা, যাবৎ+জীবন=যাবজ্জীবন, পাঁচ+জন=পাঁজ্জন, নাত+জামাই= নাজ্জামাই, কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা, বিপদ+জনক=বিপজ্জনক, এতদ+ঝঙ্কার=এতজ্ঝঙ্কার, ণিজন্ত, তজ্জন্য, উজ্জ্বল, জগজ্জীবন, তজ্জাতীয়, বজ্জাত, ঘজ্জামাই
৫. ড়, ট+অ=ড়, ট+আ =ড়া : ষট+ঋতু=ষড়ঋতু , ষট+আনন=ষড়ানন
৫. দ, ৎ+অ=দ, ৎ+ই=দি, ৎ+ঈ=দী, ৎ+উ=দু, ৎ+ঔ=দৌ
: কৃৎ+অন্ত =কৃদন্ত, সৎ+ইচ্ছা=সদিচ্ছা, জগৎ+ঈশ্বর=জগদীশ্বর, সৎ+উদ্দেশ্য=সদুদ্দেশ্য, মহৎ+ঔষধ=মহদৌষধ, তদবধি, সদাশয়, সদানন্দ, মৃদঙ্গ, বৃহদারণ্যক, জগদিন্দ্র, জগদীশ, সদুপদেশ
৬. ব, প+অ=ব : সুপ+অন্ত =সুবন্ত
৭. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ৎ+ড=ড্ড, ৎ+ঢ=ড্ঢ, ৎ+হ=দ্ধ, ৎ+ল=ল্ল, ৎ+ট=ট্ট, ৎ+ঠ=ট্ঠ
: উৎ+ডিন=উড্ডিন, বৃহৎ+ঢক্কা=বৃহড্ঢক্কা, উৎ+হার=উদ্ধার (হত/হতি), উৎ+লেখ=উল্লেখ, বৃহৎ+টীকা =বৃহট্টীকা, বৃহৎ+ঠাকুর=বৃহট্ঠাকুর , উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি, তদ্ধিত, উল্লম্ফ, উল্লঙ্ঘন, বিদ্যুল্লতা, উল্লাস, বৃহট্টক্কা
৮. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—চ+শ=শশ, র+বর্ণ=দ্বিত্ব
: পাঁচ+শ=পাঁশ্শ, চার+দিন=চাদ্দিন, সাশ্শ, তদ্দিন, হত্তাল
৯. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—দ+ল=ল্ল, দ+ট=ট্ট, দ+ক/স =ৎ, ধ+প=ৎ
: উদ+লিখিত=উল্লিখিত, তদ+টীকা=তট্টীকা, তদ+সম=সংস্কৃত, ক্ষুধ+পিপাসা=ক্ষুৎপিপাসা, হৃৎকম্প, তৎকাল, বিপৎসঙ্কুল, হৃৎকমল
১০. ং, ম+ক=ঙ্ক/ংগ, ম+ক্ষ=ংক্ষ, ম+খ্যা=ংখ, ম+গ=ংগ, ম+ঘ=ংঘ, ম+শ=ংশ, ম+স=ংস, ম+য=ং, ম+হ=ংহ, ম+র=ংর, ম+ল=ংল, ম+ব=ংব
: সম+কর=সঙ্কর, সম+ক্ষোভ=সংক্ষোভ, সম+খ্যা==সংখ্যা, সম+গীত=সংগীত, সম+ঘ=সংঘ, সম+শয়=সংশয়, সম+ সার=সংসার, সম+যোজন=সংযোজন, সম+হার=সংহার, সম+রক্ষণ=সংরক্ষণ, সম+লাপ=সংলাপ, সম+ বর্ধনা= সংবর্ধনা, সংকল্প, সংকলন, সংকীর্ণ, শংকা, সংক্রম, অহংকার, সঙ্গম, বিহঙ্গম, সংগত, সংগঠন , সংঘাত, সংসপ্তক, সংযোগ, স্বয়ংবরা, সংবাদ, কিংবা, বারংবার, সংবরণ
১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ম+চ=ঞ্চ, ম+জ=ঞ্জ, ম+ত=ন্ত, ম+দ=ন্দ, ম+ন=ন্ন, ম+প=ম্প, ম+ভ=ম্ভ, ম+ম=ম্ম
: সম+চয়=সঞ্চয়, সম+জীবন=সঞ্জীবন, সম+তাকা=সন্তাকা, সম+দর্শন=সন্দর্শন, সম+ন্যাস=সন্ন্যাস, সম+ পূর্ণ=সম্পূর্ণ, সম+ভার=সম্ভার, সম+মান=সম্মান, কিন্নর
১২. প্রত্যয়—না, নী, ত/ক্ত, ঞ, থ, আমি, আলি, এক, উক, ইয়াল (য়াল), ইয়া, এ/য়ে/য় /য়া /আ, আ/ই-কার লোপ
: যাচ+না=যাঞ্চা, রাজ+নী=রাজ্ঞী, নষ+ত= নষ্ট, দৃশ+ত=দৃষ্ট, যজ+ঞ=যজ্ঞ, ষষ+থ=ষষ্ঠ, বোকা+ আমি = বোকামি, রুপ+আলি=রুপালি, বার+এক=বারেক, নিন্দা+উক=নিন্দুক, গাড়ি+আল=গাড়িয়াল, নাও+ ইয়া= নাইয়া, মা+এ=মায়ে, কাঁচা+কলা=কাঁচকলা, বৃষ্টি, হৃষ্ট, কৃষ্টি, বুদ্ধ, মুগ্ধ, পাগলামি, ছেলেমি, মেয়েলি, গোঁড়ামি, ঢিলেমি, শাঁখারি, মিতালি, সোনালি , শতেক, খানেক, কতেক, অর্ধেক, তিলেক, তিনেক, ধনিক, বণিক, কুড়িক, গুটিক, হিংসুক, মিথ্যুক, লাঠিয়াল, ঘড়িয়াল (ই লোপ পায়), গাঁইয়া (ও লোপ পায়)
ভায়ে, ঝিয়ে, ছায়ায়, আলয়, বাবুআনা, ঘোড়দৌড়, নাতবউ
বিসর্গসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. শ, ষ, স, ঃ +চ=শ্চ : নিঃ +চয় =নিশ্চয়, দুঃ +চিন্তা =দুশ্চিন্তা, নিশ্চিহ্ন, নিশ্চিন্ত, দুশ্চিন্তা, দুশ্চরিত্র
ঃ +ট/ঠ=ষ : নিঃ +ঠুর =নিষ্ঠুর, ধনুষ্টংকার, নিষ্ঠা, নিষ্ঠুর, নিষ্ফল, নিষ্কাম, আবিষ্কৃত, চতুষ্কোণ, ভ্রাতুষ্পুত্র, দুষ্প্রাপ্য, চতুষ্পদ, নমষ্কার, বহিষ্কার, পরিষ্কার, পুরষ্কার, তিরষ্কার, দুষ্কার্য
ঃ +ত/থ=স : নিঃ +তার =নিস্তার, নিস্তেজ, অধস্তন, প্রস্থান, দুস্তর, মনস্কাম, ভাস্কর, তেজস্কর
২. চ্ছ, ঃ +ছ=চ্ছ : নিঃ+ছিদ্র=নিচ্ছিদ্র
৩. ও, ঃ +ও=ও : মনঃ +যোগ=মনোযোগ
ব্যতিক্রম—মনোহোর, অধোগতি, সদ্যোজাত, ততোধিক, বয়োধিক, বয়োবৃদ্ধ, পুরোভাগ, মনোহর, তপোবন, মনোজগৎ, অধোগতি, মনোরম, মনোরথ, অকুতোভয়, নভোযান, যশোলাভ, মনোরঞ্জন, সরোবর, মনোনয়ন
— মনঃকষ্ট, অধঃপতন, অন্তঃকরণ, অতঃপর, বহিঃপ্রকাশ
৪. র—ঃ +অ=র : দুঃ +গতি =দুর্গতি, আশীর্বাদ, আবির্ভাব
৫. ঃ +জ/য/র/ল/ব/হ= র /রেফ
: দুরাচার, নিরবধি, দুরবস্থা, নিরাপদ, নির্জীব, দুর্যোগ, দুর্বোধ্য, আশীর্বাদ, আবির্ভাব, নির্ভয়, প্রাদুর্ভাব, বহির্গমন, অহর্নিশ, পুনর্বার, পুনর্মিলন, অন্তর্গত, প্রাতভ্রমণ, অন্তরাত্মা
৬. ঃ +র =র : নিঃ+রস =নিরস/নীরস, নিরব/নীরব, নিরোগ/নীরোগ
0 comments:
Post a Comment