এক অন্যরকম উত্তরপত্র

Friday, 7 April 2017

সমাস - রূপতত্ত্ব - শব্দগঠনের উপায়

রূপতত্ত্ব - শব্দগঠনের উপায় (সমাস)

শব্দগঠনের উপায় (সমাস)

সমাস দিয়ে শব্দ গঠন করা যায়। সমাস অর্থ সংক্ষেপ। অর্থাৎ শব্দ সংক্ষেপ। অনেকগুলো শব্দ একত্র করে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ করা হয়। তবে একত্র করতে বিভক্তি লাগে। যেমন : শব্দ+ বিভক্তি+শব্দ = সমাসজাত শব্দ। যখন ‘হিম+আলয়= হিমালয়’ লেখা হয় তখন সন্ধি হয় আর যখন ‘হিমের আলয়=হিমালয়’ লেখা হয় তখন সমাস হয়। সমাসজাত শব্দ বাক্যে ব্যবহারের পরও তাদের অর্থের পার্থক্য থাকতে পারে। যেমন: বাজার থেকে দুধসাগু (দুধ ও সাগু) কিনে এনে দুধসাগুকে (দুধ মিশ্রিত সাগু) ভালো করে রান্না করে খেও।
শব্দকে আশ্রয় করে অর্থসংগতিপূর্ণ একাধিক শব্দকে একশব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বহুশব্দকে একশব্দ করার প্রক্রিয়াকেও সমাস বলে। অথবা পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ একাধিক শব্দকে একশব্দে পরিণত করার জন্য যে নিয়মটি বিশেষ ভূমিকা রাখে সেই নিয়মকেই সমাস বলে। অথবা সমাস অর্থ মিলন অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বা ততোধিক শব্দের মিলনকে সমাস বলে। অথবা শব্দকে আশ্রয় করে অর্থপূর্ণ একাধিক শব্দ যে সূত্রে একশব্দ করা হয় তাকে সমাস বলে।

ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে সমাসের সংজ্ঞা দিয়েছেন
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: পরস্পর অর্থসঙ্গতি বিশিষ্ট দুই বা বহু পদকে লইয়া একটি পদ করার নাম সমাস।
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী: অর্থ-সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও গোপাল হালদার: পরস্পর-সম্বন্ধবিশিষ্ট একার্থবাচক একাধিক পদের একপদী ভাবকে বলে সমাস।
জ্যোতিভূষণ চাকী: পরস্পর সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একসঙ্গে মিলে সমাস হয়।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: পরস্পর অন্বয়যুক্ত দুই বা ততোধিক পদের (শব্দের নহে, কেননা, শব্দ অন্বিত হইলেই পদে পরিণত হইয়া যায়) মধ্যবর্তী অন্বয়াংশ (তাহা বিভক্তিও হইতে পারে, অন্য পদও হইতে পারে) লোপ করিয়া পদগুলো এক শব্দে (পদে নহে, কেননা, সমাসবদ্ধ পদের শেষে শব্দবিভক্তি যুক্ত হয়) পরিণত করার প্রক্রিয়ার নাম সমাস।

সমাসের বৈশিষ্ট্য
১. পাশাপাশি দুই বা তার অধিক শব্দ থাকতে হবে
২. এসব শব্দের মধ্যে অর্থসংগতি থাকতে হবে
৩. এসব শব্দের মধ্যে বৃহৎ শব্দ তৈরির যোগ্যতা থাকতে হবে
৪. নতুন শব্দ গঠন করার ক্ষমতা থাকতে হবে
৫. একাধিক শব্দকে সংকোচিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে
৬. শব্দগুলোর বিভক্তি লোপ পেতে হবে

সমাসের উপাদান
১. সমাসজাত বা সমাসবদ্ধ বা সমস্ত শব্দ : শব্দে শব্দে তৈরিকৃত শব্দই সমাসজাত শব্দ।
২. সমস্যমান শব্দ : সমাসজাত শব্দ বা ব্যাসবাক্যের প্রতিটি পদকে সমস্যমানপদ বলে।
৩. ব্যাসবাক্য বা সমাসবদ্ধ বা বিগ্রহবাক্য : সমস্যমানপদকে ব্যাসবাক্য বলে।
৪. পূর্বপদ : ব্যাসবাক্যে প্রথম শব্দকে পূর্বপদ বলে।
৫. পরপদ বা উত্তরপদ : ব্যাসবাক্যে শেষ পদকে পরপদ বা উত্তরপদ বলে।

সমাসের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ব্যাকরণে সমাসের প্রয়োজন অনেক। সমাসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো যায়। যেমন:
১. সমাসের মাধ্যমে অনেক নতুন শব্দ গঠন করা যায়
২. অল্পকথায় ব্যাপকভাব প্রকাশ করা যায়
৩. সহজভাবে শব্দ উচ্চারণ করা যায়
৪. বাক্যকে গতিশীল করা যায়।
৫. ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা যায়
৬. বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সংক্ষিপ্ত, সহজ-সরল, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা যায়

সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য
১. বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। আর শব্দের সঙ্গে শব্দের মিলনকে সমাস বলে।
২. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে অবস্থিত। আর সমাস ব্যাকরণের রূপতত্ত্বে অবস্থিত।
৩. সন্ধি ৩ প্রকার। যেমন: স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। আর সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস, দ্বিগুসমাস, কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, অব্যয়ীভাব সমাস ও বহুব্রীহি সমাস।
৪. সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না। আর সমাসে অলুক বাদে অন্য সমাসের বিভক্তি লোপ পায়।
৫. সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন ঘটে। সন্ধিতে শব্দের মিলন বর্ণ ও উচ্চারণভিত্তিক। দুটি বর্ণের মিলন ঘটে। আর সমাসে শব্দে শব্দে বা পদে পদে মিলন ঘটে। সমাসে শব্দের মিলন অর্থভিত্তিক। দুই বা দুয়ের অধিক শব্দের মিলন ঘটে।
৬. সন্ধি অল্প সংখ্যক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।আর সমাস অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।
৭. সন্ধির ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে না। আর সমাসের ফলে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
৮. সন্ধি শব্দকে গতিশীল করে। আর সমাস বাক্যকে গতিশীল করে।
৯. সন্ধির নমুনা হলো বিদ্যা+আলয়—বিদ্যালয়, প্রতি+এক—প্রত্যেক, হিম+আলয়—হিমালয়। আর সমাসের নমুনা হলো: বিদ্যার জন্য আলয়—বিদ্যালয়, একের পরে এক—প্রত্যেক, হিমের আলয়—হিমালয়।
১০. সন্ধি উচ্চারণকে পরিষ্কার করে। আর সমাস বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সংক্ষিপ্ত করে।

উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য
১. উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় না থাকলে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। আর উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
২. উপমানে উপমানবাচক পদ থাকে, সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে কিন্তু উপমেয়বাচক পদ থাকে না। আর উপমিতে উপমেয়বাচক পদ ও উপমানবাচক পদ থাকে কিন্তু সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে না। আর রূপক কর্মধারয় সমাসে তুলনাবাচক শব্দ ‘রূপ’ বসে।
৩. উপমান সমাসের দুটি শব্দের একটি শব্দ বিশেষ্য আর অপরটি বিশেষণ। আর উপমিতের দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ। আর রূপকের দুটি শব্দই বিশেষ্য শব্দ।
৪. উপমানের সাধারণ ধর্মবাচক শব্দের প্রাধান্য থাকে। যেমন: তুষারের ন্যায় ধবল—তুষারধবল। তুষার—উপমান ও বিশেষ্য, ধবল—উপমিত ও বিশেষণ। আর উপমিতের উপমেয় বাচক শব্দের প্রাধান্য থাকে। যেমন: পুরুষসিংহের ন্যায়—পুরুষসিংহ। পুরুষ—উপমেয় ও বিশেষ্য, সিংহ—উপমান ও বিশেষ্য।আর রূপকের উপমেয় শব্দের পূর্বে বসে আর উপমান পরে বসে।

৫. উপমান সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের মাঝে বসে। আর উপমিতে সমস্যমান পদে ন্যায় বসে। যদি তুলনামূলক শব্দ অর্থাৎ ‘মতো/ন্যায়’ থাকে তাহলে শব্দের শেষে বসে। রূপকে সমস্যমান পদে ‘রূপ’ বসে। ‘রূপ’ শব্দটি দুটি শব্দের মাঝে বসে।
৬. নমুনায় দেখা যায়, উপমান : তুষারশ্রুভ্র—তুষারের ন্যায়/মতো শুভ্র। উপমিত : মুখচন্দ্র—মুখ চন্দ্রের ন্যায়/মতো। রূপক : মনমাঝি—মনরূপ মাঝি।

অলুক দ্বন্দ্ব সমাস, অলুক তৎপুরুষ সমাস ও অলুক বহুব্রীহি সমাসের মধ্যে পার্থক্য
অলুক অর্থ লোপ হয় না এমন। যে সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ হয় না তাকে অলুক সমাস বলে। তিনটি সমাসেই অলুকসমাস হয়। যেমন:
১. যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাসবলে। আর যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বশব্দের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। আর যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বশব্দের বা পরশব্দের কোন পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে।
২. নমুনায় দেখা যায়, অলুক দ্বন্দ্ব সমাস : দুধেভাতে—দুধে ও ভাতে। হাতেকলমে—হাতে ও কলমে। অলুক তৎপুরুষ সমাস : ঘিয়েভাজা—ঘিয়ে ভাজা। গায়েপড়া—গায়ে পড়া। অলুক বহুব্রীহি : কানেখাটো —কানে খাটো যে। মাথায়পাগড়ি—মাথায় পাগড়ি যার।

সমাসের প্রকরণ
পাণিনি থেকে সুনীতিকুমার পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক ব্যাকরণবিদ সমাসের সংজ্ঞা, গঠন বা প্রকৃতি অনুসারে সমাসকে ৬ প্রকার দেখিয়েছেন। তবে সমাসের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাঁরা এক সমাসের মধ্যে আরেক সমাস লিপিবদ্ধ করেছেন। যেমন:
প্রধানত
মূলসমাসের অন্তর্ভুক্ত সমাস
অর্থপ্রধান সমাস
১. দ্বন্দ্ব সমাস  
২. দ্বিগু সমাস  
৩. কর্মধারয় সমাস  
৪. তৎপুরুষ সমাস  
৫. অব্যয়ীভাব সমাস 
৬. বহুব্রীহি সমাস
১. নিত্যসমাস    
২. প্রাদিসমাস     
৩. একদেশি সমাস   
৪. নং/নঞ সমাস    
৫. অলুক সমাস
৬. নিপাতনে সমাস 
৭. সংখ্যাবাচক সমাস
৮. বহুপদী সমাস   
৯. একশেষ সমাস 
১০. উপপদ সমাস
১. উভয়পদের অর্থপ্রধান সমাস-দ্বন্দ্ব সমাস
২. তৃতীয়া পদের অর্থপ্রধান সমাস-দ্বন্দ্ব সমাস
৩. পূর্বপদের অর্থপ্রধান সমাস-অব্যয়ীভাব
৪. উত্তর ও পরপদের অর্থপ্রধান সমাস
   -তৎপুরুষ সমাস, কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু


প্রতিটি সমাসের সংজ্ঞা, গঠন ও নমুনা দেয়া হলো :
দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব সমাস অর্থ ঝগড়া-বিবাদ কিন্তু সমাসে দ্বন্দ্ব সমাস অর্থ জোড়া/দ্বিত্ব। দ্বন্দ্ব সমাসকরতে দুটি বিশেষ্যর মাঝে ‘ও/আর’ বসে। ‘এবং’ বসে না কারণ ‘এবং’ শব্দ ও শব্দ নয়-বাক্য ও বাক্য জোড়া লাগাতে প্রয়োজন হয়। যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থ প্রায় সমান বা অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাসবলে। অথবা ‘ও, আর’ ইত্যাদি যোজকযুক্ত ব্যাসবাক্যকে দ্বন্দ্ব সমাসবলে। একই জাতীয় শব্দ ‘ও, আর’ দিয়ে যুক্ত করা হয়।
দ্বন্দ্ব সমাসের নিয়ম
১. একই অর্থবোধক দুটি শব্দকে একটি শব্দ করা হয় তবে মাঝে হাইফেন লাগে। যেমন: মা ও বাবা —মা-বাবা।
২. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে বিশেষ্য। বিশেষ্য+বিশেষ্য। যেমন: ছেলে ও মেয়ে—ছেলে-মেয়ে/ ছেলেমেয়ে।
৩. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে সর্বনাম। সর্বনাম+সর্বনাম। যেমন: তুমি ও আমি—তুমি-আমি।
৪. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে বিশেষণ। বিশেষণ+বিশেষণ। যেমন: ভালো ও মন্দ—ভালো-মন্দ।
৫. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই হবে ক্রিয়া। ক্রিয়া+ক্রিয়া। যেমন: লেখা ও পড়া—লেখা-পড়া।
৬. পূর্বপদ ও পরপদ দুই শব্দই ক্রিয়াবিশেষণ হবে। ক্রিয়াবিশেষণ+ক্রিয়াবিশেষণ। যেমন: আগে ও পিছে, ধীরে ও সুস্থে।

দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকরণ
১. মিলনার্থক (অভিন্ন সম্পর্ক): মা-বাবা—মা ও বাবা, মাবাপ—মা ও বাপ, দুধভাত—দুধ ও ভাত, সোনারুপা—সোনা ও রুপা, ভাইবোন—ভাই ও বোন, নানা-নানি—নানা ও নানি, দাদা-দাদি—দাদা ও দাদি, খালা-খালু—খালা ও খালু, চোর ডাকাত—চোর ও ডাকাত, গরু ছাগল—গরু ও ছাগল।
২. সমার্থক (একই অর্থবোধক দুটি শব্দ): ঘরবাড়ি—ঘর ও বাড়ি, চিঠিপত্র—চিঠি ও পত্র, হাটবাজার—হাট ও বাজার, ধনদৌলত—ধন ও দৌলত, কাজকর্ম—কাজ ও কর্ম, পথঘাট—পথ ও ঘাট।
৩. সহচর (পরস্পর পরস্পরের সহচর): দয়ামায়া—দয়া ও মায়া, ছলচাতুরি—ছল ও চাতুরি, জামাকাপড়—জামা ও কাপড়, কালপরশু—কাল ও পরশু।
৪. অনুচর (পরস্পর পরস্পরের অনুচর/দ্বিতীয়া পদ অর্থহীন): দোকানপাট—দোকান ও পাট, কাপড়চোপড়—কাপড় ও চোপড়, হাতটাত—হাত ও টাত, ভুলটুল—ভুল ও টুল।
৫. বিরোধার্থক (বৈরিভাব অর্থবোধক দুটি শব্দ): অহীনকুল—অহি ও নকুল, স্বর্গনরক—স্বর্গ ও নরক।
৬. বিপরীতার্থক (বিপরীত অর্থবোধক দুটি শব্দ/ বিশেষণ): দিনরাত—দিন ও রাত, ছেলেমেয়ে—ছেলে ও মেয়ে, জমাখরচ—জমা ও খরচ, ভালোমন্দ—ভালো ও মন্দ, টকমিষ্টি—টক ও মিষ্টি।
৭. বহুশব্দ: এখানে ‘এবং’ বসে না। সব ব্যাকরণ বইতে ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দকে জোড়া লাগাতে ‘ও’ বসে ‘এবং’ বসে না। ‘এবং’ বসে বাক্যকে জোড়া লাগাতে। যেমন : ইট, বালি, সিমেন্ট, শুরকি—ইট, বালি, সিমেন্ট ও শুরকি। সাহেব, বিবি, গোলাম—সাহেব, বিবি ও গোলাম।
৮. অলুক (এ বিভক্তিলোপহীন শব্দ): দুধেভাতে—দুধে ও ভাতে, জলেস্থলে—জলে ও স্থলে, কোলেপিঠে—কোলে ও পিঠে, তেলেবেগুনে—তেলে ও বেগুনে, মায়েঝিয়ে—মায়ে ও ঝিয়ে, পথেঘাটে—পথে ও ঘাটে।
৯. সংখ্যাবাচক: বিশপঁচিশ—বিশ ও পঁচিশ, সাতসতের—সাত ও সতের, দশবারো—দশ ও বারো, সাতপাঁচ—সাত ও পাঁচ, সত্তরআশি—সত্তর ও আশি।
১০. একশেষ (দুই/অধিক সর্বনাম মিলে একসর্বনাম হয়): তোমরা—তুমি ও সে, আমরা—আমি, তুমি ও সে।
১১. অঙ্গবাচক: হাতপা—হাত ও পা, নাকমুখ—নাক ও মুখ, মাথামুণ্ডু—মাথা ও মুণ্ডু।
১২. দুটি সর্বনাম: যাতা—যা ও তা, তুমি-আমি—তুমি ও আমি, যেসে—যে ও সে, এখানে-সেখান—এখানে ও সেখানে, যথাতথা—যথা ও তথা।
১৩. দুটি বিশেষণ: ভালোমন্দ—ভালো ও মন্দ, কমবেশি—কম ও বেশি, আসলনকল—আসল ও নকল, বাকিবকেয়া—বাকি ও বকেয়া।
১৪. দুটি ক্রিয়া: দেখাশোনা—দেখা ও শোনা, যাওয়াআসা—যাওয়া ও আসা, চলাফেরা—চলা ও ফেরা, আসাযাওয়া—আসা ও যাওয়া।
১৫. দুটি ক্রিয়াবিশেষণ: ধীরেসুস্থে—ধীরে ও সুস্থে, আগেপিছে—আগে ও পিছে, আকারে-ইঙ্গিতে—আকারে ও ইঙ্গিতে, আস্তে আস্তে—আস্তে ও আস্তে।

দ্বন্দ্ব সমাসের গাণিতিক গঠন
সমাস শব্দশ্রেণির উপর নির্ভরশীল তাই প্রতিটি সমাসের গাণিতিক গঠন জানা প্রয়োজন।
১. পূর্বপদ +ও/আর + পরপদ          = দ্বন্দ্ব সমাস
২. বিশেষ্য +ও/আর + বিশেষ্য          = দ্বন্দ্ব সমাস
৩. সর্বনাম +ও/আর + সর্বনাম         = দ্বন্দ্ব সমাস
৪. বিশেষণ +ও/আর + বিশেষণ         = দ্বন্দ্ব সমাস
৫. ক্রিয়া  +ও/আর + ক্রিয়া          = দ্বন্দ্ব সমাস
৬. ক্রিয়াবিশেষণ+ও/আর+ ক্রিয়াবিশেষণ    = দ্বন্দ্ব সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য              সমাস
অত্যাচার অবিচার    অত্যাচার ও অবিচার       দ্বন্দ্ব সমাস  
দয়ামায়া      দয়া ও মায়া            দ্বন্দ্ব সমাস
অহিনকুল         অহি ও নকুল           দ্বন্দ্ব সমাস  
দেখাশুনা         দেখা ও শুনা            দ্বন্দ্ব সমাস
আজকাল         আজ ও কাল            দ্বন্দ্ব সমাস  
সাহেব-বিবি-গোলাম   সাহেব, বিবি ও গোলাম     দ্বন্দ্ব সমাস
আমরা           তুমি, আমি ও সে        নিত্য সমাস  
বাকবিতণ্ডা        বাক ও বিতণ্ডা           নিত্য সমাস
কাজকর্ম           কাজ ও কর্ম            দ্বন্দ্ব সমাস  
ভালোমন্দ         ভালো ও মন্দ           দ্বন্দ্ব সমাস
গণ্যমান্য          গণ্য ও মান্য            দ্বন্দ্ব সমাস  
মৃদুমন্দ           মৃদ ও মন্দ             দ্বন্দ্ব সমাস
জনমানব          জন ও মানব            দ্বন্দ্ব সমাস  
সাপে নেউলে       সাপে ও নেউলে           দ্বন্দ্ব সমাস
জমাখরচ          জমা ও খরচ            দ্বন্দ্ব সমাস
সাত সতের        সাত ও সতের           দ্বন্দ্ব সমাস
তরুলতা          তরু ও লতা            দ্বন্দ্ব সমাস
সৈন্যসামন্ত         সৈন্য ও সামন্ত           দ্বন্দ্ব সমাস
দশ-বার          দশ ও বার             দ্বন্দ্ব সমাস       
রক্তমাংস          রক্ত ও মাংস            দ্বন্দ্ব সমাস
দুধেভাতে          দুধে ও ভাতে            অলুক দ্বন্দ্ব সমাস   
লেনদেন           লেন ও দেন            অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
দুধ-ভাত/দুধভাত    দুধ ও ভাত            অলুক দ্বন্দ্ব সমাস   
হিতাহিত          হিত ও অহিত           অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
দম্পতি           দম/জায়া ও পতি         দ্বন্দ্ব সমাস  
তোমরা           সে ও তুমি             দ্বন্দ্ব সমাস

দ্বিগু সমাস
সংখ্যাবাচক শব্দ ও বিশেষ্য মিলে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। ‘অ-কার’ হলে ‘এর আর ‘আ/ই/উ-কার’ থাকলে ‘র’ বসে।

দ্বিগু সমাসের গাণিতিক গঠন
১. সংখ্যা+ বিশেষ্য+র/এর+ সমাহার = দ্বিগু সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য                   সমাস
দ্বিরত্ন       দ্বি/দুই রত্নের সমাহার           দ্বিগু সমাস  
ত্রিফলা      ত্রি/তিন ফলের সমাহার      দ্বিগু সমাস  
ত্রিলক       ত্রি/তিন লোকের সমাহার         দ্বিগু সমাস  
ত্রিরত্ন       ত্রি/তিন রত্নে সমাহার           দ্বিগু সমাস  
ত্রিভুবন     ত্রি/তিন ভুবনের সমাহার         দ্বিগু সমাস  
ত্রিভুজ      ত্রি ভুজের সমাহার             দ্বিগু সমাস  
তেপান্তর     তে/তিন প্রান্তরের সমাহার         দ্বিগু সমাস  
চৌরাস্তা     চৌ/চার রাস্তার সমাহার         দ্বিগু সমাস
চৌমুহনী      চৌ/চার মোহনার সমাহার         দ্বিগু সমাস
চতুর্ভুজ      চৌ/চার ভুজের সমাহার          দ্বিগু সমাস  
চতুষ্পদ     চার পায়ের সমাহার            দ্বিগু সমাস  
চতুর্দশপদী    চতুর্দশ/চৌদ্দ পদের সমাহার        দ্বিগু সমাস  
পঞ্চনদ      পঞ্চ/পাঁচ নদের সমাহার      দ্বিগু সমাস
ষড়ঋতু      ষড়/ছয় ঋতুর সমাহার           দ্বিগু সমাস
ষড়ভুজ      ষড়/ছয় ভুজের/বাহুর সমাহার      দ্বিগু সমাস
সপ্তাহ       সপ্ত অহের সমাহার             দ্বিগু সমাস
সেতার      সে/তিন তারের সমাহার          দ্বিগু সমাস  
সপ্তর্ষি       সপ্ত ঋষির সমাহার             দ্বিগু সমাস
সাতসমুদ্র     সাত সমুদ্রের সমাহার            দ্বিগু সমাস
নবরত্ন      নব রত্নের সমাহার             দ্বিগু সমাস
শতাব্দী      শত অব্দের সমাহার             দ্বিগু সমাস

কর্মধারয় সমাস
বিশেষণ ও বিশেষ্য মিলে যে সমাস হয় এবং পরপদ প্রধান থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। অথবা যে যা, যা—তা, যিনি—তিনি, যে—সে, যেই—সেই, মতো/ন্যায়, রূপ ইত্যাদি যোগে যে সমাস গঠিত হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। কর্মধারয় সমাসে বিশেষ্য বিশেষণ হয়। যেমন: সুন্দরী থাকলে সুন্দর হয়—সুন্দরী যে লতা—সুন্দরলতা। মহান থাকলে মহা হয়—মহান যে নবি—মহানবি। শেষে রাজা থাকলে রাজ হয়—মহান যে রাজা—মহারাজ। রাত্রি থাকলে রাত হয়—দীর্ঘ যে রাত্রি—দীর্ঘরাত। কু থাকলে কদা হয়—কু যে আকার = কদাকার। অহ থাকলে আন হয়—পূর্ব যে অহ্ণ—পূর্বাহ্ণ।

কর্মধারয় সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষণ+যে+বিশেষ্য                       = কর্মধারয় সমাস
   অথবা বিশেষ্য+যে+বিশেষণ                  = কর্মধারয় সমাস
২. বিশেষ্য +বিশেষ্য +যে                      = কর্মধারয় সমাস
৩. যা+ বিশেষণ+তাই+বিশেষণ                  = কর্মধারয় সমাস
৪. যে+বিশেষণ+ সে/সেই+বিশেষণ                 = কর্মধারয় সমাস
৫. যে+বিশেষ্য+সেই+ বিশেষ্য                    = কর্মধারয় সমাস
অথবা যে+বিশেষণ+সেই+ বিশেষণ                 = কর্মধারয় সমাস
৬. যিনি+বিশেষ্য+তিনি+বিশেষ্য                  = কর্মধারয় সমাস
৭. বিশেষ্য+চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/+বিশেষ্য   = মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
৮. বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায়+বিশেষণ            = উপমান কর্মধারয় সমাস
৯. বিশেষ্য+বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায়             = উপমিত কর্মধারয় সমাস
১০. বিশেষণ (বিশেষ্য-বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+রূপ+বিশেষ্য= রূপক কর্মধারয় সমাস
নমুনা
১. বিশেষণ+যে+বিশেষ্য—কর্মধারয় সমাস অথবা বিশেষ্য+যে+বিশেষণ= কর্মধারয় সমাস
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
মহানবি           মহান যে নবি      কর্মধারয় সমাস    
অত্যাচার         অতি যে আচার     কর্মধারয় সমাস
নীলপদ্ম           নীল যে পদ্ম       কর্মধারয় সমাস
ক্রীতদাস          ক্রীত যে দাস      কর্মধারয় সমাস
সুন্দরিলতা/সুন্দরলতা  সুন্দর যে লতা      কর্মধারয় সমাস
গিন্নিমা           গিন্নি যে মা       কর্মধারয় সমাস
মহার্কীতি         মহান যে র্কীতি      কর্মধারয় সমাস    
নবপৃথিবী         নব যে পৃথিবী      কর্মধারয় সমাস
মহাজ্ঞানী         মহান যে জ্ঞনী      কর্মধারয় সমাস    
নবযৌবন         নব যে যৌবন      কর্মধারয় সমাস
মহারাজ           মহান যে রাজা      কর্মধারয় সমাস    
নীলপদ্ম           নীল যে পদ্ম       কর্মধারয় সমাস
কদাকার      কু যে আকার      কর্মধারয় সমাস    
কুদর্থ            কু যে অর্থ        কর্মধারয় সমাস    
মহাপৃথিবী         মহা যে পৃথিবী      কর্মধারয় সমাস
পূর্বাহ্ণ            পূর্ব যে অহ্ণ        কর্মধারয় সমাস    
মহাজন           মহান যে জন      কর্মধারয় সমাস
আলুসিদ্ধ          সিদ্ধ যে আলু       কর্মধারয় সমাস    
ষড়যন্ত্র           ষট যে যন্ত্র        কর্মধারয় সমাস
নরাধম           অধম যে নর       কর্মধারয় সমাস    
সজ্জন            সৎ যে জন        কর্মধারয় সমাস

২. বিশেষ্য +বিশেষ্য +যে = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
গল্পপ্রেমিক         গল্প প্রেমিক যে      কর্মধারয় সমাস
প্রিয়ংবদা          প্রিয়ং বদা যে
              /প্রিয় বাক্য বলে যে  কর্মধারয় সমাস
৩. যা+ বিশেষণ+তাই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
কাঁচামিঠা         যা কাঁচা তাই মিঠা   কর্মধারয় সমাস
মিঠাকড়া         যা মিঠা তাই কড়া   কর্মধারয় সমাস
ন্যায়সঙ্গত         যা ন্যায় তাই সঙ্গত  কর্মধারয় সমাস         
৪. যে+বিশেষণ+ সে/সেই+বিশেষণ = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
মান্যগণ্য     যে মান্য সে গণ্য    কর্মধারয় সমাস
শান্ত শিষ্ট    যে শান্ত সেই শিষ্ট    কর্মধারয় সমাস
৫. যে+বিশেষ্য+সেই+বিশেষ্য—কর্মধারয় সমাস অথবা যে+বিশেষণ+সেই+বিশেষণ=কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
বটবৃক্ষ      যে বট সেই বৃক্ষ    কর্মধারয় সমাস   
চালাকচতুর   যে চালাক সেই চতুর  কর্মধারয় সমাস
৬. যিনি+বিশেষ্য+তিনি+বিশেষ্য = কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
কবিধ্যানী    যিনি কবি তিনি ধ্যানী      কর্মধারয় সমাস
গিন্নিমা      যিনি গিন্নি তিনি মা       কর্মধারয় সমাস
জজসাহেব    যিনি জজ তিনি সাহেব      কর্মধারয় সমাস         
৭. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস : যে কর্মধারয় সমসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ পায় তাকে মধ্যপদলোপী সমাস বলে।
বিশেষ্য+চিহ্নিত/মিশ্রিত/বিষয়ক/রক্ষার্থে/মাখা/+বিশেষ্য =মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
পলান্ন           পল মিশ্রিত অন্ন     মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জয়মুকুট          জয় লব্ধ মুকুট      মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সিংহাসন          সিংহ চিহ্নিত আসন   মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস 
জয়পতাকা         জয়সূচক পতাকা     মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সাহিত্যসভা        সাহিত্য বিষয়ক সভা  মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ধর্মঘট           ধর্ম রক্ষার্থে ঘট      মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
স্মৃতিসৌধ         স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ   মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
ধর্মকার্য           ধর্ম বিহিত কার্য     মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
আয়কর           আয়ের ওপর কর    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
মৌমাছি           মৌ আশ্রিত মাছি    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
অষ্টাদশ           অষ্ট অধিক দশ      মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
সন্ধ্যাপ্রদীপ         সন্ধ্যায় জ্বলানো
হয় যে প্রদীপ       মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মকর্তা           কর্মের কর্তা        মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
শিক্ষামন্ত্রী          শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী   মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
খেয়াতরী          খেয়া পারাপারের তরী মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
হাঁটুজল           হাঁটু পরিমাণ জল    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জ্যোস্নারাত        জ্যোৎস্না স্নাতরাত    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
আয়কর           আয়ের ওপর কর    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
জীবনবীমা         জীবনরক্ষার্থে বীমা    মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
পানাপুকুর         পানাভর্তি পুকুর      মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

৮. বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায়+বিশেষণ = উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বা গুণ বজায় থাকলে এবং একটি বিশেষ্য ও অপরটি বিশেষণ পদ হলে যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য              সমাস 
কুসুমকোমল        কুসুমের মতো/ন্যায় কোমল   উপমান কর্মধারয় সমাস    
কচুকাটা           কচুর মতো কাটা        উপমান কর্মধারয় সমাস
তুষারশুভ্র         তুষারের ন্যায় শুভ্র        উপমান কর্মধারয় সমাস    
কাজলকাল         কাজলের ন্যায় কাল        উপমান কর্মধারয় সমাস
তুষারশীতল        তুষারের ন্যায় শীতল       উপমান কর্মধারয় সমাস    
অগ্নিশর্মা           অগ্নি ন্যায় শর্মা           উপমান কর্মধারয় সমাস
অরুণরাঙা         অরুণের ন্যায়রাঙা        উপমান কর্মধারয় সমাস    
শশব্যস্ত          শশকের ন্যায় ব্যস্ত        উপমান কর্মধারয় সমাস

৯. বিশেষ্য+বিশেষ্য +র/এর+মতো/ন্যায় = উপমিত কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদের সঙ্গে উপমান পদের সমাস হলে এবং উভয়ের মধ্যে সাধারণ ধর্ম বজায় না থাকলে এবং দুটি পদই বিশেষ্য হলে তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
মুখচন্দ্র      মুখ চন্দ্রের মতো/ন্যায়      উপমিত কর্মধারয় সমাস    
ফুলকুমারী    কুমারী ফুলের ন্যায়        উপমিত কর্মধারয় সমাস
সিংহপুরুষ    পুরুষ সিংহের ন্যায়        উপমিত কর্মধারয় সমাস    
রক্তকমল     কমলরক্তের ন্যায়         উপমিত কর্মধারয় সমাস
করপল্লব কর পল্লবের ন্যায়         উপমিত কর্মধারয় সমাস    
ওলকপি      ওল কপির ন্যায়          উপমিত কর্মধারয় সমাস
বজ্রকণ্ঠ      কণ্ঠ বজ্রের ন্যায়         উপমিত কর্মধারয় সমাস    
চাঁদমুখ      মুখ চাঁদের ন্যায়          উপমিত কর্মধারয় সমাস

১০. বিশেষণ (বিশেষ্য থাকলেও বিশেষণ অর্থ প্রকাশ পায়)+রূপ+বিশেষ্য = রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমান ও উপমেয় শব্দের মধ্যে অভেদ কল্পনা করলে যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
মনমাঝি      মনরূপ মাঝি       রূপক কর্মধারয় সমাস     
মোহনিদ্রা     মোহরূপ নিদ্রা      রূপক কর্মধারয় সমাস
ক্রোধানল    ক্রোধরূপ অনল      রূপক কর্মধারয় সমাস     
যৌবনসূর্য    যৌবনরূপ সূর্য      রূপক কর্মধারয় সমাস
বিষাদসিন্ধু    বিষাদরূপ সিন্ধু      রূপক কর্মধারয় সমাস     
শোকানল     শোকরূপ অনল      রূপক কর্মধারয় সমাস
কালসিন্ধু     কালরূপ সিন্ধু       রূপক কর্মধারয় সমাস
জীবননদী    জীবনরূপ নদী      রূপক কর্মধারয় সমাস
দিলদরিয়া    দিলরূপ দরিয়া      রূপক কর্মধারয় সমাস     
মনবিহঙ্গ     মনরূপ বিহঙ্গ       রূপক কর্মধারয় সমাস
পরানপাখি    পরানরূপ পাখি      রূপক কর্মধারয় সমাস              

তৎপুরুষ সমাস
বিভক্তি যোগে যে সমাস হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। অথবা যে সমাসে পূর্বশব্দে বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদ প্রধান থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

তৎপুরুষ সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষ্য (বস্তুবাচক/ব্যক্তি)+কে/ব্যাপিয়া +বিশেষ্য = দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
২. বিশেষ্য+দ্বারা/দিয়ে/কর্তৃক+বিশেষ্য           = তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
৩. বিশেষ্য+জন্য/নিমিত্ত+বিশেষ্য              = চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
৪. বিশেষ্য+হতে/থেকে/চেয়ে+বিশেষ্য            = পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
৫. বিশেষ্য +র/এর+বিশেষ্য                 = ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
৬. বিশেষ্য+এ/তে/য়+বিশেষ্য                = সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
৭. বিশেষ্য+বিশেষ্য (বিভক্তি লোপ পায় না) = অলুক তৎপুরুষ সমাস
৮. ন /নাই /নয় (অ/অন/বে/না/নি/গর)+বিশেষ্য = নং/নঞ তৎপুরুষ সমাস
৯. বিশেষ্য+এ বিভক্তি+ক্রিয়া+যে              = উপপদ তৎপুরুষ সমাস

১. বিশেষ্য (বস্তুবাচক/ব্যক্তি)+কে/ব্যাপিয়া +বিশেষ্য = দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ        ব্যাসবাক্য         সমাস
গুরুভক্তি         গুরুকে ভক্তি       দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
প্রাণবধ           প্রাণকে বধ        দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
বিপদাপন্ন         বিপদকে আপন্ন      দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
ভরাপর্ণ           ভরাকে অপর্ণ       দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
বিষয়াপন্ন         বিষয়কে আপন্ন      দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
রাজদত্ত           রাজাকে প্রদত্ত       দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
অতিথি সৎকার      অতিথিকে সৎকার    দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
রথচালন          রথকে চালন       দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
আমকুড়ানো        আমকে কুড়ানো      দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
চিরসুখ           চিরকাল ব্যাপিয়া সুখ  দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
জলসেচন          জলকে সেচন       দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
প্রাণবধ           প্রাণকে বধ        দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
দেশভঙ্গ           দেশকে ভঙ্গ        দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
নবীনবরণ         নবীনকে বরণ      দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস              

২. বিশেষ্য+দ্বারা/দিয়ে/কর্তৃক+বিশেষ্য = তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
রাজদত্ত           রাজা কর্তৃক দত্ত     তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
ছায়াশীতল         ছায়া দ্বারা শীতল    তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
মনগড়া           মন দিয়ে/দ্বারা গড়া  তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
পদদলিত          পদ/পা দ্বারা দলিত   তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
ঘিয়েভাজা         ঘি দিয়ে/দ্বারা ভাজা  তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস    
মেঘলুপ্ত           মেঘ দ্বারা লুপ্ত      তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

৩. বিশেষ্য+জন্য/নিমিত্ত+বিশেষ্য = চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য              সমাস
বালকবিদ্যালয়       বালকদের নিমিত্ত বিদ্যালয়    চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
দেবদত্ত           দেবকে দত্ত             চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
ছাত্রাবাস          ছাত্রদের জন্য আবাস       চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
বিপ্লব-অভিজান      বিপ্লবের জন্য অভিজান      চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
খেয়াঘাট          খেয়া পারের নিমিত্ত ঘাট    চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
বিয়েপাগলা         বিয়ের জন্য পাগলা        চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
তপবন           তপের জন্য বন      চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস               

৪. বিশেষ্য+হতে/থেকে/চেয়ে+বিশেষ্য = পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
বিলাতফেরত  বিলাত থেকে ফেরত  পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস     
মুখভ্রষ্ট      মুখ থেকে ভ্রষ্ট      পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
প্রাণপ্রিয়      প্রাণের চেয়ে প্রিয়    পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস     
পথভ্রষ্ট      পথ থেকে ভ্রষ্ট      পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
দেশপলাতক   দেশ থেকে পলাতক   পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস     
ধর্মভ্রষ্ট      ধর্ম থেকে ভ্রষ্ট      পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
দেশত্যাগ     দেশ থেকে ত্যাগ     পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
সমাজভ্রষ্ট     সমাজ থেকে ভ্রষ্ট     পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস  

৫. বিশেষ্য +র/এর+বিশেষ্য = ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
রাজপুত্র           রাজার পুত্র        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গৃহকর্তী           গৃহের কর্তী        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মাতৃস্নেহ           মাতার স্নেহ        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গণতন্ত্র           গণের তন্ত্র         ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ছাগদুগ্ধ           ছাগীর দুগ্ধ        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
চাবাগান      চায়ের বাগান       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশবাণী        আকাশের বাণী      ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ঝরনাধারা         ঝরনার ধারা       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশপথ         আকাশের পথ       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
প্রাণভয়           প্রাণের ভয়        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
জীবনপ্রদীপ        জীবনের প্রদীপ      ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পুষ্পসৌরভ         পুষ্পের সৌরভ      ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
তমাললতা         তমালের লতা       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বিধিলিপি         বিধির লিপি        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পৃষ্ঠপ্রদর্শন         পৃষ্ঠের প্রদর্শন       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
কবিগুরু          কবিদের গুরু       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বাক্যান্তর          বাক্যের অন্তর       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ভুজবল           ভুজের/হাতের বল    ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বনমধ্যে           বনের মধ্যে        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মার্তণ্ডপ্রায়         মার্তণ্ডের প্রায়       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বজ্রসম           বজ্রের সম         ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মমতারস          মমতারস          ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মামাবাড়ি         মামার বাড়ি       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজপথ           পথেররাজা         ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মৃগশিশু           মৃগের শিশু        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজদণ্ড           রাজার দণ্ড        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মৌমাছি           মৌয়ের মাছি       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজহংস           রাজার হংস        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
যৌবনবেগ         যৌবনের বেগ       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রাজনীতি         রাজার নীতি       ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আমগাছ           আমের গাছ        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
সুখসময়           সুখের সময়        ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আকাশগঙ্গা        আকাশের গঙ্গা      ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস           

৬. বিশেষ্য+এ/তে/য়+বিশেষ্য = সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
অকালপক্ব         অকালে পক্ব        সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
বনভোজন         বনে ভোজন        সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
গাছপাকা          গাছে পাকা        সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
রথারোহণ         রথে আরোহণ       সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
অকালমৃত্যু         অকালে মৃত্যু       সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
শোকার্ত           শোকে আর্ত        সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
শ্রুতিকটু      শ্রুতিতে কটু       সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
স্বাভাবসিদ্ধ        স্বভাবে সিদ্ধ       সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
সংখ্যাগরিষ্ঠ        সংখ্যায় গরিষ্ঠ      সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস          

৭. বিশেষ্য+বিশেষ্য (বিভক্তি লোপ পায় না) = অলুক তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
গানের আসর       গানের আসর       অলুক তৎপুরুষ সমাস     
সোনার বাংলা      সোনার বাংলা      অলুক তৎপুরুষ সমাস
সোনার প্রতিমা      সোনার প্রতিমা      অলুক তৎপুরুষ সমাস     
তেলেভাজা         তেলেভাজা         অলুক তৎপুরুষ সমাস
খেলার মাঠ        খেলার মাঠ        অলুক তৎপুরুষ সমাস     
চোখের বালি       চোখের বালি       অলুক তৎপুরুষ সমাস
ঘোড়ার গাড়ি       ঘোড়ার গাড়ি       অলুক তৎপুরুষ সমাস
কুলুর বলদ        কুলুর বলদ        অলুক তৎপুরুষ সমাস

৮. ন /নাই /নয় (অ/অন/বে/না/নি/গর)+বিশেষ্য = নঞ /নং তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাস
নিখরচ           নাই খরচ         নঞ তৎপুরুষ সমাস 
অবিচার           নয় বিচার        নঞ তৎপুরুষ সমাস
গরহাজির         ন হাজির         নঞ তৎপুরুষ সমাস 
অপর্যাপ্ত           নয় পর্যাপ্ত         নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেহিসেব          নয় হিসেব        নঞ তৎপুরুষ সমাস 
অকাতর      নয় কাতর        নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাচার           ন আচার         নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাসক্ত     নয় আসক্ত        নঞ তৎপুরুষ সমাস
অক্ষত/অনেক       নয় ক্ষত/নয় এক   নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনৈক্য           নয় ঐক্য         নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাশ্রিত          নয় আশ্রিত        নঞ তৎপুরুষ সমাস
আধোয়া           নয় ধোয়া         নঞ তৎপুরুষ সমাস
অসত্য           নয় সত্য         নঞ তৎপুরুষ সমাস
নামঞ্জুর           নয় মঞ্জুর         নঞ তৎপুরুষ সমাস
অবিশ্বাস্য          নয় বিশ্বাসযোগ্য      নঞ তৎপুরুষ সমাস
বিমনা           নয় মনা          নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনতিবৃহৎ        নয় অতিবৃহৎ       নঞ তৎপুরুষ সমাস
নিরর্থক           নাই অর্থ যার      নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনাচার           নয় আচার        নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেতার           নাই তার যার      নঞ তৎপুরুষ সমাস
অস্থির           নয় স্থির          নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেওয়ারিশ         নাই ওয়ারিশ যার    নঞ তৎপুরুষ সমাস
অনশন           নয় অশন         নঞ তৎপুরুষ সমাস
বেহিসেবি         নাই হিসেব যার     নঞ তৎপুরুষ সমাস

৯. বিশেষ্য+এ বিভক্তি+ক্রিয়া+যে =উপপদ তৎপুরুষ সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
জাদুকর      জাদু করে যে            উপপদ তৎপুরুষ সমাস    
ইন্দ্রজিৎ      ইন্দ্রকে জয় করেছে যে      উপপদ তৎপুরুষ সমাস
পকেটমার    পকেট মারে যে           উপপদ তৎপুরুষ সমাস    
গৃহস্থ       গৃহে অস্থ/স্থায়ী           উপপদ তৎপুরুষ সমাস
জলচর      জলে চরে যে            উপপদ তৎপুরুষ সমাস    
ক্ষণজীবী     ক্ষণসময় বাঁচে যে         উপপদ তৎপুরুষ সমাস

অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয়ী ভাব সমাসের পূর্বপদ প্রধান থাকে আর পরপদের কথার মিল রেখে অতিরিক্ত শব্দ/পদ বসে যা উপসর্গে গঠিত হয়।

সমাসের গাণিতিক গঠন
বিশেষ্য+র/এর /কে+সামীপ্য/সমীপে /সাদৃশ্য /সদৃশ /অভাব অযোগ্য /পর্যন্ত/হতে /যোগ্য/সম্মুখ /সামনে /অতিক্রম না করে /পশ্চাৎ /ঈষৎ/দ্বিত্ব বিশেষ
বিশেষ্য+র/এর /কে +

সামীপ্য/সমীপেউপ
: বনের সমীপে —উপবন
     উপকণ্ঠ
সাদৃশ্য /সদৃশ   
উপ      
প্রতি      
প্রতি 

: ভাষার সদৃশ   —উপভাষা
: ছবির সদৃশ   —প্রতিচ্ছবি
: দানের বদলে দান—প্রতিদান
উপজেলা
অভাব      
গর
দু
নি
বে
বি
হা

: লবনের /নুনের অভাব —আলুনি
: মিলের অভাব   —গরমিল
: ভিক্ষার অভাব  —দুর্ভিক্ষ
: আমিষের অভাব —নিরামিষ
: কারের অভাব  —বেকার, বেমানান
: শ্রীর অভাব   —বিশ্রী
: ভাতের অভাব  —হাভাত

উচ্ছৃঙ্খল
বিশ্রী হাভাতে
অনৈক্য
নির্বিঘ্ন, আলুনি, বেহিসেবি

পর্যন্ত       আ     
: মৃত্যু পর্যন্ত    —আমরণ
: পা থেকে মাথা পর্যন্ত —আপাদমস্তক
আমূল, আকর্ণ

হতে       আ
: জন্ম হতে    —আজন্ম

যোগ্য      অ    
: রূপের যোগ্য   —অনুরূপ 
অযোগ্য : নিবারণের অযোগ্য  —অনিবার্য    

সম্মুখ/সামনে  
প্র  

: অক্ষির সম্মুখ/চোখের সামনে —প্রত্যক্ষ
অতিক্রম না করে  
যথা  
: রীতিকে অতিক্রম না করে —যথারীতি
 /শক্তিকে অতিক্রম না করে —যথাশক্তি
 /বেলাকে (তীর) অতিক্রম করে —উদ্বেল


যথাসাধ্য, যথাবিধি, যথারীতি

অতিমাত্রা উচ্ছ্বাস (শ্বাসকে)
পশ্চাৎ     
 অনু

: পশ্চাৎ ধাবন —অনুধাবন 

অনুগমন
ঈষৎ
: ঈষৎ ঘোল     —ঘোলাটে

দ্বিত্ব বিশেষ্য    
প্রতি
হর
ফি

: দিন দিন     —প্রতিদিন
: রোজ রোজ   —হররোজ
: বছর বছর   —ফিবছর  

প্রতিক্ষণ


বহুব্রীহি সমাস
‘বহুব্রীহি’ শব্দটির অর্থ হলো বহু আছে ব্রীহি যার অর্থাৎ অনেক ধান আছে যার। বহু অর্থ অনেক আর ব্রীহি অর্থ ধান=অনেক ধান। কিন্তু সমাসে এর অর্থ অনেক সম্পদের মালিক। যে সমাসে তৃতীয়া পদের অর্থপ্রাধান্য পায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। অথবা ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর নামপ্রধান সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলে। অথবা যে সমাসের সমস্যমান শব্দগুলোর নির্দিষ্ট কোন অর্থ না বুঝিয়ে তৃতীয়া অর্থপ্রধান শব্দকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
ব্যাকরণে সমাসের ক্ষেত্রে অর্থাৎ একাধিক শব্দ একশব্দে পরিণত করা অর্থাৎ সংক্ষিপ্তকরণের প্রসঙ্গে বহুব্রীহি শব্দটির ব্যবহার হয়। যেমন: নীল কণ্ঠ যার-নীলকণ্ঠ। এখানে নীল অর্থাৎ ‘বিষ’ কণ্ঠে যার তাকেই অর্থাৎ শিবকে বোঝানো হয়েছে। ‘নীল’ বা ‘কণ্ঠ’ কোন শব্দের অর্থের প্রাধান্য না হয়ে তৃতীয়া একটি শব্দ শিবকে বোঝানো হয়েছে। ‘নীল কণ্ঠ যার’ না বলে একটি শব্দ ‘নীলকণ্ঠ’ বলে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়েছে। ‘যার’ শেষে বসে। ব্যতিহার (দ্বিত্বক্রিয়া)—‘যে’ মাঝে বসে। মধ্যপদলোপী ‘যে’ মাঝে বসে। ‘সহ’ প্রথমে পৃথকভাবে আর পদের শেষে ‘সহ’ একসঙ্গে বসে।

বহুব্রীহি সমাসের ব্যতিক্রম ব্যবহার
১. সমাসজাত শব্দের আগে ‘স’ যোগ হয় যদি পূর্বশব্দে সহ বা সহিত থাকে। যেমন: বান্ধবসহ বর্তমান=সবান্ধব, সহ উদর যার—সহোদর।
২. সমাসজাত শব্দের পরে ‘ক’ যোগ হয় যদি পরশব্দে মাতৃ, পুত্র, স্ত্রী থাকলে। যেমন: নদী মাতৃ/মাতা যার—নদী মাতৃক, ‘বি’ হয়েছে পত্নী যার—বিপত্নীক, স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান—সস্ত্রীক।
৩. সমাসজাত শব্দের পরে ‘লা’ বসে যোগ হয় যদি পরপদে ‘অ’ থাকে আবার নাভ যোগ হয় যদি নাভি থাকে। মাতৃ, পুত্র, স্ত্রী থাকলে। যেমন: পদ্ম নাভিতে যার—পদ্মনাভ।
৪. যুবতী স্থলে যুব আর জায়া স্থলে জানি হয়। যেমন: যুবতী জায়া যার—যুবজানি।
৫. পূর্বপদ ও পরপদ একই থাকতে পারে তবে স্ব স্ব সমাসে শব্দ যোগ করে সেই সমাস গঠন করা যায়। যেমন: দ্বিগু: ত্রিফলা—ত্রি ফলের সমাহার/ বহুব্রীহি: ত্রি ফলা যার।

বহুব্রীহি সমাসের গাণিতিক গঠন
১. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ যার               = বহুব্রীহি সমাস
২. বিশেষ্য+ সপ্তমী বিভক্তি+ বিশেষ্য+ যার     = বহুব্রীহি সমাস
৩. বিশেষণ+ বিশেষ্য+ যার              = বহুব্রীহি সমাস
৪. বিশেষ্য +র/এর+দিকে/সাথে+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
৫. বিশেষ্য+বিশেষ্য+যে                  = বহুব্রীহি সমাস
৬. বিশেষ্য+ক্রিয়াপদ+যে                = বহুব্রীহি সমাস
৭. বিশেষ্য+র/এর+সহিত বর্তমান           = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস
৮. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে   = মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
৯. বিশেষ্য+বিভক্তি+বিশেষ্য+বিভক্তি+ যে+ নামক্রিয়া= ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
১০. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি              = বহুব্রীহি সমাস
১১. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি              = বহুব্রীহি সমাস
১২. সংখ্যা+বিশেষ্য+র/এর+বিশেষ্য +যার      = বহুব্রীহি সমাস
    অথবা সংখ্যা+বিশেষ্য+ যে+বিশেষ্য +র/এর = বহুব্রীহি সমাস
১৩. বিশেষ্য+ নাই/+যাতে               = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
    অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার           = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৪. নয়+ বিশেষ্য+(যার)               = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
১৫. ন (নয় করা যায়)+বিশেষ্য+ যা       = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস

১. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য              সমাস
সহোদর           সহ উদর যার           বহুব্রীহি সমাস
বিমনা           মনের অভাব যার         বহুব্রীহি সমাস
দশগজি           দশ গজ পরিমাণ যার      বহুব্রীহি সমাস
একরোখা          এক দিকে রোখ যার       বহুব্রীহি সমাস
চন্দ্রচূড়           চন্দ্র চূড়া যার           বহুব্রীহি সমাস
সহোদর           সহ (একই) উদর যার     বহুব্রীহি সমাস
নদী মাতৃক        নদী মাতা যার           বহুব্রীহি সমাস
তিমিরকুন্তলা        তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার    বহুব্রীহি সমাস
দশানন           দশ আনন যার           বহুব্রীহি সমাস
হাতেছড়ি          হাতে ছড়ি যার           বহুব্রীহি সমাস
আশীবিষ          আশীতে বিষ যার         বহুব্রীহি সমাস
শ্বাপদ            শ্বার/কুকুরের মতো পদ যার  বহুব্রীহি সমাস
বিপত্নীক           বিগত পত্নী যার          বহুব্রীহি সমাস
সতীর্থ            সমান তীর্থ যার          বহুব্রীহি সমাস
২. বিশেষ্য+ সপ্তমী বিভক্তি+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
বীণাপাণি    বীণা পাণিতে যার    বহুব্রীহি সমাস
ঊর্ণনাভ      ঊর্ণ নাভিতে যার    বহুব্রীহি সমাস
পাপমতি      পাপে মতি যার      বহুব্রীহি সমাস          
৩. বিশেষণ+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
অল্পপ্রাণ      অল্প প্রাণ যার           বহুব্রীহি সমাস
মহাত্মা      মহান আত্মা যার         বহুব্রীহি সমাস
সুহৃদয়      সুন্দর হৃদয় যার         বহুব্রীহি সমাস
পাঁচগজি      পাঁচ গজ পরিমাণ যার      বহুব্রীহি সমাস
মন্দভাগ্য     মন্দ ভাগ্য যার           বহুব্রীহি সমাস
বার্ধক্য      বৃদ্ধাবস্থা যার            বহুব্রীহি সমাস
নীলকণ্ঠ      নীল কণ্ঠে যার           বহুব্রীহি সমাস
সুশীল       সু (সুন্দর) শীল যার      বহুব্রীহি সমাস
কমবখত     কম বখত যার           বহুব্রীহি সমাস          
৪. বিশেষ্য +র/এর+দিকে/সাথে+ বিশেষ্য+ যার = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
ঘরমুখো      ঘরের দিকে মুখ যার       বহুব্রীহি সমাস
সদর্প       দর্পের সাথে বর্তমান        বহুব্রীহি সমাস
৫. বিশেষ্য+বিশেষ্য+যে =বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য         সমাসের নাম
সহকর্মী           সমান কর্মী যে      বহুব্রীহি সমাস
৬. বিশেষ্য+ক্রিয়াপদ+যে = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
জাদুকর      জাদু করে যে       বহুব্রীহি সমাস
জলচর      জলে চরে যে       বহুব্রীহি সমাস
পকেটমার    পকেট মারে যে      বহুব্রীহি সমাস          
৭. বিশেষ্য+র/এর+সহিত বর্তমান = মধ্যপদলপী বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য                   সমাস
সজল       জলের সহিত বর্তমান            মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
সবান্ধব      বান্ধবসহ বর্তমান/বান্ধবের সহিত    মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
৮. বিশেষ্য+ বিশেষ্য+ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ         ব্যাসবাক্য                       সমাস
হাতেখড়ি          হাতে খড়ি দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে         মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
৯. বিশেষ্য+বিভক্তি+বিশেষ্য+বিভক্তি+ যে+ নামক্রিয়া = ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
কানাকানি    কানে কানে যে কথা       ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
কোলাকুলি    কোলে কোলে যে মিলন      ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
হাতাহাতি    হাতে হাতে যে লড়াই       ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
হাসাহাসি     হাসতে হাসতে যে ক্রিয়া     ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
রক্তারক্তি    রক্তেরক্তে যে কাণ্ড        ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
গলাগলি      গলায় গলায় যে মিল       ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
১০. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
সত্যবাদী     সত্যকথা বলেন যিনি       বহুব্রীহি সমাস
১১. বিশেষ্য+ ক্রিয়া +যিনি =বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য    সমাস
গৃহস্থ       গৃহে স্থির যে  বহুব্রীহি সমাস
১২. সংখ্যা+বিশেষ্য+র/এর+বিশেষ্য+যার=বহুব্রীহি সমাস অথবা সংখ্যা+বিশেষ্য+যে+বিশেষ্য +র/এর = বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য                       সমাস
সেতার      সে তারের যন্ত্র যার/তিন তার যে যন্ত্রের    বহুব্রীহি সমাস
১৩. বিশেষ্য+ নাই/+যাতে—নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস অথবা নাই +বিশেষ্য+ যার = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য         সমাস
নির্ভুল       ভুল নাই যাতে      নঞ বহুব্রীহি সমাস  
বেয়াদব      আদব নাই যার নঞ বহুব্রীহি সমাস
অপয়া      পয় নাই যার       নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অজ্ঞান      জ্ঞান নাই যার      নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অভাগ্য      ভাগ্য নাই যার      নঞ বহুব্রীহি সমাস
অবোধ      বোধ নাই যার      নঞ বহুব্রীহি সমাস            
১৪. নয়+ বিশেষ্য+(যার) = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য              সমাস
অবিশ্বাস্য     নয় বিশ্বাস্য             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনাশ্রিত     নয় আশ্রিত             নঞ বহুব্রীহি সমাস
অস্থির      নয় স্থির              নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনিষ্ট      নয় ইষ্ট               নঞ বহুব্রীহি সমাস
অপর্যাপ্ত     নয় পর্যাপ্ত             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনুচিত     নয় উচিত             নঞ বহুব্রীহি সমাস
অকাতর নয় কাতর             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনৈক্য      নয় ঐক্য/নাই ঐক্য       নঞ বহুব্রীহি সমাস
নিরর্থক     নাই অর্থ যার           নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনধিক      নয় অধিক             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনসূয়া      নাই অসূয়া (হিংসা) যার   নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনতিবৃহৎ   নয় অতি বৃহৎ          নঞ বহুব্রীহি সমাস  
বেহায়া      নাই হায়া যার          নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাদর     নয় আদর             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
বেসরকারি    নয় সরকারি            নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাসক্ত নয় আসক্ত             নঞ বহুব্রীহি সমাস  
বেওয়ারিশ    বে/নাই ওয়ারিশ যার      নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনাচার     নয় আচার             নঞ বহুব্রীহি সমাস            
১৫. ন (নয় করা যায়)+বিশেষ্য+ যা = নং/নঞ বহুব্রীহি সমাস
নমুনা
প্রদত্ত শব্দ    ব্যাসবাক্য    সমাস
অনাচার     ন আচার    নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনাদি      ন আদি     নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনশন      ন অশন     নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনন্য      ন অন্য     নঞ বহুব্রীহি সমাস
অনেক      ন এক      নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনার্য      ন আর্য     নঞ বহুব্রীহি সমাস
অবিচার     ন বিচার    নঞ বহুব্রীহি সমাস  
অনেক      ন এক      নঞ বহুব্রীহি সমাস

অন্যান্য সমাস
১. নিত্যসমাস: যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না তাকে নিত্যসমাস বলে। দুই-নব্বই-এর মাঝে ‘এবং’ না বসে ‘ও’ বসে। কিন্তু প্রত্যেক বইতে ‘এবং’ দেয়া। যেমন: অন্য গ্রাম—গ্রামান্তর, গৃহান্তর, কেবল দর্শন—দর্শনমাত্র, আমি, তুমি ও সে—আমরা, দুই ও নব্বই—বিরানব্বই।
২. প্রাদিসমাস: উপসর্গযোগে (অনু, প্র, প্রতি, পরি) গঠিত সমাসকে প্রাদিসমাস বলে। যেমন: প্র (প্রকৃষ্ট যে বচন)—প্রবচন, প্র (প্রকৃষ্টরূপে) যে ভাত (আলোকিত)—প্রভাত, পরি যে ভ্রমণ—পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ—অনুতাপ।
৩. একদেশি সমাস: কালবাচক সমাসকে একদেশি সমাস বলে। যেমন: অহ্নের অপর ভাগ—অপরাহ্ন।
৪. নঞসমাস: পূর্বশব্দে আগে ‘ন/না/নাই/নাই/নয়’ যোগে যে সমাস হয় তাকে নঞ(নং) সমাস বলে। পদের পূর্বের ‘অ/আ/ন/বে’ উঠে ‘ন’ বসে। যেমন:
তৎপুরুষ সমাস: অভাব (ন ভাব), অসুখ, অনাদর, অজানা, আনুলি, অমানুষ, নাছোড়, নাবালক, নাতিদীর্ঘ, নামঞ্জুর, বেতাল।
বহুব্রীহি : অবুঝ (নাই বুঝ যার), অজ্ঞান, বিশ্রী, নির্ভুল, বেহুঁশ।
৫. অলুক সমাস: যে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক সমাস বলে। যেমন:
দ্বন্দ্ব সমাস : দুধেভাতে (দুধে ও ভাতে), মায়ে-ঝিয়ে, হাতে-কলমে।
তৎপুরুষ সমাস: ঘিয়েভাজা, কলের গান, গরুর গাড়ি।
বহুব্রীহি : মাথায়-পাগড়ি (মাথায় পাগড়ি যার), গলায়-গামছা।
৬. সংখ্যাবাচক সমাস: সংখ্যা দিয়ে যে সমাস হয় তাকে সংখ্যাবাচক সমাস বলে। যেমন:
দ্বন্দ্ব সমাস : সাত-পাঁচ, সাত-সতের, উনিশ-বিশ, নয়-ছয়।
দ্বিগু     : ত্রি পদের সমাহার—ত্রিপদী, ত্রিফলা, নবরত্ন, পঞ্চনদ, সেতার।
বহুব্রীহি   : দশ গজ পরিমাণ যার—দশগজি, চৌচাল, চারহাতি, পোয়া, সেতার।
৭. বহুপদি সমাস: বহুপদ দিয়ে গঠিত সমাসকে বহুপদি সমাস বলে। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস: সাহেব, বিবি ও গোলাম, হাত, পা, নাক, মুখ ও চোখ।
৮. একশেষ সমাস: বহুশব্দ থেকে সমাসজাত একটি শব্দে গঠিত সমাসকে একশেষ সমাস বলে। যেমন: দ্বন্দ্ব সমাস: আমরা—সে, তুমি ও আমি, তোমরা—সে ও তুমি।
৯. সুপসুপা সমাস: বিভক্তিযুক্ত নামশব্দের সাথে বিভক্তিযুক্ত নামশব্দের সমাস হলে সুপসুপা সমাস বলে। যেমন: রাত্রির মধ্য—মধ্যরাত্রি, রাত্রির পূর্ব—পূর্বরাত্রি, অহ্নের মধ্যে—মধ্যাহ্ন।

0 comments:

Post a Comment