এক অন্যরকম উত্তরপত্র

Tuesday, 4 April 2017

পারিভাষিক শব্দ

পারিভাষিক শব্দ


অভিধানে পরিভাষার অর্থ সংক্ষেপার্থ শব্দ। অর্থাৎ যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাই পরিভাষা। সাধারণত পরিভাষা বললে এমন শব্দ বা শব্দাবলি বোঝায় যার অর্থ পণ্ডিতগণের সম্মতিতে স্থিরীকৃত হয়েছে এবং যা দর্শন বিজ্ঞানের আলোচনায় প্রয়োগ করলে অর্থবোধে সংশয় ঘটে না। অন্যভাবে বলা যায়, সুনির্দিষ্ট সংক্ষেপার্থ সংশয়মুক্ত শব্দই হলো পরিভাষা। সহজভাবে বললে, বিশেষ ভাষা। ইংরেজি শব্দের স্বাদ, গন্ধ, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র, সম্পর্ক, অর্থ ইত্যাদি অনুসারে বাংলা শব্দে রূপ দেয়া হয় তাকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমন : Oxygen-অম্লজান, Act-আইন, Farm- খামার।
বিশিষ্ট তিন ভাষাবিদের অভিমত
সৈয়দ আলী আহসান: বাংলাদেশের প্রতি প্রকৃতির দিকে এবং বোধগম্যতার দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পরিভাষা নির্মাণ করতে হবে। যেখানে আরবি ফারসির প্রয়োগ সমীচীন সেখানে আরবি, ফারসি এবং যেখানে সংস্কৃতের প্রয়োজন সেখানে সংস্কৃত-এটাই আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত।
সৈয়দ আলী আহসানের পরিভাষা নীতি—যে বিদেশি শব্দগুলোর অতিরিক্ত প্রয়োগে একটি সবল এবং সুষ্ঠুরূপ নিয়েছে সেগুলোর পরিবর্তন না করা। জটিল বৈজ্ঞানিক শব্দ যেগুলোর কোন প্রতিরূপ আমাদের ভাষায় নাই >সেগুলো অবিকৃত রাখা। যেগুলো ব্যাখ্যা চলে এবং ব্যাখ্যা করলেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়-একমাত্র সেগুলোরই প্রতিশব্দ নির্মাণ করা।
মুহম্মদ আব্দুল হাই: যতটা সম্ভব বাংলা ভাষার ধর্ম, তার শ্রুতিমাধুর্য এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনের দিক লক্ষ্য রেখে সংস্কৃত ও আরবি ভাষার শব্দ মূলের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর অভিমত: বাংলা গদ্যের সাহিত্যিক ব্যবহারের প্রারম্ভ থেকেই পরিভাষার জন্য সংস্কৃতের সাহায্য লওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি যে বাংলা ভাষার এই ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ্য করে আমরা একদম সংস্কৃত বর্জন করতে পারি না। সেইরূপ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করে আরবির ফারসিও আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না।
বাংলা পরিভাষা নির্মাণের ইতিহাস
১৭৭২ সালের ১৫ই আগস্ট প্রতি জেলায় দেওয়ানি বিচারের জন্য মফস্বলে দেওয়ানি আদালত স্থাপিত হয়। ১৭৭৫ সালে স্থাপিত হয় কলকাতায় সুপ্রীম কোর্ট। ১৭৯৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করেন। ওই আইনের রেগুলেশন খাতে সরকার ইচ্ছামত পরিবর্তন না করতে পারে সে ব্যাপারে নির্দেশ থাকে। প্রতিটি রেগুলেশন মুদ্রিত এবং দেশি ভাষায় অনূদিত হবারও নির্দেশ থাকে। এই আবশ্যিক অনুবাদের মাধ্যমে এদেশে আইনের অনুবাদ শুরু হয়। ফলে ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৯৭-৯৮ সাল পর্যন্ত জেন্টু কোড, অর্ডিন্যান্স অভমনু, এ ডাইজেস্ট অব হিন্দুল (১৭৭৬-১৭৯৮) প্রণয়নে সংস্কৃত থেকে ইংরেজি পরিভাষা নির্মাণের গোড়াপত্তন হয়। বাংলায় পরিভাষা নির্মাণের গোড়াপত্তন হয় ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে। ১৭৮৪ সালে জনাথান ডানকানের ‘হইবার কারণ ধারার নিয়ম বাংলা ভাষায়’র বাংলা হরফে প্রকাশ হবার মধ্য দিয়েই বাংলা পরিভাষার সূচনা হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত। ১৮৯৪ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে যা ব্যাপক পরিণতরূপ পায়। বিগত দুইশ বছরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পাশাপাশি পরিভাষা নির্মাণে অবদান রেখেছেন ফেলিকস কেরি, জনমেক, উইলসন, পীয়ারসন বৃটন প্রমুখ মনীষী থেকে শুরু করে অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র, বিপিনবিহারী দাস, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, যোগেশচন্দ্র, ড. রঘুবীর, বি এন শীল, সুনীতিকুমার, রাজশেখর বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুধীন্দ্রনাথ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের পরিভাষা
১৯৪৭ সালে পূর্বপাকিস্তান নামকরাষ্ট্র জন্মাবার পর শিশুরাষ্ট্রে ভাষা সংকট দেখা দেয়। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে জিন্নাহর দাম্ভিক ঘোষণা পূর্ববঙ্গবাসীদের মর্মাহত করে। যার পরিণতি ১৯৫২ সালে রক্তাক্ত মহান ভাষা আন্দোলন। অনেক রক্তের বিনিময়ে ১৯৫৬ সালে পশ্চিমা শাসকরা উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। সেদিন পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা ভাষার প্রশ্নে ছিল উত্তপ্ত ও উদ্বেলিত। বাংলা অক্ষর, ভাষা ও ব্যাকরণকে সহজ করার জন্য বাঙালিরা ২টি সংস্থার জন্ম দেয়। বাংলা ভাষা পরিকল্পনায় এদুটো প্রতিষ্ঠানই মুখ্য ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাবোর্ড, টেকস্টবুক বোর্ড তখনও গৌণ। এসব প্রতিষ্ঠান নিজনিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো পরিভাষা প্রণয়নে ভূমিকা রাখে। বাংলা একাডেমি (১৯৫৭) ও বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (১৯৬৩)। এদেশে পরিভাষা সম্পর্কিত চিন্তার সূত্রপাত হয়। মুহম্মদ আব্দুল হাই-এর ‘আমাদের পরিভাষা সমস্যায় সংস্কৃতের স্থান’ (১৯৬১) এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আমাদের পরিভাষা সমস্যা’ (১৯৬২) প্রবন্ধ দুটি পরিভাষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে পরিভাষা প্রণয়নে ৩ জন মনীষীর নাম স্মরণযোগ্য। যেমন : আব্দুল হাই, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সৈয়দ আলী আহসান।
পরিভাষার বৈশিষ্ট্য
পরিভাষার ৪টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
যেমন: সর্বজন স্বীকৃতি, স্বাভাবিকতা, বিশিষ্টার্থ প্রয়োগ, আড়ষ্টত্বহীনতা
পরিভাষা নির্মাণের উপায়: ৪টি উপায়ে পরিভাষা নির্মাণ করা যায়।
যেমন:
১. পূর্ব ব্যবহৃত শব্দ ও শব্দাংশ জুড়ে। যেমন: উপাচার্য (Vice Chancellor)
২. পূর্ব ব্যবহৃত শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে। যেমন: বর্ণ (রং)>কিন্তু ব্যাকরণে ধ্বনি সংকেত।
৩. অন্য ভাষা থেকে শব্দ ধার করে। যেমন: Green>সবুজ (ফারসি)-এর বাংলা নাই।
৪. সোজাসুজি নতুন শব্দ নির্মাণ করে। যেমন: Circle>চক্র।
পরিভাষা নির্মাণের রীতি
পরিভাষা নির্মাণের ৩টি রীতি রয়েছে। যেমন:
১. ঋণ: ঋণ শব্দ অপরিবর্তিত থাকাই শ্রেয়। যেমন: অতি প্রচলিত ঋণ শব্দ।
২. ঋণ অনুবাদ: পুরনো শব্দ, অপ্রচলিত শব্দ কিংবা অর্ধবিস্মৃত শব্দই এর উৎস।
  যেমন: epenthesis-অপিনিহিত, en = নি, thisis = হিতি, up = উজান।
৩. নির্মাণ>সংস্কৃত, আরবি, ফারসি এর উৎস। যেমন: fact-তথ্য।
পারিভাষিক শব্দের নমুনা
১. রসায়ন
Aberration  — বিচ্যুতি
Absolute   — পরম/ খাঁটি/আসল
Bronze    — তামা
Extraction  — নিষ্কাশন
Hydrogen  — উদজান
Nitrogen   — যবক্ষারজান
Neutron    — নিষ্ক্রিয় কর্মা/ তড়িৎ বিহীন কথা
Oxygen    — অম্লজান
৩. পদার্থ বিদ্যা
Arc              — চাপ
Axis           — অক্ষ
Axis of rotation    — ঘূর্ণাক্ষ
Cell             — সেল
Central force  — কেন্দ্রিক বল
Chance        — দৈব
Inlet        — প্রবেশ পথ
৪. ভূবিদ্যা
Ablation          — ক্ষয়
৫. মৃৎবিজ্ঞান
Buffer elements     — নিরপেক্ষ উৎপাদন
Bulk density       — আকারের ঘনত্ব
Calcium          — ক্যালসিয়াম
Calcium carbonate — খড়িমাটি
Capillary force — কৈশিক শক্তি

৬. তথ্য গণিত
Absolute      — স্বকীয়
Applied statistics — ফলিত বা ব্যবহারিক তথ্য গঠিত
Job evaluation — কার্যের মূল্যায়ন

৭. গণিত শাস্ত্র
Eccentr Icity       — রাশি/রাশিমালা
Expression        — সসীম
Fundamental rules   — মূল নিয়ম
Integral number     — পূর্ণসংখ্যা
৮. রাষ্ট্র বিজ্ঞান
Knave           — প্রতারক
Legal            — বৈধ
Nationality        — জাতীয়তা

বর্ণভিত্তিক পারিভাষিক শব্দের নমুনা
A
Absent         — স্থত, গরহাজির
A.C           — খ্রিস্টপূর্ব
A/C           — হিসাব
Academy       — বিদ্যাপীঠ
Act            — আইন
Auxiliary       — সহায়ক
Average        — গড়, গড়পড়তা
B
By-law         — উপধারা, উপবিধি
Back-ground     — পটভূমি
Back-bone      — মেরুদণ্ড
B.C           — খ্রিস্টপূর্ব
Bearer         — বাহক
Bill            — মূল্যপত্র
Blacklist        — দুষ্ট সূচি
Breath         — শ্বাস-প্রশ্বাস
C
Cable          — তার
Coin           — মুদ্রা
Collection       — আদায়, সংগ্রহ
Colony         — উপনিবেশ, সঙ্ঘ
Complemen      — পূরণ, প্রতিপূরণ
Complex        — জটিল, মিশ্র
Compliment     — সৌজন্য
Control Room    — নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
Crisis          — সংকট
Criminal Law     — দণ্ডবিধি
Forum         — ভাস্থল, ফোরাম, বিচারালয়
Fund          — তহবিল
Cyclic          — আবর্ত, বৃত্তস্থ
Cyclone        — ঘূর্ণিঝড়
D
Data           — উপাত্ত, তথ্য
Deal           — ব্যবসায়ের চুক্তি
Duplication      — অনুলিপি, অনুবর্তন
Dairy          — দোহশালা
Dead lock      — অচলাবস্থা
Dealer         — পরিবেশক, ব্যাপারি
Duty           — কর্তব্য, কার্য, শুল্ক
Dynamite       — বিস্ফোরক বিশেষ
E
Economic       — মিতব্যয়ী, অর্থনৈতিক
Exhibition       — প্রদর্শনী, মেলা
Expert         — বিশেষজ্ঞ, দক্ষ
Eyewash        — ধোঁকা
Eye evidence    — চাক্ষুষ প্রমাণ
F
Fact           — প্রকৃত ঘটনা, তথ্য
Factor          — কারণ, উৎপাদক, গুণক
Faculty         — অনুষদ, মনোবৃত্তি
Fair Price       — ন্যায্যমূল্য
Farce          — প্রহসন, হাসির নাটক
Farm          — খামার
Fascism        — ফ্যাসিবাদ
Formula        — সূত্র
Fulltime         — পূর্ণকাল
Magnet         — চুম্বক
Machine        — যন্ত্র, কল
Machinetools     — যন্ত্রপাতি
Magazine       — সাময়িকপত্র, বারুদখানা
G
Gazette        — ঘোষণা
Gazetted        — ঘোষিত
Guilty          — অপরাধী
Guide-Book     — নির্দেশিকা, নির্দেশ গ্রন্থ
Guard          — রক্ষী, প্রহরী
H
Hand-Bill       — ইশতেহার, প্রচারপত্র
Hostile         — শত্রুভাবাপন্ন
Hostess        — বাড়িওয়ালা
House Wife     — গৃহিণী/গিন্নি
Hygiene        — স্বাস্থ্যবিদ্যা

I
Irrigation        — সেচ
Initial          — প্রারম্ভিক
Introduction      — ভূমিকা
Invigilator       — পরীক্ষা-পরিদর্শক
Invitation        — আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ
Issue          — প্রেরণ, প্রচার, প্রদান
J
Job           — কাজ, চাকরি, কর্ম
Jail            — কারাগার, জেল
Judge          — বিচারক
Jointventure     — যৌথ প্রচেষ্টা
Journalism      — সাংবাদিকতা
K
Kingdom        — রাজ্য
Knight          — সম্ভ্রান্ত, বংশীয়
Kindness        — দয়া
Keeper         — রক্ষক
Kiln           — ভাটি
Knowledge      — কৌশল, জ্ঞান
L
Liver           — যকৃত
Lawyer         — আইনজ্ঞ
Laboratory      — পরীক্ষাগার
Leisure         — অবকাশ
Landing        — অবরোহণ, অবতরণ
Land Lord      — জমিদার, ভূস্বামী
M
Magistrate       — শাসক
Muscle         — পেশী
Memo          — স্মারক
Urban          — পৌর, শহর
Urine          — প্রস্রাব, মূত্র
Urgent         — জরুরি
Union          — সংযোগ, মিল, সম্মেলন
Urinal          — প্রস্রাবের স্থানে, মূত্রাধার
N
Nation         — জাতি
National        — জাতীয়
Nationality       — জাতীয়তা
Nationalization    — জাতীয়করণ
Notice          — বিজ্ঞপ্তি
O
Oath           — শপথ
Overseer       — উপদর্শক
P
Paid           — পরিশোধিত
Para           — অনুচ্ছেদ
Panel          — নামসূচি
Parliamentary    — সংসদীয়
Parliament       — সংসদ

Q
Qualification     — গুণ, যোগ্যতা
Quarter         — চতুর্থাংশ, সিকি; পাদ
Quarterly       — ত্রৈমাসিক
Quotation       — মূল্যজ্ঞাপন, উদ্ধার
R
Receipt         — রসিদ
Revenue        — রাজস্ব
Respiration      — শ্বাস, শ্বসন
Report         — প্রতিবেদন
Ratio          — অনুপাত
Reagent        — বিকারক
S
Salary          — বেতন
Salesman       — বিক্রয়কর্মী
Sanction        — অনুমোদন
Script          — লিপি
Science        — বিজ্ঞান
Secretary General — মহাসচিব
T
Technical       — কারিগরি
Treasurer       — কোষাধ্যক্ষ
Tribal          — উপজাতীয়

U
University       — বিশ্ববিদ্যালয়
United Front     — যুক্তফ্রন্ট
Universal       — সার্বিক, সর্বজনীন
Workshop       — কারখানা
Worship        — পূজা, ধর্মকর্ম
Writer          — লেখক, লিপিকার মুরশি
Writing Off      — অবলকন

V
Visit           — সফর
Volcano        — আগ্নেয়গিরি
Volunteer       — স্বেচ্ছাসেবক
Voucher        — রশিদ
Voluntary       — স্বেচ্ছাক্রিয়া
Vanity Bag      — প্রসাধন ব্যাগ
Vegetable       — সবজি
Venue         — স্থান
Virus          — জীবাণু
Visa           — প্রবাসাজ্ঞা
Visiting-Card     — সাক্ষাৎপত্র, দর্শনপত্র

W
Weather         — আবহাওয়া
X
X-ray          — রঞ্জনরশ্মি
Y
Year           — বৎসর
Year-Book      — বর্ষপঞ্জি
Yearly          — বার্ষিক, বাৎসরিক
Yours Sincerely  — বিশ্বস্ত, ভবদীয়
Yieldto         — নতি স্বীকার করা

Z
Zone          — অঞ্চল, বলয়, মণ্ডল
Zoo           — চিড়িয়াখানা
Zeal For        — উৎসাহ
Zealous For     — উৎসাহী
Zest For        — অনুরাগ

বাক্যসংকোচন /এককথায় প্রকাশ

বাক্যসংকোচন /এককথায় প্রকাশ


বাক্যসংকোচন হলো বহুপদের সমষ্টিতে একটি পদ। বহুপদকে একপদে পরিণত করাকে বাক্যসংকোচন বলে। অথবা কথার অর্থপূর্ণ সংকোচিত ভাবই বাক্যসংকোচন। মানুষের মনে ভাবের সীমা নাই। আর এই ভাবকে ভাষায় প্রকাশ করে মানুষ তার ভাব-আবেগ-প্রয়োজন আর কর্তব্য পূরণ করে। বাক্যসংকোচনের মাধ্যমে ভাবগুলো সহজে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার জন্য বাক্যের বহুপদকে একপদে পরিণত করাকে বাক্য সংকোচন বলে। যেমন: এক সঙ্গে যারা যাত্রা করে —সেটিকে আমরা এককথায় বলি ‘সহযাত্রী’।

বাক্যসংকোচনের প্রয়োজনীয়তা
অল্পকথায় মনের ভাব প্রকাশ করতে, কথাকে সহজ, সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও শক্তিশালী করতে, নতুন শব্দ তৈরি করতে এবং সময় বাঁচাতে বাক্যসংকোচনের গুরুত্ব অনেক।

বাক্যসংকোচনের নিয়ম
বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে বাক্যসংকোচন করা যায়। যেমন:
১. প্রত্যয়যোগে : যা চলছে—চলন্ত (কৃৎ প্রত্যয়—চল+অন্ত), বেনারসের তৈরি—বেনারসি (তদ্ধিত প্রত্যয়—বেনারস+ই)।
২. সমাসযোগে : জায়া ও পতি—দম্পতি (দ্বন্দ্ব সমাস), ত্রি ভুজের সমাহার—ত্রিভুজ (দ্বিগু সমাস), মহান যে নবি—মহানবি (কর্মধারয় সমাস), চিরকাল ব্যাপিয়া সুখি—চিরসুখি (দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস), দশ আনন যার—দশানন (বহুব্রিহী সমাস), মরণ পর্যন্ত— আমরণ (অব্যয়ীভাব সমাস), অন্য+ দেশ— দেশান্তর (নিত্যসমাস)।
৩. উপসর্গযোগে : বৃষ্টির অভাব—অনাবৃষ্টি (অনা+বৃষ্টি)।
৪. অনুকার শব্দযোগে : নূপুরের ধ্বনি—নিক্কণ।
৫. ভিন্ন শব্দযোগে : লোক গণনা — আদমশুমারী।

বাক্যসংকোচনের কিছু নমুনা
অনুকরণ করবার ইচ্ছা          — অনুচিকীর্ষা
অনুকরণ করা যায় এমন         — অনুকরণীয়
অনুমানের যোগ্য              — অনুমেয়
অনুষ্ঠানের যোগ্য              — অনুষ্ঠেয়
অনুসন্ধান করবার ইচ্ছা          — অনুসন্ধিৎসা
অনুকরণ করতে ইচ্ছুক          — অনুচিকীর্ষু
অনুসরণ করা হয়েছে এমন        — অনুসৃত
অতি উচ্চ হাসি—             — অট্টহাস্য
অত্যন্ত প্রফুল্ল                 — উৎফুল্ল
অহনের অপর ভাগ            — অপরাহ্ণ
অন্বেষণ করা হয়েছে যার         — অন্বিষ্ট
অর্ধেক সম্মত                — নিমরাজী
আকাশ পৃথিবীর সঙ্গে যেখানে মিশেছে — দিগবলয়, চক্রবাল
আট মাসে জন্মেছে যে           — আটাশে
আগামিকালের পরের দিন         — পরশ্ব, পরশু
আঙুলে পরার অলংকার          — অঙ্গুরীয়
আপনাকে কেন্দ্র করে যার চিন্তা     — আত্মকেন্দ্রিক

ইন্দ্রের অশ্ব                  — উচ্চৈঃশ্রবা
ইন্দ্রের সারথি                — মাতলি
ইতিহাস জানেন যিনি           — ঐতিহাসিক
ইতিহাস বিষয়ে অভিজ্ঞ যিনি      — ইতিহাস বেত্তা
ঈষৎ উষ্ণ                  — কবোষ্ণ, কদুষ্ণ
ঈষৎ মধুর                  — আমধুর
ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী          — আস্তিক
ঈশ্বর-প্রেরিত দূত              — পয়গম্বর
ঈষৎ বক্র                  — বঙ্কিম
ঈষৎ পাণ্ডুবর্ণ                — ধূসর
উপকার করার ইচ্ছা            — উপচিকীর্ষা
উপকার করতে ইচ্ছুক           — উপচিকীর্ষু
উপকারে বিনিময়ে উপকার        — প্রত্যুপকার
উড়তে পারে যে              — উড়ুক্কু
উচ্ছিষ্ট নয় যা               — অনুচ্ছিষ্ট
উদগিরণ করা হয়েছে যা         — উদগীর্ণ
উষ্ণতা পরিমাপের যন্ত্র           — তাপমান
ঊর্ধ্ব ও বক্রভাবে যা গমন করে    — তরঙ্গ
ঊর্ধ্ব থেকে নিম্নে গমন          — অবতরণ
ঋণ গ্রহণ করে যে             — অধমর্ণ
ঋণ দান করে যে             — উত্তমর্ণ
একই গুরুর শিষ্য              — সতীর্থ
একই মায়ের পুত্র              — সহোদর
একই সময়ে বর্তমান            — সমসাময়িক
একান্ত গুপ্ত                  — নিগুঢ়
একটি পক্ষের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ — পক্ষপাত
একই অর্থবিশিষ্ট শব্দ            — প্রতিশব্দ
ঐশ্বর্যের অধিকারী              — ঐশ্বর্যবান
ঔষধ পাওয়া যায় যেখানে        — ঔষধালয়
ওজন পরিমাপের যন্ত্র            — তুলাদণ্ড
ওষ্ঠ ও অধর                — ওষ্ঠাধর
ক্ষমা করবার ইচ্ছা             — তিতিক্ষা
ক্ষমার যোগ্য                 — ক্ষমার্হ
কর্ণ পর্যন্ত                   — আকর্ণ
কণ্ঠ পর্যন্ত                  — আকণ্ঠ
কোকিলের ডাক               — কুহু
খাবার ইচ্ছা                 — বুভুক্ষা
খেয়া পার করে যে             — পাটনি
খেলায় পটু যে                — খেলোয়াড়
খরচের হিসাব নাই যার         — বেহিসাবি
গৃহে থাকে যে                — গৃহস্থ
গভীর রাত্রি                  — নিশীথ, নিশুতি
গভীর নিদ্রায় মগ্ন              — নিষুপ্ত
ঘামের দ্বারা সিক্ত              — ঘর্মাক্ত
ঘোরানো হচ্ছে যা              — ঘূর্ণ্যমান
ঘাম ঝরছে যার               — গলদঘর্ম
ঘর নাই যার                — হা ঘরে
ঘণ্টাধ্বনিতে যে সময় নির্দেশ করে   — ঘড়িয়াল
চক্ষুর প্রসাধন দ্রব্য             — অঞ্জন
চোখে যা দেখা যায়
বা চক্ষুর দ্বারা যা দৃষ্ট বা লব্ধ     — চাক্ষুষ
চিরকাল মনে রাখার যোগ্য        — চিরস্মরণীয়
চোখের পাতা                 — নিমিষ, নিমেষ, পলক
চক্ষুর দ্বারা গৃহীত              — গোচর
চক্ষুর সম্মুখে                 — প্রত্যক্ষ
চিত্রের অবিকল নকল           — প্রতিচিত্র
চার খণ্ডে চেরা               — চৌচির
ছবি আঁকার বস্ত্র              — চিত্রপট
ছবি আঁকে যে                — চিত্রকর
ছল করে কান্না               — মায়াকান্না
ছড়াছড়ির ফলে নষ্ট হবার অবস্থা    — ছয়লাপ
ছেদনের যোগ্য                — ছেদ্য, ছেদনীয়
জয় করবার ইচ্ছা              — জিগীষা
জানবার ইচ্ছা                — জিজ্ঞাসা
জলে চরে যে                 — জলচর
জয় উপলক্ষে নির্মিত স্তম্ভ         — জয়স্তম্ভ
ঝন ঝন শব্দ                — ঝনৎকার
ঝাড়ামোছা করা হয় যার দ্বারা     — ঝাড়ন
টলে পড়ে যাবার মতো অবস্থা      — টলায়মান
টোল পড়েনি যাতে             — নিটোল
ঠাকুরের পূজার মণ্ডপ           — ঠাকুর দালান
ঠাকুরের ভাব                — ঠাকুরালি
ঠেঙিয়ে যারা দুস্যুতা করে        — ঠ্যাঙাড়ে
ডুব দিতে পটু                — ডুবুরি
ডানা আছে যার              — পক্ষী
ডানার অভ্যন্তর               — পক্ষপটু
ঢাকের প্রবল আওয়াজ           — ঢক্কানিনাদ
তরঙ্গ আছে যার              — তরঙ্গিণী
তন্তু বয়ন করে যে            — তন্তুবায়
তিন কালের ঘটনা যিনি দেখতে পান — ত্রিকালদর্শী
তলস্পর্শ করা যায় না           — অতলস্পর্শী
দেখবার ইচ্ছা                 — দিদৃক্ষা
দেখতে ইচ্ছুক                 — দিদৃক্ষু
দূর করা হয়েছে যাকে           — দূরীকৃত
দাড়িগোফ জন্মায়নিক যার        — অজাতশ্মশ্রু
দেশকে ভালবাসেন যিনি          — দেশপ্রেমিক
দিনের শেষ ভাগ              — অপরাহ্ণ
দিনের আলোর রাতের অন্ধকারের সন্ধিক্ষণ — গোধূলি
দিনে যে একবার আহার করে      — একাহারী
দান করা উচিত              — দাতব্য
দগ্ধ করা যায় না যা           — অদাহ্য
ধনুর দ্বারা যে যুদ্ধ বা শিকার করে — ধানুকী
ধ্যানের যোগ্য যিনি             — ধ্যেয়
ধূলায় পরিণত                — ধূলিসাৎ
ধূম উদগিরণ করছে যা          — ধূমায়মান
ধুনকের শব্দ                 — টংকার, বিষ্ফার
ধ্যানে মগ্ন যিনি               — ধ্যানমগ্ন, ধ্যানস্থ
নিতান্ত দগ্ধ হয় যে সময়ে        — নিদাঘ
নাটকের অভিনয় হয় যেখানে      — নাট্যশালা
নাই অলংকার যার             — নিরলংকার
নয়রত্নের সমাহার              — নবরত্ন
নতুন চাল খাবার অনুষ্ঠান        — নবান্ন
নীল আভা যার               — নীলাভা
পঙ্কে জন্মে যে                     — পঙ্কজ
পান করবার ইচ্ছা             — পিপাসা
পরের সৌভাগ্য দেখলে যে কাতর হয় — পরশ্রীকাতর
প্রিয় বাক্য বলে যে নারী         — প্রিয়ংবদা
পরস্পর আলিঙ্গন              — কোলাকুলি
ফল পাকলে যে গাছ মরে যায়     — রষধি
ফল প্রসব করে যা             — ফলপ্রসূ
ফল ভোজন করে যে           — ফলাহারী
বৃদ্ধি পাচ্ছে যা                — বর্ধিষ্ণু
বশ হয়েছে যে                — বশীভূত, বশংগত
বিশেষভাবে জানেন যিনি         — বিশেষজ্ঞ
বিজ্ঞান জনেন যিনি            — বৈজ্ঞানিক, বিজ্ঞানী
বুদ্ধের উপাসনা করেন যিনি       — বৌদ্ধ
বক্রভাবে গমন করে যে         — ভুজগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম
বিদেশে থাকে যে              — প্রাবাসী
বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান              — বিদ্রোহ
ভিক্ষার অভাব                — দুর্ভিক্ষ
ভূষণাদির শব্দ                — শিঞ্জন, টুংকার
ভ্রমরের শব্দ                 — গুঞ্জন
ভেতর থেকে গোপনে ক্ষতিসাধন     — অন্তর্ঘাত
ভ্রমণ করান হচ্ছে যাকে          — ভ্রাম্যমাণ
ভবিষ্যতে যা ঘটবে             — ভবিতব্য
মরবার ইচ্ছা                — মুমূর্ষা
ময়ূরের কণ্ঠের মতো রং যার      — ময়ূরকণ্ঠী
মমতা নাই যার               — নির্মম
মুষ্টির দ্বারা পরিমাপের যোগ্য       — মুষ্টিমেয়
যা বৃদ্ধি পাচ্ছে                — বর্ধিষ্ণু
যা ক্ষয় পাচ্ছে                — ক্ষয়িষ্ণু
যা নিবারণ করা কষ্টকর         — দুর্নিবার
যা চুষে খাবার যোগ্য           — চুষ্য, চোষ্য
যা আসবে                  — আগামী
যা হবে                   — ভাবি
যা দমন করা যায় না          — অদম্য
যা বলা হয়নি                — অনুক্ত
রাজ্যর সিংহাসন               — রাজ্যপাট
রাজপথে যে ডাকাতি করে        — রাহাজান
রব শুনে আসে যে             — রবাহুত
রাত্রির মধ্যভাগ               — মহানিশা
রৌদ্র ও ছায়ার সংযোগ      — ধূপছায়া
রুচির যোগ্য                 — রোচ্য
লাভ করার ইচ্ছা              — লিপ্সা
লক্ষ্য করার যোগ্য             — লক্ষণীয় [স্ত্রীলোকের]
লাঠি খেলায় যে পটু            — লেঠেল, লাঠিয়াল
লুঠ করে যে                 — লুটেরা
লবণ তৈরি করে যে            — লাবণিক
লকলকে জিহ্বা যার             — লেলিহান
শুনবার ইচ্ছা                 — শুশ্রূষা
শত্রুকে বধ করে যে            — শত্রুঘ্ন
শুভক্ষণে জন্মেছে যে            — ক্ষণজন্মা
শোক নাই যার               — অশোক
শিশুকাল থেকে                — আশৈশব
শব্দ শুনে যে লক্ষ্যভেদে সমর্থ      — শব্দভেদী
শ্রমের দ্বারা যে জীবিকা নির্বাহ করে  — শ্রমজীবী
সহ্য করা যার স্বভাব           — সহিষ্ণু
সরোবরে জন্মে যা             — সরোজ, সরসিজ
স্বামী নাই যার               — বিধবা
সমুদ্রের গর্জন ধ্বনি             — কলল
সাগর সমেত পৃথিবী            — সসাগরা-পৃথিবী
সামান্য উষ্ণ                 — কবোষ্ণ
সহজে যা হজম হয়            — সুপাচ্য
সিংহের গর্জন                — নাদ
হস্তীর চিৎকার                — বৃংহণ, বৃংহিত
হরিণের চামড়া                — অজিন
হরণ করার ইচ্ছা              — জিহীর্ষা
হৃদয়ে গমন করে যা            — হৃদয়ঙ্গম
হাতের লেখা পুস্তকের খসড়া       — পাণ্ডুলিপি
হাস্য-রসাত্মক নাটক            — প্রহসন
হরণ করতে ইচ্ছুক             — জির্হীষু
হৃদয় বিদীর্ণ করে যা           — হৃদয়বিদারক