রূপতত্ত্ব-শব্দগঠনের উপায় (প্রত্যয়)
প্রত্যয় শব্দগঠন করে শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রত্যয় হলো কিছু অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যারা প্রকৃতি অর্থাৎ নাম ও ধাতুর পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
প্রত্যয়ের উপাদান
১. প্রকৃতি : নাম ও ক্রিয়া শব্দের মূলকে প্রকৃতি বলে। যেমন: চলা, ঢাকা।
২. নামপ্রকৃতি বা প্রাতিপদিক : নামের মূল অথবা বিভক্তিহীন নামকে নামপ্রকৃতি বা প্রাতিপদিক পদ বলে। যেমন: ঢাকা।
৩. ক্রিয়াপ্রকৃতি বা ধাতুপ্রকৃতি : ক্রিয়া বা ধাতুর মূলকে ক্রিয়া বা ধাতু প্রকৃতি বলে। যেমন: চল।
৪. নামপ্রত্যয় বা তদ্ধিত প্রত্যয় : নাম প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় বসে তাকে নামপ্রত্যয় বলে। যেমন: আই।
৫. ক্রিয়াপ্রত্যয় বা কৃৎপ্রত্যয় : ক্রিয়া প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় বসে তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন: অন্ত।
৬. ধাতু : ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে। যেমন: পড়, কর।
৭. ক্রিয়াশব্দ : ক্রিয়ার সাথে বিভক্তি যোগে ক্রিয়াপদ হয়। যেমন: পড়ে (পড়+এ)।
৮. কৃদন্ত শব্দ : ক্রিয়ার সাথে প্রত্যয় যোগে নতুন যে শব্দ গঠিত হয় তাকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমন: পড়ুয়া (পড়+উয়া)।
প্রত্যয়ের গুণ বা বৃদ্ধি
প্রত্যয় গঠনে বর্ণের পরিবর্তন ও আগমন ঘটে। এই পরিবর্তনই গুণ বা বৃদ্ধি। যেমন:
১. গুণ: শব্দের আদিস্বরের পরিবর্তন ঘটানো হলো গুণ। যেমন :
ক) ই/ঈ থাকলে ‘এ’ হয়। যেমন: üচিন+আ = চেনা, üনী+আ = নেয়া/নেওয়া।
খ) উ/ঊ থাকলে ‘ও’ হয়। যেমন : üধু+আ = ধোয়া।
গ) ঋ থাকলে ‘অর’ হয়। যেমন : üকৃ+তা = কর্তা।
২. বৃদ্ধি: শব্দের বর্ণের আগমন ঘটানো হলো বৃদ্ধি। যেমন :
ক) অ থাকলে ‘আ হয়। যেমন : পচ+অ/ক (ণক) = পাচক।
খ) ই/ঈ থাকলে ‘ঐ’ হয়। যেমন : শিশু+অ/অব (ষ্ণ)= শৈশব।
গ) উ/ঊ থাকলে ‘ঔ’ বসে। যেমন : যুব+অন = যৌবন।
ঘ) ঋ থাকলে ‘আর’ হয়। যেমন : কৃ+য (ঘ্যণ)= কার্য।
প্রত্যয় নির্ণয়ের কৌশল
শব্দের অর্থ ঠিক রেখে শব্দ বিশ্লেষণ করার পর যদি সেই শব্দ দিয়ে নাম বোঝায় তাহলে নাম/তদ্ধিত প্রত্যয় হয় আর কাজ বুঝালে কৃৎপ্রত্যয় বোঝায়। যেমন: ঢাকাই—ঢাকা (নাম)+আই আর চলন্ত—চল (কাজ)+অন্ত ইত্যাদি।
প্রত্যয়ের প্রকরণ
বাংলা নামপ্রত্যয়/তদ্ধিত প্রত্যয়
অই, অক, অট, অড়, অন, অর, অল, অস, আ, আই, আইত, আচ, আচি, আন, আনি, আম, আমি, আমে, আর, আরি, আরু, আল, আলি, মি, ই/ঈ, ই, ইক, ইয়া, উ, উক, উয়া, রউ, ড়িয়া, উড়ো, উড়ে, উড়, উড়া, এ, র, রয়া, রয়ালা, ক, কা, কার, কিয়া/কে, গিরি, চে, জা, জাত, টিয়া, টে, ট, ঠা, ত, তা, তি, তুত, দার, ন, না, পনা, পানা, পারা, ভর, ভরা, মন্ত , ল, লা, লিয়া/লে, স, সা/সে, সী, বন্ত, ময়, রা, রি, ড়া, হারা। একটি অর্থবোধক বাংলা নামশব্দের পরে একটি বাংলা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বাংলা শব্দ (বিশেষ্য/বিশেষণ) তৈরি হয়। যেমন:
১. অক, অট, অড়, অন, অর, অল, অস-প্রত্যয়
নোলক (লোন+অক), ভরাট (ভরা+অট), তুখোড় (তুখ+অড়), মাজন (মাজ+অন), ঘ্যানর (ঘ্যান+অর), খোলস (খোল+অস), দোলক, ঢোলক, মড়ক, জমাট, ঝাপট, দাপট, সাপট, মলাট, তুলট, চাপড়, পাঁচন, দাঁতন, নানান, মাতন, পেছন, প্যানর, ধকল, হাতল, বাদল, আদল, মাথাল, মুখোস।
২. আ-প্রত্যয়
চোরা (চোর+আ), নোনা (নুন+আ)-কেষ্টা, বাঘা, কালা, কানা, জলা, গোদা, রোগা, নোনা, চালা, জটা, চোখা, চাকা, দখিনা, আস্তা, আধা, তেলা, তালা, নোনা, দক্ষিণা, নয়া, ফাঁকা, পশ্চিমা, চোরা, ডিঙা, হাতা, বাসা, চাষা, থালা, পাতা, চাঁদা।
৩. আই, আচি, আনো, আনি-প্রত্যয়
ঢাকাই (ঢাকা+আই), ঘামাচি (ঘাম+আচি), ঘামানো (ঘাম+আনো), শুনানি (শুন+আনি), কানাই, নিতাই, নিমাই, বোনাই, মোগলাই, পাবনাই, বড়াই, সাফাই, চোরাই, মিঠাই, কানাচি, ব্যাঙাচি, জুতানো, লতানো, প্যাঁচানো, তলানি, নাকানি, চুবানি।
৪. আমি/আমো-প্রত্যয় (আমী/ঈ-কার হবে না)
পাগলামো (পাগল+আমো), ইতরামি, চোরামি, বাঁদরামি, ফাজলামি, বোকামি, ঘরামি, ন্যাকামি, পাকামি, মুর্খামি, জ্যাঠামি, গুণ্ডামি, ভণ্ডামি, দুষ্টামি, ভাঁড়ামি, নোংরামি, ছেলেমি, বুড়োমি, আলসামি।
৫. আর, আরি-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
কর্মকার/কামার (কর্ম/কাম+আর), মাঝারি (মাঝ+আরি), কুমার, চামার, ভাণ্ডার, ছুতার, কাটারি, রকমারি, কাঁসারি, পূজারি, শাঁখারি, ঝিয়ারি, দিশারি, পিয়ারি, রকমারি, খামারি।
৬. আল, আল, আলি-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
দাঁতাল (দাঁত+আল), বাঙাল (বঙ/বঙ্গ+আল), জমকাল (জমক+আল), ঘটকালি (ঘটক+আলি), দুধাল, চতুরাল, চণ্ডাল, লাঠিয়াল, আরাল, ঝাঁঝাল, পাঁকাল, দাঁতাল, জোড়াল, স্বর্ণালি, সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, মিতালি, গৃহস্থালি, গীতালি।
৭. ই-প্রত্যয় (ঈ-কার হবে না)
বাহাদুরি (বাহাদুর+ই), ডাক্তারি, মোক্তারি, পোদ্দারি, ব্যাপারি, দোকানি, জমিদারি, চাষি, মাদ্রাজি, রেশমি, সরকারি, গুজরাটি, পানজাবি, তাঁতি, কাগজি, গুলো, ঝুলি, জাঁতি, লাঠি, দামি, দাগি, জেদি, তেজি, বিলাতি, বেনারসি, বাদামি, গোলাপি, রেশমি, খুকি, দাদি, ইংরেজি, দশই।
৮. ইক (অ+ই=আ হয়)-প্রত্যয় (সংস্কৃত ষ্ণিক>বাংলা ই)
আভিধানিক (অভিধান+ইক), কায়িক (কায়+ইক), বৈজ্ঞানিক (বিজ্ঞান+ইক), মাসিক (মাস+ ইক), নাবিক (নৌ+ইক), সাংবাদিক (সংবাদ+ইক), আক্ষরিক, আংশিক, আনুসঙ্গিক, আন্ত রিক, আণবিক, আঞ্চলিক, আধ্যাত্মিক, আধুনিক, আর্থিক, আভ্যন্ত রিক, আঙ্গিক, আনুষ্ঠানিক, আকস্মিক, ধার্মিক, নাগরিক, চারিত্রিক, পারিবারিক, প্রাকৃতিক, প্রাথমিক, বাচনিক, বার্ষিক, মাধ্যমিক, মানবিক, মানসিক, প্রাসঙ্গিক, শারীরিক, সাংকেতিক, সামাজিক, সামুদ্রিক, সাপ্তাহিক, সাংস্কৃতিক, সাম্প্রদায়িক, নাগরিক, সাংসারিক, স্বাপ্নিক, ধার্মিক, সামরিক, সাহিত্যিক।
৯. এ>ইয়া-প্রত্যয়
মাটিয়া (মাটি+ইয়া), মেটে (মাটি+এ), বেলে, পাথুরে, জেলে, মুটে, নেয়ে, সেকেলে, আদুরে, কনকনে, চকচকে, আমুদে, নাচুনে।
১০. উ/উক-প্রত্যয়
ঢালু (ঢাল+উ), নিন্দুক (নিন্দা+উক), কলু, সাঁতারু, দুখু, কানু, ছোট্টু, পাঁচু, হিরু, কালু, খুকু, নিচু, পিছু, দুষ্টু, পেটুক, মিথ্যুক, মিশুক, লাজুক, হিংসুক, ইচ্ছুক।
১১. ও<উয়া
উড়ে>উড়িয়া, উড়/উড়ি/উলি, টাকুয়া (টাক+উয়া), টেকো (টাক+ও), হাটুরিয়া (হাট+উড়িয়া), হাটুড়ে (হাট+উড়ে), লেজুড় (লেজ+উড়), ধেনো, টেকো, খেড়ো, জ্বরো, মেছো, মেঠো, কেজো, টেকো, সাপুড়ে, কাঠুড়ে, হাতুড়ে, শাশুড়ি, আধুলি।
১২. এল-প্রত্যয়
লেঠেল (লাঠি+এল), হিমেল (হিম+এল), গেঁজেল (গাঁজা+এলে)
১৩. ক /কা /কে /কার-প্রত্যয়
মড়ক (মড়+ক), ধনুক, ঢোলক, দমকা, হালকা, আচমকা, ছিঁচকে পুঁচকে, শতকে, ফুচকে, ছিটকে, মটকে, উপকার।
১৪. চে /জাত-প্রত্যয়
লালচে (লাল+চে), কালচে, তারচে, গোলাজাত।
১৫. ট /টে>টিয়া /ঠা-প্রত্যয়
ভরাট (ভরা+ট), ভাড়াটে (ভাড়া+টে/টিয়া), জমাট, ঝগড়াটে, রোগাটে, লম্বাটে, সাদাটে, বৈঠা, চৌঠা।
১৬. ত/তুত/তা/তি-প্রত্যয় (উচ্চারণ তো)
(উচ্চারণ তুতো), খালাত, ফুপাত, চাচাত, মাসতুত, খুরতুত, মেসতুত, নামতা, নুনতা, চাকতি, জালতি।
১৮. দার-প্রত্যয়
দোকানদার, বটিদার।
১৯. ন/না/নি-প্রত্যয়
সতীন, মিতান, পাখনা, মাস্টারনি, উকিলনি।
২০. পনা /পারা-প্রত্যয় (বিশেষণ)
চাঁদপনা (চাঁদ+পনা), দুরন্ত পনা, গিন্নিপনা, বেহায়াপনা, বোকাপনা, চাঁদপারা, পাগলপারা।
২১. ভর /ভরা-প্রত্যয় (বিশেষণ)
জীবনভর, দিনভর, রাতভর, মাসভর, গালভরা, মুখভরা, বাটাভরা।
২২. বন্ত /মন্ত-প্রত্যয় (বিশেষণ)
গুণবন্ত, ফলবন্ত, গুণমন্ত, বুদ্ধিমন্ত, শ্রীমন্ত।
২৩. ময়-প্রত্যয়
ঘরময়, দেশময়, বাজারময়
২৪. রা/রি/ড়া/ড়ি/লি/লা/লে-প্রত্যয়
কাটরা, পেটরা, কুঠরি, চামড়া, খাগড়া, গাছড়া, জুয়াড়ি, আঁকড়ি, মেয়েলি, আধলি, মেঘলা, একলা, আধলা, পিছলে।
২৫. স/সা/সে/সী-প্রত্যয়
মাকড়সা (মাকড়+সা), রূপসী (রূপ+সী), ফানুস, মুখস, খোলস, রূপসা, ভেপসা, কুয়াশা, ঝাপসা, পানসে।
২৬. হারা-প্রত্যয়
বলহারা, দোহারা।
বাংলা ধাতুপ্রত্যয় /কৃৎপ্রত্যয়
অ, অক, অন, অনা, অনি, অন্ত, অল, ই, উ, উন, উনি/উনী, অনা, অন্ত, অল, অক, আ, অয়া, আই, আত, আইত, আও, আন/আনো, আনি, উনি, আরি, উরি, আল, আলি, ই, ইয়া/ইয়ে, উতে, ইলে, ইবা, উ, উক, উকা/একো, উয়া, না, অক, কা, কি, আকু, আরু, তা, তি। একটি অর্থবোধক বাংলা ক্রিয়ার পরে একটি বাংলাপ্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বাংলাশব্দ তৈরি হয় (বিশেষ্য বা বিশেষণ)। কৃৎ প্রত্যয়ে এই (ü) চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন:
১. অ, অক, অন, অনা /না, অনি /উনি, অন্ত, অল-প্রত্যয়
ডুব (ডুব+অ), চালক (চাল+অক), কাঁদন (কাঁদ+অন), ধরন (ধৃ+অন), কান্না (কাঁদ+না), চলন্ত (চল+অন্ত), ফাটল (ফাট+অল), ঝুল/ঝুল, চর, ঘোর, দোল, খোঁজ, কর, দেখ, বল, চল, দুল, বাঁধ, ডাক, খেল, খোঁজ, ঘের, ফোঁড়, পালক, মোড়ক, ঝলক, চড়ক, ফাটক, সড়ক, দেখন, হাসন, ভাঙন, ঢাকন, বাঁচন, থাকন, নাচন, বাজন, বাঁধন, দোলন, বাড়ন, ঝুলন, জানান, মানান, চালান, ভরান, রান্না, খেলনা, বাজনা, কল্পনা, পাওনা, বাটনা, ঢাকনা, দোলনা, কাঁদুনি, চালুনি, কাঁপুনি, রাঁধুনি, ডুবন্ত, ছুটন্ত, বাড়ন্ত, ঘুমন্ত, ঝুলন্ত, উড়ন্ত , জীবন্ত , মাটল, শাটল
২. আ, আনো, আন+ও, আনি, আই, আত/আইত, আও, আকু/আরি/আল-প্রত্যয়
করা (কর+আ), কাঁদানো (কাঁদ+আনো), শুনানি (শুন+আনি), সিলাই (সিল্+আই), ডাকাত (ডাক + আত/আইত), চড়াও (চড়+আও), কাটারি (কাট+আরি), মাতাল (মাত+আল) পড়া, চলা, দেখা, শোনা, ধরা, কেনা, বেঁচা, রাঁধা, কাচা, ফোটা, কাটা, রাঁধা, চালা, মারা, কাঁদা, কাঁপানো, জানানো, শোনানো, ভাসানো, চালানো, মানানো, জড়ানো, ভরানো, ওঠানো, শোয়ানো, পড়ানো, কাঁদানি, ঘ্যানঘ্যানানি, উড়ানি, কাঁপানি, জ্বালানি, চেঁচানি, চালানি, উড়ানি, ভাঙানি, ছটফটানি, ঝাঁকানি, যাচাই, ঝালাই, মাড়াই, ঢালাই, চড়াই, শেলাই, লড়াই, পাকড়াও, ধরাও, নড়াও, ঝাকাও, ফলাও, লড়াকু, পূজারি, ধুনারি, মিশাল।
৩. ই, এ >ইয়া /ইয়ে-প্রত্যয় (বিশেষণ)
ভাজি (ভাজ+ই), কাশি, চাছি, ফেরি, কিনি, ভাজি, বেড়ি, বেঁচি, সেঁচি জানাজানি, দেখাদেখি, ভাবাভাবি, হানাহানি, মারামারি, বলাবলি, কানাকানি, হাতাহাতি, চুলাচুলি, মারামারি গেয়ে, মেরে, কয়ে, বলে, মরে, নেচে, লেখে, বাজিয়ে।
৪. উ /উনি /উরি /উয়া-প্রত্যয়
উড়ু–(উড়+উ), ডাকু, ঝাড়–, রাঁধুনি, আঁটুনি, উড়ুনি, চড়ুয়া, চিরুনি (চির+উনি), ডুবুরি (ডুব+উরি), পড়+উয়া (পড়+উয়া)।
৫. ও /ওন-প্রত্যয়
উড়ো (উড়+ও), খাওন (খা+ওন), কাঁদ, মর, ধর, চল, বল, নড়, চড়, ছাওন, দেওন, নেওন, চাওন, দাওন ।
৬. ত /তা /তি প্রত্যয়
ফেরত, বহতা, ফিরতা/ফেরতা, পড়তা, ধরতা, পড়তি, ঝরতি, কাটতি, ঘাটতি, গণতি, গুনতি, উঠতি।
৭. না /নি-প্রত্যয়
খেলনা (খেল+না), করনি (কর+নি), দোলনা, ঝরনা, কান্না (কাঁদ+না), রান্না (রাঁধ+না), ভাবনা যাওনি, খাইনি, যাইনি, যায়নি, খায়নি।
৮. ছে/ছি/ছেন-প্রত্যয়
করছে (কর+ছে), করছে, করছি, করছেন।
৯. ল/লি/লে/লাম-প্রত্যয়
করল (কর+ল), করল, করলে, করলি, করলাম।
সংস্কৃত নামপ্রত্যয়/তদ্ধিত প্রত্যয়
ষ্ণ, ষ্ণিক, ষ্ণায়ক, ষ্ণ্য, ষ্ণি, ষ্ণেয়, আয়ন, আলু, ঈ, ঈয়, ইল, বী, ময়, শালী, বান/বতুপ, মান/মতুপ, ইল, ইষ্ঠ, ইমন/ইমা, ইত, ইন, ইম, তা, ত্য, ত্র, তা, ত্ব, থ, থা, দা, ধা, বৎ, বিধ, বিন, ম, য, র, ল, শ, সাৎ, আকিন, আমিন, চিৎ। একটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দের পরে সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দ তৈরি হয় (বিশেষ্য বা বিশেষণ)। যেমন:
১. অব/অ>ষ্ণ, উ+অব=আব, ঐ+অ=ঐ, ঔ+অ=ঔ-প্রত্যয়
সংস্কৃত: মানব (মনু+ষ্ণ)
বাংলা: মানব (মনু+অব)
কৈশোর (কিশোর+অ), মৌন (মনু+অ), দানব, যাদব, মাধব, লাঘব, পার্থিব (পৃথিবী+অব), গৌরব (গুরু+অব), শৈশব (শিশু+অব), চৈত্র (চিত্র+অ), তৈল (তিল+অ), নৈশ (নিশা+অ), দৈব (দেব+অ), লাঘব (লঘু+অ), পৌরুষ (পুরুষ+অ), সার্বভৌম (সর্ব+ভূমি+অ)
২. আয়ন /আয়ণ-প্রত্যয়
দক্ষিণায়ন, দাক্ষায়ণ
৩. ই /ঈ /ইন, ই>ষ্ণি /ইক>ষ্ণিক-প্রত্যয়
দাশরথি (দশরথ+ই /ষ্ণি)
অধীন, কালীন, কুলীন, নবীন, প্রবীণ, গ্রামীণ, বৈরাগীন।
অনেকগুলো ই-প্রত্যয় দিয়ে লেখা হয়। যেমন: শ্রেণিন>শ্রেণী>শ্রেণি, রুগিন>রুগী>রুগি।
অনেকগুলো ঈ-প্রত্যয় দিয়ে লেখা হয়। যেমন: ভূমী, হস্তী, অগ্রণী, আগামী, তন্ত্রী, মন্ত্রী, শিকারী, প্রাণী, উপযোগী, অধিবাসী, পেশাজীবী, অর্থকরী, রাজধানী, ফলদায়ী, পরিকল্পনাকারী, ভাগী, রাগী, দাগী, যাত্রী, বিরোধী, বিদ্রোহী, প্রভাতী, উপকারী, বার্ষিকী, মানী, ধনী, গুণী, জ্ঞানী, উৎসাহী, জয়ী, বিজয়ী, ত্যাগী, পরিশ্রমী, প্রবাসী, বাদী, বিক্রী, ভোগী, মায়াবী, মেধাবী, বিলাসী, যোগী, যাত্রী, সেনানী, বনানী, স্থায়ী, রজনী, শশী, পত্রী, পাঠী, পাপী, পায়ী, নাশী, আততায়ী, নারকী, পারদর্শী, কর্মী, বর্তী, রশী, বশী, বাজী, বিয়োগী, বিরোধী, বৈরাগী, ব্যাপারী, বৈশাখী, উপকারী, অঙ্গাঙ্গী, আত্মঘাতী, অপরাধী, অগ্রনী, গ্রাহী, উৎসাহী, উপযোগী, পক্ষী, বাদী, ভারী, নামী, জেদী, তেজী, দরদী, মেজাজী।
ঈ-প্রত্যয়: নারিবাচক শব্দ: গাভিন>গাভী, গৃহীন>গৃহী, কেশিন>কেশী, সতিন>সতী, রূপসিন>রূপসী, স্ত্রী, জননী, বান্ধবী, ভগিনী, শালী, মাদী, মহতী, সতী, বুদ্ধিমতী, গুণবতী, নারী, তরুণী, শালী, স্ত্রী, যুবতী, নদী, তরুণী, হরিণী, যুবতী, সুন্দরী, কুমারী, মায়াবী, কিশোরী ইত্যাদি।
নারী বাচক শব্দ ছাড়া অন্যান্য ঈ-কারযুক্ত শব্দ: স্বামী, শশী, শীত, শরীর, দোশী, যাত্রী, দাগী, সমীচীন, সীমা ইত্যাদি।
ঋ-যুক্ত বর্ণে ঈ-প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যেমন: শরীর (শৃ+ঈর), গ্রীষ্ম, তীক্ষ্ণ। আবার ইর-প্রত্যয়ে ঈ-প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়। যেমন: বধীর (বধ+ইর)।
৫. ইষ্ঠ, ইমন>ইমা (বাংলা), ইত (বিশেষণ), ইতি, ইম, ইল (বিশেষণ), ইয়ান-প্রত্যয়
গরিষ্ঠ (গুরু+ইষ্ঠ), নীলিমা (নীল+ইমা), কুসুমিত (কুসুম+ইত), সমিতি (সম+ইতি), অগ্রিম (অগ্র+ইম)
পঙ্কিল (পঙ্ক+ইল), গরিয়ান (গুরু+ইয়ান), লঘিষ্ঠ, কনিষ্ঠ, বলিষ্ঠ, মহিমা (মহৎ+ইমা), গরিমা, দ্রাঘিমা, তনিমা, গরিমা, মুকুলিত, শোভিত (শোভা+ইত), বিকৃত (বিকার+ইত), প্লবিত, কম্পিত, পতিত, ঘটিত, মিলিত, জীবিত, পঠিত, গ্রন্থিত, বর্ধিত, জাগরিত, শিক্ষিত, ক্ষুধিত, বঞ্চিত, লিখিত, নিন্দিত, লজ্জিত, পুষ্পিত, রক্তিম (রক্ত+ইম), পশ্চিম (পশ্চাৎ+ইম), আদিম (আদি+ইম), অন্তিম, ফেনিল, জটিল (জটা+ইল), পিচ্ছিল, কুটিল, বলিয়ান (বলবৎ+ইয়ান), বর্ষিয়ান (বৃদ্ধ+ ইয়ান)।
৬. ঈয়-প্রত্যয়
জলীয়, বায়বীয়, নমুনীয়, মঙ্গলীয়, বঙ্গীয়, মিসরীয়, ভারতীয়, আরবীয়, মানবীয়, দলীয়, স্থানীয়, আত্মীয়, রাজকীয়।
৭. এয়>ষ্ণেয়-প্রত্যয়
বৈমাত্রেয় (বিমাতা+এয়), আগ্নেয় (অগ্নি+এয়), ভাগনেয় (ভগনী+এয়)।
৮. ক-প্রত্যয়
ছত্রক (ছত্র+ক), পঞ্চক, পুত্রক, ভিক্ষুক
৯. ত /তন, তর /তম, (খুব অর্থে-বিশেষণ), ত্ব (বিশেষ্য), তা (ঈ, ই-কার হয়ে)/ত্য /ত্র /ত্ব, থ /থা-প্রত্যয়।
অন্তত (অন্ত+ত), চিরন্তন (চিরম+তন), বৃহত্তর (বৃহৎ+তর), বৃহত্তম (বৃহৎ+তম), বন্ধুত্ব (বন্ধু +ত্ব)।
বন্ধুতা (বন্ধু+তা), পশ্চাত্ত্য (পশ্চাৎ+ত্য), চতুর্থ (চতুঃ+থ), অংশত, পুরাতন, মহত্তর (মহৎ+তর), ক্ষুদ্রতর, উন্নততর, উচ্চতর, দীর্ঘতর, গুরুতর, মহত্তম (মহৎ+তম), প্রিয়তম (প্রিয়+তম), মধুরতম (মধুর+তম), ক্ষুদ্রতম, গুরুত্ব, ঘনত্ব, মহত্ব, মন্ত্রিত্ব, স্থায়িত্ব, শত্রুতা (শত্রু+তা), প্রতিযোগিতা (প্রতিযোগ+তা), সহযোগিতা, সততা, মূর্খতা, দাক্ষিণাত্য (দক্ষিণ+ত্য), সর্বত্র, একত্র, তত্র, যত্র, ছত্র, মনুষ্যত্ব, গুরুত্ব, চতুর্থ, ষষ্ঠ (ষষ+থ), অন্যথা, যথা (যদ+থা), তথা (তদ+থা)
১০. দা /ধা /চিৎ /বৎ-প্রত্যয়
একদা, সর্বদা, ত্রিধা, দ্বিধা, শতধা, কিঞ্চিৎ, ক্বচিৎ, বন্ধুবৎ, মাতৃবৎ, তাবৎ (তদ+বৎ), যাবৎ (যদ+বৎ)
১১. বিধ, বী<বিন (বিশেষণ), বান<বতুপ (বিশেষণ), মান<মতুপ (বিশেষণ)-প্রত্যয়
নানাবিধ (নানা+বিধ), মেধাবী (মেধা+বী), জ্ঞানবান (জ্ঞান+বান), বুদ্ধিমান (বুদ্ধি+মান), দ্বিবিধ, চতুর্বিধ (চতুঃ+বিধ), মায়াবী, তেজস্বী (তেজঃ+স্বী), যশস্বী।
নরবাচক: দয়াবান, শ্রদ্ধাবান, ধনবান, শ্রীমান, বুদ্ধিমান, শক্তিমান।
নারী বাচক: বুদ্ধিমতী, রূপবতী, ভাগ্যবতী, পুণ্যবতী।
১২. য>ষ্ণ্য (বিশেষ্য), অ+য=আ-প্রত্যয়
সাহিত্য (সহিত+য), দৈত্য (দিতি+ষ্ণ্য/য), মনুষ্য (মনুঃ+য), সৌন্দর্য (সুন্দর+য), শৌর্য (শূর+য), ধৈর্য (ধীর+য), পার্বত্য (পর্বত+য), বৈদ্য (বেদ+য), সৌভাগ্য, সাম্য (সাম+য), কাব্য (কবি+য), মাধুর্য (মধু+য), প্রাচ্য (প্রাচী+য), সভ্য (সভা+য), আলস্য, আভিজাত্য, আতিশয্য, আনুগত্য, আধিক্য, চাপল্য, পার্থক্য (পৃথক+য), বার্ধক্য (বৃদ্ধ+য), স্বাস্থ্য (সুস্থ+য), অন্ত্য (অন্ত+য), কাব্য (কবি+য), ঐক্য (এক+য), দারিদ্র্য (দরিদ্র+য), বৈচিত্র (বিচিত্র+য), দৈত্য (দিতি+য), বৈশিষ্ট্য (বিশিষ্ট+য), সৈন্য (সেনা+য)।
১৩. ম /ময়-প্রত্যয়
পঞ্চম (পঞ্চ+ম), সপ্তম, অষ্টম, দশম, তন্ময়, বাক্সময়, মৃন্ময়, চিন্ময়।
১৪. র /ল /শ /শো /সাৎ /শালী-প্রত্যয়
মধুর (মধু+র), হাতল (হাত+ল), মুখর (মুখ+র), শীতল, বৎসল, শীতল, মাংশল, কর্কশ, প্রায়শ, ক্রমশ, ধূলিসাৎ, আত্মসাৎ, ধনশালী, ফলশালী, লোমশ (লোম+শ)।
সংস্কৃত থেকে ই-যোগে তদ্ভব
কৃষ্ণ>কানাই, সত্য>সত্যি, যজ্ঞ>যজ্ঞি, বৈদ্য>বদ্যি, পৃষ্ঠ>পিঠ, মৃত্তিকা>মিট্টি>মাটি, অভ্যন্তর>ভিতর, পট্টালী>পুঁটলি, ঘটিকা> ঘটি, বাটী>বাড়ি, সীতা>সিঁতি। সংখ্যাবাচক শব্দে ঈ-প্রত্যয় লেখা হয়। এসব শব্দ ই-প্রত্যয় দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন: চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অঅষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ষোড়শী।
ই-প্রত্যয়: বাঁশি, ধ্রুপদি, রেশমি, হৈমন্তি, অক্ষি, অগ্নি, পিপাসি, ফাল্গুনি, বন্ধকি, বন্ধনি, বেগুনি, কৃষি, রুচি, চাষি, ঘসি, চুষি, চুরি, হাসি, ফিরি, চালাকি, হিসাবি, হিসেবি, দোকানি, জুয়াড়ি, পাহাড়ি, পুঁথি, ঘাতি, বনবাসি, ব্যয়ি, রাত্রি, লেখনি, রেশমি, জেদি, তেজি, দরদি, মেজাজি, দোকানি, ভাঁড়ামি, ভাঁড়ারি, তাঁতি, পণ্ডিতি, ডাকাতি, জাকাতি, জমিদারি, দেশি, বিলাতি, বেনারসি, মনিপুরি, সিংগাপুরি, বুড়ি, বোষ্টমি, রেশমি, পশমি, বাদামি, বেগুনি, ঘটি, সহচরি, রাখালি, দালালি, মেয়াদি, বসতি, পিতা, সিংহ, ক্ষিতি, বণিক, দিক, ব্যক্তি, ভূমি, ভক্তি, স্মৃতি, রবি, শিক্ষা, রাত্রি, গাড়ি, বাড়ি, নাড়ি, বিবাহ, বিপদ, শাড়ি, শিশু, শিলা, শিল্প, শিথিল, বৃত্তি, পালকি ইত্যাদি। সংখ্যাবাচক তিন, ত্রিশ, উনিশ, পঁচিশ, চল্লিশ, আশি, কোটি।
দেশি শব্দ: চটি, বাখারি, ঢেঁকি, ডিঙি, ঢিল, ঝিঙা, মুড়ি, চাটাই, চিঙড়ি, ঝিনুক, খেঁদি, মেকি, খুকি, লাঠি, চিত, বলিহারি, কচি, ছুটি, মেকি, উতি, ছাই, কুড়ি, ফিঙে।
প্রাদেশিক শব্দ: চাচি, পাগলি, বুড়ি, বোষ্টমি, মামি, নানি, দাদি, ভাবি, কাকি, বউদি, মাসি।
বিদেশি শব্দ: ইমান, ইদ, গরিব, গ্রিন, সেনচুরি, ফার্মেসি, জংগি, হাজি, বাকি, জিহাদ, শহিদ, তির, তিরন্দাজ, বন্দি, বিমা, বরগি, চিন, পানজেরি, নবি, পরি, শহিদ ইত্যাদি।
একক শব্দ, বিভক্তি ও নির্দেশক বাদে অর্থ দাঁড়ালে ঈ-কার ঠিক থাকবে। যেমন: নীলাভ, নীলিমা, সমীচীন, শ্রীকান্ত , নদীটি, নদীগুলো ইত্যাদি)। তবে দুটি শব্দ একশব্দে পরিণত হওয়ার সময় প্রথম শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে সেটি ই-কার হয়। যেমন: স্ত্রীবাচক>স্ত্রিবাচক, নদীকূল>নদিকূল, পল্লী সাহিত্য>পল্লিসাহিত্য ইত্যাদি।
সংস্কৃত নারী বাচক শব্দ: নারী, নদী, তরুণী, জননী, শালী, স্ত্রী, হরিণী, যুবতী, সুন্দরী, কুমারী, মায়াবী, কিশোরী ইত্যাদি।
সংস্কৃত ধাতুপ্রত্যয় /কৃৎপ্রত্যয়
অ/অং, আ, অচ, অন, অপ, অনট, অনীয়, ক্ত, ক্তি, তব্য, তৃচ, নক, য, নিন, ইন, অল, ইষ্ণু, বর, র, উক, শানচ। একটি অর্থবোধক সংস্কৃত ক্রিয়ার পরে সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক সংস্কৃত শব্দ (বিশেষ্য বা বিশেষণ) তৈরি হয়। যেমন:
১. অ, অক /ণক, অণ>অণট, অন>অনট, অৎ, অয় (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
উদ্ভিদ (উদ+ভিদ), কারক (কৃ+অক), করণ (কৃ+অণ), যৌবন (যুব+অন), চলৎ (চল+ অৎ), জয় (জি+অয়), অধ্যয়ন (অধি+অয়ন), করণীয় (কৃ+অনীয়), ভাষাবিদ, পরিষদ, সংসদ, বিদ্যুৎ, সম্রাট (সম +রাজ), স্নেহ (স্নিহ+অ), ক্রোধ (ক্রধ+অ), আদর (আদৃ+অ), হর্ষ (হৃষ+ অ), বর্ষ (বৃষ+অ), সর্প (সৃপ+অ), চোর (চুর+অ), ধর (ধৃ+অ), প্রচ্ছদ (প্রছদ+অ), পরিচ্ছদ (পরিছদ+অ), নায়ক (নী+ অক), পাঠক (পঠ+অক), যাজক (যজ+অক), নাশক (নশ+ অক), ধারক (ধৃ+অক), খাদক (খাদ+ অক), নিন্দুক (নন্দ+অক), স্মারক (স্মৃ+ অক), সম্পাদক (সম্পাদি+অক), উৎপাদক (উৎপাদি +অক), জনক, চালক, স্তাবক, পাচক (পচ+ অক), ছেদক (ছিদ+অক), লেখক (লিখ+অক), মরণ (মৃ+অণ), স্মরণ (স্মৃ+অণ), বর্ষণ (বৃষ+অণ), ভরণ (ভূ+অণ), হরণ (হৃ+অণ), গমন (গম+অন), শ্রবণ (শ্রু+ অন), দর্শন (দৃশ+অন), ভবন (ভূ+অন), দান (দা+অন), জ্ঞান (জ্ঞা+অন), নয়ন নে+অন), চয়ন (চি+অন), বর্দ্ধন (বৃধ+অন), স্থান (স্থা+অন), ভ্রমণ (ভ্রম+অন), পালন (পাল+অন), বহন, নন্দন (নন্দ+অন), তড়িৎ (তড়+ইৎ), সৎ (অস+অৎ), ভয়, ক্ষয়, ক্রয়, নিশ্চয়।
২. অয়ন, অনীয় (ক্রিয়া থেকে বিশেষ্য/বিশেষণ)-প্রত্যয়
বরণীয় (বৃ+অনীয়), দর্শনীয় (দৃশ+অনীয়), পানীয় (পা+অনীয়), শ্রবণীয় (শ্রু+অনীয়), পূজনীয় (পূজ + অনীয়), অর্চনীয় (অর্চ+অনীয়), গ্রহণীয় (গ্রহ্+অনীয়), বন্দনীয় (বন্দ্+অনীয়), শোচনীয় (শুচ+ অনীয়), লোভনীয় (লূভ+অনীয়), রমণীয় (রম+অনীয়), রক্ষণীয় (রক্ষ+ অনীয়), মোহনীয় (মুহ+অনীয়), প্রার্থনীয় (প্র+অর্থ+অনীয়), প্রয়োজনীয় (প্র+যুজ+অনীয়) মাননীয় (মন+নিচ+অনীয়), গমনীয় (গম+ অনীয়), শ্রবনীয় (শ্রু+অনীয়), আদরণীয় (আদৃ+অনীয়)।
৩, আ, আন /আনো-প্রত্যয়
কৃপা (কৃপ+আ), উদ্যান (উৎ+আন), সংজ্ঞা (সমজ্ঞ+আ), লীপসা (লভ+আ), ত্বরা, পীড়া, সেবা, ক্রীড়া, শিক্ষা, দীক্ষা, শ্রদ্ধা, প্রজ্ঞা, পিপাসা, জিজ্ঞাসা, জানানো (জানা+আন), শোনানো।
৪. ইষ্ণু-প্রত্যয়
চলিষ্ণু (চল+ইষ্ণু), ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।
৫. ঈ /ইন /ণিন-প্রত্যয়
পায়িন (পা+ইন)>পায়ী, বাদী (বদ+ইন), স্থায়ী (স্থা+ইন), দায়ী (দা+ ইন), ভাবী (ভাব+ইন), ত্যাগী (ত্যজ+ইন), মন্ত্রী (মন্ত্র+ইন), যন্ত্রী (যন্ত্র+ইন), পরিশ্রমী (পরিশ্রম+ ইন), কারী (কৃ +ইন), ভেদী (ভিদ+ইন)।
৬. উক-প্রত্যয়
ভাবুক (ভূ/ভৌ+ইক), জাগরূক (জাগৃ+/জাগর+উক)।
৭. কর /কার-প্রত্যয়
ভয়ংকর, শুভংকর, দিবাকর, পুষ্টিকর, ভাস্কর, চিত্রকর, প্রভাকর, গ্রন্থকার, শাস্ত্রকার, চর্মকার, কর্মকার, ভাষ্যকার, স্বর্ণকার।
৮. য ধাতু থেকে (বিশেষ্য), যা /ক্যপ-প্রত্যয়
ভৃত্য (ভৃ+য), শাস্+য-শিষ্য, কার্য, সহ্য, লভ্য, হত্যা (হন+যা), পরিচর্যা (পরিচর+যা), বিদ্যা (বিদ+যা), শয্যা (শী+যা), কার্য (কৃ+য), ধার্য (ধৃ+য), ত্যাজ্য (ত্যজ+য), শ্রাব্য (শ্রু+য), পাচ্য (পচ+য), ভাগ্য (ভজ+য), হাস্য (হস+য), যোগ্য (যুজ+গ), দেয় (দা+য), পেয় (পা+ য), হেয় (হা+য), জেয় (জি+য), বিধেয় (বিধা+য), গম্য (গম+য), লভ্য (লভ+য)।
৯. ত /ক্ত (ক্রিয়াবিশেষণ), তা /তৃচ (ধাতু থেকে বিশেষ্য), তা/তৃণ, তি /ক্তি (ধাতু থেকে বিশেষ্য আর ‘তব্য’ বিশেষণ), তার—তৃ, তু/তৃ-প্রত্যয়
কৃত (কৃ+ত/ক্ত), জেতা (জি+তা/তৃণ), বস্তু (বস+তু) উক্ত (বচ+ত), মুক্ত (মুচ+ত), সিক্ত (সিচ+ ত), ভুক্ত (ভুজ+ত), ভক্ত (ভজ+ত), ক্লান্ত (ক্লম+ত), উপ্ত (বপ+ত), গত (গম +ত), মত (মন+ ত), রত (রম+ত), নত (নম+ত), হত (হন+ত), ভীত (ভী+ত), ক্রীত (ক্রী+ত), হৃত (হৃ+ত), জিত (জি+ত), মুগ্ধ (মুহ+ত), দগ্ধ (দহ+ক্ত), লব্ধ (লভ+ত), ছিন্ন (ছিদ+ত), ভিন্ন (ভিদ+ত), মগ্ন (মসট+ত), নষ্ট (নশ+ত), দৃষ্ট (দৃশ+ত), সৃষ্ট (সৃজ+ত), গৃহীত (গৃহ+ইত), পঠিত (পঠ+ইত), লিখিত (লিখ+ইত), বিদিত (বিদ+ইত), বেষ্টিত (বিষ্ট+ইত), লুণ্ঠিত (লুণ্ঠ+ইত), শিক্ষিত (শিক্ষ+ইত), চলিত, পতিত, ক্ষুধিত, চূর্ণ (চুর+ ত), জাত (জন+ত), দত্ত (দা+ত), সুপ্ত (স্বপ+ত), দাতা (দা+তা), মাতা (মা+তা), পিতা (পা+তা), ক্রেতা (ক্রী+তা), নেতা (নী+তা), জেতা (জি+তা), শ্রোতা (শ্রু+ তা), কর্তা (কৃ+তা), বক্তা (বচ+তা), স্রষ্টা (সৃজ+তা), যোদ্ধা (যুধ+তা), বোদ্ধা (বুধ+তা), পরিণেতা (পরিনী+তা/তৃণ), কর্তা (কৃ+তা), মতি (মন+তি), গতি (গম+তি), খ্যাতি (খ্যা+তি), গীতি (গৈ+ তি), ইতি (ই+তি), শ্রুতি (শ্রু+তি), স্তুতি (স্তু+তি), ভক্তি (ভজ+তি), উক্তি (বচ+তি), মুক্তি (মুচ+ তি), ভ্রান্তি (ভ্রম+তি), স্মৃতি (স্মৃ+তি), দৃষ্টি (দৃশ+তি), নীতি (নী+তি), শক্তি (শক+তি), সিদ্ধি (সিধ+তি), বুদ্ধি (বুধ+তি), কর্তব্য (কৃ+তব্য), দ্রষ্টব্য (দৃশ+তব্য), দাতব্য (দা+তব্য), কর্তব্য (কৃ+তব্য), গন্তব্য (গম+তব্য), জ্ঞাতব্য (জ্ঞা+তব্য), বক্তব্য (বচ+তব্য), তন্তু (তন+তু), সেতু (সি+তু), পিতৃ/পিতা (পা+তৃ), মাতৃ/মাতা (মা+তৃ), শ্রোতা (শ্রু+তৃ), কর্তা/কতৃ (কৃ+তৃ), ভ্রাতা/ভ্রাতৃ (ভ্রাজ+তৃ), ক্রেতা (ক্রী+তৃ), নেত্র (নী+ত্র), শাস্ত্র (শাস+ত্র), বস্ত্র (বস+ত্র)।
১০. না/মান/শান/শানচ-প্রত্যয়
বর্তমান (বৃৎ+মান), বিশ্ব (বিশ+ব), ক্ষিপ্র (ক্ষিপ+র), তৃষ্ণা (তৃষ+না), বর্দ্ধমান (বৃধ+ মান), দৃশ্যমান (দৃশ+মান), বিদ্যমান (বিদ+মান), চলমান (চল+মান), দীপ্যমান (দীপ+মান), ক্ষুদ্র (ক্ষুদ+র)।
বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়
আন, আনা, আনি, আলা, রয়ালা, কর, খানা, খোর, গর, গিরি, চা, চি, দান, দানি, দার, নবিস, নামা, স্তান, পনা, সা, সে, বাজ, বন্দি, সই। একটি অর্থবোধক বিদেশি শব্দের পরে বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আরেকটি অর্থবোধক বিদেশি শব্দ তৈরি হয়। যেমন:
১. আনা (বিশেষ্য), আনি/য়ানি (বিশেষ্য), ওয়ান (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বিবিআনা (বিবি+আনা), হিন্দুআনি (হিন্দি+আনি/য়ানি), গাড়োয়ান (গাড়ি+ওয়ান), সামিআনা, মুনসিআনা, বাবুয়ানা, গরিবআনা, ঘরানা, হিন্দুআনি, বাবুআনি, সাহেবিআনি, বিবিআনি, দারোয়ান (দ্বার+ওয়ান), বারোয়ান, কেচোয়ান।
২. অলা /ওয়ালা (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বাড়িওয়ালা (বড়ি+ওয়ালা), বাড়িআলা (বাড়ি+অলা), গাড়িআলা, বাঁশিঅলা, মাছআলা, দুধআলা, দিল্লিআলা, গোয়ালা, ফেরিআলা, চুড়িআলা, কাবলিআলা, দাঁড়িয়ালা।
৩. গর/কর (বিশেষ্য)
সওদাগর (সওদা+গর), বাজিগর/বাজিকর, কারিগর/কারিকর, জাদুকর/জাদুগর।
৪. খানা (বিশেষ্য), খোর (বিশেষণ)-প্রত্যয়
কাচারিখানা (কাচারি+খানা), নেশাখোর (নেশা+খোর), ছাপাখানা, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, ঘুষখোর, গাঁজাখোর, বিড়িখোর, মদখোর, জুয়াখোর।
৫. গিরি (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
দাদাগিরি (দাদা+গিরি), দিদিগিরি, বাবুগিরি, সাধুগিরি, নেতাগিরি।
৬. চা /চি (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
বাগিচা (বাগি+চা), তবলচি, নলিচা, ডেগচি, বাবুর্চি, ধুনুচি, মশালচি।
৭. তর /উচ্চারণ তরো-প্রত্যয়
এমনতর (এমন+তর), কেমনতর, যেমনতর
৮. দানি/দার/দারি (বিশেষণ)-প্রত্যয়
পানদানি (পান+দানি), খবরদার (খবর+দার/দারি), ফুলদানি, কলমদানি, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার, মজুমদার, আড়তদার, তাঁবেদার, পাহারাদার, মজুদদার, তালুকদার, তরফদার, হাবিলদার, দফাদার, খবরদার।
৯. নবিশ, নামা-প্রত্যয়
শিক্ষানবিশ (শিক্ষান+বিশ), কাবিননামা (কাবিন+নামা), নকলবিশ, হিসাববিশ, হাসাননামা।
১০. পনা-প্রত্যয়
ছেলেপনা (ছেলে+পনা), গিন্নিপনা, বেহায়াপনা, দুরন্তপনা।
১১. বাজ (বিশেষ্য), বাজি (বিশেষণ), বন্দ /বন্দি-প্রত্যয়
কলমবাজ (কলম+বাজ), নজরবন্দ (নজর+বন্দ/বন্দি)।
কলমবাজি, গলাবাজ, ধান্দাবাজ, ধোঁকাবাজ, চাপাবাজ, মামলাবাজ, ফটকাবাজ, ফন্দিবাজ, ফাঁকিবাজ, চাঁদাবাজ, চালবাজ, জবানবন্দি, ফাইলবন্দি, কারাবন্দি।
১২. সা/সে, সই (মতো-বিশেষণ), সই (সহি/স্বাক্ষর), স্তান (বিশেষ্য)-প্রত্যয়
পানসা/পানসে (পানি+সা/সে), জুতসই (জুত+সই), পাকিস্তান (পাক+স্তান), কালসে, মানানসই, চলনসই, টেকসই, মাপসই, প্রমাণসই, টিপসই>টিপসহি, নামসই>নামসহি, হিন্দুস্তান, আবগানিস্তান, গুলিস্তান, তুর্কিস্তান।
0 comments:
Post a Comment