এক অন্যরকম উত্তরপত্র

Wednesday 3 May 2017

উক্তি / Speech / Narration

উক্তি /Speech /Narration

প্রত্যয়ের মাধম্যে ‘উক্তি’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ‘Öবচ্+ক্তি=উক্তি’। উক্তি মানে কথা বলা। কোন কথোকের বাককর্মের নামই উক্তি।

উক্তির প্রকরণ
উক্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
১. প্রত্যক্ষ উক্তি : বক্তার হুবহু কথাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে /Direct Speech। যেমন: রহিম বলল, ‘ফারুক এখন বাড়ি আছে।’
২. পরোক্ষ উক্তি : এক বক্তার কথা অন্য বক্তা পরিবর্তন করে বলাকে পরোক্ষ উক্তি/Indirect Speech বলে। যেমন : রহিম বলল যে ফারুক তখন বাড়ি ছিল।

উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম
প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে রূপান্তর করাকেই উক্তি পরিবর্তন বলে। ইংরেজিতে উক্তি পরিবর্তনের কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কিন্তু বাংলায় তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। অর্থের দিকে দৃষ্টি রেখে উক্তির পরিবর্তন করতে হয়।
তবে ইংরেজি- Narration এর নিয়ম-কানুনের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। ইংরেজির মতো জোড় ঊর্ধ্বকমা না বসে একক ঊর্ধ্বকমা বসে। যেমন:
১. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথাগুলো উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখতে হয়। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না এবং সংযোজক ‘যে’ দ্বারা বক্তার কথা সংযোজিত হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : মিতু বলল, ‘আমি পুরস্কার পেয়েছি।’
পরোক্ষ উক্তি  : মিতু বলল যে সে পুরস্কার পেয়েছে।
২. ইংরেজিতে প্রত্যক্ষ উক্তির প্রধান বাক্যে যদি অতীত কালের ক্রিয়াপদ থাকে তবে পরোক্ষ বাক্যে সকল ক্রিয়াপদই অতীত কালে পরিবর্তিত হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : রহিম বলল, ‘ফারুক এখন বাড়ি আছে।’
পরোক্ষ উক্তি  : রহিম বলল যে ফারুক তখন বাড়ি ছিল।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি বললেন, ‘আমি বাজারে যাব।’
পরোক্ষ উক্তি  : তিনি বললেন যে তিনি বাজারে যাবেন।
৩. প্রত্যক্ষ উক্তিতে প্রধান বাক্যের ক্রিয়া বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের হলে পরোক্ষ উক্তিতে অধীন বাক্যের ক্রিয়া যে কোন কালের হতে পারে। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : নাদিরা বলে, ‘আমি ডাক্তার হব।’
পরোক্ষ উক্তি  : নাদিরা বলে যে সে ডাক্তার হবে।
৪. আদেশ অনুরোধ, জিজ্ঞাসা ইত্যাদি বোঝায় এমন প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করতে হলে প্রধান বাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : সে রিভাকে বলল, ‘তোমার নাম কী?’
পরোক্ষ উক্তি  : সে রিভাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করল।
৫. আনন্দ, বিষাদ বা আবেগবাচক প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে কেবল ভাবটি উপযুক্ত ক্রিয়াপদ বা ক্রিয়াবিশেষণের সাহায্যে প্রকাশ করতে হয়। প্রত্যক্ষ উক্তির আবেগ চিহ্ন তুলে দিতে হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : জাকির বলল, ‘বা! আমরা খেলায় জিতেছি।’
পরোক্ষ উক্তি  : জাকির আনন্দের সঙ্গে বলল যে তারা খেলায় জিতেছে।
৬. প্রত্যক্ষ উক্তি চিরন্তন সত্য হলে ইংরেজি নিয়মের মত পরোক্ষ উক্তির কালের কোন পরিবর্তন ঘটে না। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : শিক্ষক বললেন, ‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।’
পরোক্ষ উক্তি  : শিক্ষক বললেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।
৭. প্রত্যক্ষ উক্তির সর্বনামগুলোর পুরুষ পরোক্ষ বাক্যের অর্থানুসারে পরিবর্তিত হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি এ কাজ করেছ।’
পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বললেন যে আমি সেই কাজ করেছি।
৮. প্রত্যক্ষ উক্তি পরিবর্তনের সময় যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায় তাহলে বন্ধনীর মধ্যের ঠিক অর্থটি বুঝিয়ে দিতে হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : দীপা শম্পাকে বলল, ‘আমি ভাত খাই নাই।’
পরোক্ষ উক্তি  : দীপা শম্পাকে বলল যে সে (দীপা) ভাত খায় নাই।
৯. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বর্ণনাকারীর ভাষা যদি সাধু হয় মূলবক্তার ভাষার সাধু আবার চলিত হলে তা চলিত হবে। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : মদন বলিল, ‘আমি বাড়ি যাইব না।’
পরোক্ষ উক্তি  : মদন বলিল সে বাড়ি যাইবে না।
১০. বাক্যের অর্থ সঙ্গতিরক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে সর্বনামপদের পরিবর্তন করতে হয়।
১১. অর্থ সঙ্গতিরক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে ক্রিয়াপদের পরিবর্তন করতে হয়।
১২. প্রত্যক্ষ থেকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে হলে ইংরেজির ন্যায় বাংলাতেও কতকগুলো শব্দ পরিবর্তিত হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ      প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ
এই        সেই        ইহা        তাহা
এই সকল    সেই সকল    এখন       তখন
এইরূপে      সেইরূপে          আজ       সেদিন
গতকাল      আগের দিন   আগামী কাল  পরের দিন
আসা       যাওয়া      এখানে      সেখানে

উক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে বাক্যের রূপান্তর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাঙ্গলা ব্যাকরণ’ থেকে নমুনা দেয়া যায়। যেমন:
১. যে উক্তিতে বক্তার কথা যথাযথ বর্ণিত হয় তাহা প্রত্যক্ষ উক্তি (Direct Narration)। এতদ্ভিন্ন অন্য প্রকারের উক্তিকে পরোক্ষ উক্তি (Indirect Narration) বলা হয়।
২. প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করা যেতে পারে। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ লোকটা বলিলেন, “হে বালক, তোমার পিতার নাম কি?”
পরোক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ লোকটি বালকটিকে তাহার পিতার নাম জিজ্ঞাসা করিলেন।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : ভিখারী তাহাকে বলিল, “খোদা তোমার মঙ্গল করুন।”
পরোক্ষ উক্তি  : ভিখারী খোদার নিকট তাহার মঙ্গল প্রার্থনা করিল।
৩. ইংরেজিতে প্রত্যক্ষ উক্তি উদ্ধারচিহ্নের  (Quotation mark) মধ্যে ব্যবহার করিতে হয়। যেমন: He says, “I shall not go there. Ó ইংরেজিতে অনুকরণে আমরা লিখিতে পারি। যেমন: সে বলিল, “আমি সেখানে যাইব না।”
ইংরেজি হইতে বাঙ্গলায় এই চিহ্নের ব্যবহার প্রথা যদিও চলিয়াছে, তথাপি অনেক লেখক প্রত্যক্ষ উক্তি বুঝাইতে উদ্ধারচিহ্ন ব্যবহার করেন না।
৪. প্রত্যক্ষ উক্তি পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তিত করিতে হইলে, ইংরেজিতে that (যে) প্রভৃতি কতকগুলো শব্দ বক্তার উক্তির পূর্বে বসাইতে হয়। যেমন: Abu says, ÒI am ill” ইহা পরোক্ষ উক্তিতে হইলে Abu says that he is ill-এইরূপ কোনও বাঁধাবাঁধি নিয়ম নাই।
ক) আবু বলে যে সে অসুস্থ অথবা আবু বলে সে অসুস্থ, এইরূপ দুই প্রকারেই বলিতে পারি।
৫. ইংরেজিকে প্রত্যক্ষ উক্তির প্রধান বাক্যে যদি অতীত কালবোধক ক্রিয়াপদ থাকে, তাহা হইলে পরোক্ষ বাক্যে সমস্ত ক্রিয়াপদকেই অতীত কালে পরিবর্তন করিতে হয়। যেমন : Abu said that he had done it বাঙ্গালায় খণ্ড বাক্যের ক্রিয়া প্রধান বাক্যের ক্রিয়াপদের কাল অনুসারে সকল স্থলে পরিবর্তিত হয়। যেমন : তিনি বলিয়াছিলেন যে তিনি কলিকাতায় যাইবেন।
৬. বাক্যের অর্থের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া উক্ত পরিবর্তন কালে পরোক্ষ উক্তিতে সর্বনামগুলোর পুরুষ (Person) পরিবর্তন করিতে হয়। সর্বনামের পুরুষের পরিবর্তন বাঙ্গালাতে ইংরেজির মতনই হইয়া থাকে। যেমন :
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিয়াছিলেন, “তুমি এই কাজ করিয়াছ।”
পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিয়ছিলেন যে আমি সেই কাজ করিয়াছি।
৭. প্রত্যক্ষ উক্তিতে যদি আদেশ, অনুরোধ, জিজ্ঞাসা প্রভৃতি বোঝায়, তাহা হইলে, যাহা আদেশ, অনুরোধ বা জিজ্ঞাসা করা হইল তাহার ভাবার্থ লইয়া পরোক্ষ উক্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক বাক্যে অর্থ প্রকাশ করিতে হয়। যেমন:
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি হারুনকে বলিলেন, “আপনি কবে আসিলেন?”
পরোক্ষ উক্তি  : হারুন কবে আসিলেন তাহা তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে বলিলেন, “তুমি এখান হইতে যাও।”
পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে সেখান হইতে চলিয়া যাইতে বলিলেন।
৮. প্রত্যক্ষ হইতে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করিতে হইলে ইংরেজির ন্যায় বাঙ্গালাতেও কতকগুলো শব্দ সাধারণত পরিবর্তন করিয়া লেখা হয়। যেমন :
প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ      প্রত্যক্ষ      পরোক্ষ
এই        সেই        এইরূপে      সেইরূপে
আসা       যাওয়া      আজ       সেইদিন
এখন       তখন       ইহা        তাহা
আগামী কাল  পরের দিন   এই সকল    সেই সকল
প্রত্যক্ষ উক্তি হইতে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করিলে যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায়, তাহা হইলে যাহাতে ঠিক অর্থ বুঝিতে পারা যায়, সেইজন্য বন্ধনীর মধ্যে তাহা বুঝাইয়া দিতে হইবে। যেমন : নুরু বলিলেন যে তিনি (নুরু) ভাত খান নাই।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?”
পরোক্ষ উক্তি  : তিনি আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : অজয় বলল, “আমি এখন বেশ সুস্থ আছি।”
পরোক্ষ উক্তি  : অজয় বলল যে সে তখন বেশ সুস্থ ছিল।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : পথিক বলল, “তুমি কি আমাকে গ্রামে যাবার পথ বলে দিতে পার?”
পরোক্ষ উক্তি  : পথিক আমাকে গ্রামে যাবার পথ বলে দিতে পারি কিনা জিজ্ঞাসা করল।
প্রত্যক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ বলল, “আহা কী মধুর সঙ্গীত!”
পরোক্ষ উক্তি  : বৃদ্ধ আনন্দ প্রকাশ করে বলল যে সঙ্গীত বড়ই মধুর হয়েছে।

বাক্যের পদক্রম

বাক্যের পদক্রম

ভাষার মূল উপাদান বাক্য আর বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। বাক্য তৈরি করতে শব্দ ও শব্দ বসালেই হবে না। সার্থক শব্দক্রম বা পদক্রম করেই বাক্য বানাতে হয়। একটি সার্থক বাক্যের পদক্রমে তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকা জরুরি। যেমন: আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি ও যোগ্যতা। বাক্যের সার্থক পদক্রমকে কৌশলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। যেমন :

ক) আকাঙ্ক্ষা : সম্পূর্ণ বাক্য হলো আকাঙ্ক্ষা।
বাক্যের অর্থ পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য এবং বাক্যকে সম্পূর্ণ করার জন্য এক পদের পর অন্য পদ বা খণ্ডবাক্য শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা হলো বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণভাবে বুঝার জন্য পরবর্তী পদ শোনার ইচ্ছা। যেমন: বল বীর বল ...এর পরের কথা না বললে আকাঙ্ক্ষাহীন বাক্য হবে। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে...। সে লেখাপড়া কোরে...। বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এবং বাক্যকে সম্পূর্ণ করার জন্য, প্রথম বাক্যের সঙ্গে ‘ঘোরে’ এবং দ্বিতীয় বাক্যের সঙ্গে ‘ভাল চাকরি করবে বা জ্ঞানী হবে’ খণ্ড বাক্যের দরকার হয়।

খ) আসত্তি : শৃংখলাবদ্ধ শব্দ বা পদ হলো আসত্তি।
শৃঙ্খলাবদ্ধ শব্দ/পদকে আসক্তি বলে। বাক্যের অর্থসঙ্গতিরক্ষার জন্য সুশৃংখল পদবিন্যাসকেই আসত্তি বলে। আসত্তি হলো বাক্যের স্পষ্ট মনোভাব প্রকাশের জন্য পদসমূহকে যথাস্থানে সাজানো। কবিতার ক্ষেত্রে আসক্তির হেরফের হতে পারে। হয়েছেও। ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, তরী সে ছোটো /আমার ধানে সোনার গিয়েছে ভরি’, লেখলে বাক্যের আসত্তি থাকে না। আসত্তি তখনই থাকে যখন লেখা হয়, ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী /আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।

গ) যোগ্যতা : অর্থর ও ভাবের সমন্বয় হলো যোগ্যতা।
অর্থ ও ভাবের সমন্বয়কে যোগ্যতা বলে। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ অর্থগত ও ভাবগত মিল বন্ধনকে যোগ্যতা বলে। ‘মসজিদে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়’ লিখলে বাক্যের যোগ্যতা হারায় তাই বাক্যের যোগ্যতা রক্ষা করার জন্য লিখতে হবে, ‘মসজিদে নামাজ কায়েম করা হয়’। যোগ্যতা হলো বাক্যে ব্যবহৃত পদসমূহের অর্থ ও ভাবের সেতুবন্ধন। বিভিন্নভাবে বাক্যের যোগ্যতা হারাতে পারে। শব্দের অবস্থান এবং বাক্যের অবস্থান ঠিক রেখে বাক্যে যোগ্যতা ঠিক রাখা যায়। যেমন :
i. শব্দের অবস্থান ঠিক রাখা
ii. বাক্যের অবস্থান ঠিক রাখা
১. শব্দরূপান্তরে খেয়াল রাখা 
২. শব্দদ্বিত্ব ব্যবহার ঠিক রাখা
৩. বাহুল্য বা বচন দোষমুক্ত রাখা
৪. নির্দেশকের ব্যবহার ঠিক রাখা
৫. সন্ধির ব্যবহার ঠিক রাখা
৬. সমাসের ব্যবহার ঠিক রাখা
৭. উপসর্গের ব্যবহার ঠিক রাখা
৮. বিভক্তির ব্যবহার ঠিক রাখা
৯. প্রত্যয়ের ব্যবহার ঠিক রাখা
১০. চিহ্নের ব্যবহার ঠিক রাখা
১১. পক্ষের ব্যবহার ঠিক রাখা
১২. বিসর্গের ব্যবহার ঠিক রাখা
১৩. সমোচ্চারিত শব্দের ব্যবহার ঠিক রাখা
১৪. ক্রিয়ার সঠিক ব্যবহার    
১৫. প্রমিত বানানের দিকে খেয়াল রাখা 
১. কারকের ব্যবহার ঠিক রাখা
২. বাচ্যের ব্যবহার ঠিক রাখা
৩. এককথায় প্রকাশের ব্যবহার ঠিক রাখা
৪. প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার ঠিক রাখা
৫. বাক্যের শৃংখলা বজায় রাখা
৬. বাগধারার ব্যবহার ঠিক রাখা
৭. রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা বজায় রাখা
৮. প্রাঞ্জলতা (সহজবোধ্য বাক্য) বজায় রাখা
৯. অর্থব্যক্তি বজায় রাখা
১০. গুরুচণ্ডালী মুক্ত রাখা
১১. যতির ব্যবহার ঠিক রাখা


i. শব্দের অবস্থান ঠিক রাখা
শব্দের অবস্থান ঠিক রেখে বাক্যের গুণ রক্ষা করা যায়। বাংলাবাক্যের বড়গুণ শব্দকে বিভক্তি যুক্ত করে যেখানে সেখানে বসানো যায় তবুও শব্দ অবস্থানগত কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। যেমন:
১. শব্দরূপান্তরে খেয়াল রাখা
শব্দরূপান্তর খেয়াল রেখে পদ সাজাতে হয়। যেমন: দীন>দৈন্য>দীনতা হয় কিন্তু যদি দৈন্যতা ব্যবহার করা হয় তাহলে ব্যর্থ বাক্যে পরিণত হয়। কারণ একই শব্দে ‘তা ও য-ফলা ব্যবহার করে বিশেষ্য হয় না। এছাড়া এগুলোই ভুল শব্দ-মাধুর্যতা, উৎকর্ষতা, সৌজন্যতা, সমসাময়িক, উদ্বেলিত, চোখের দৃষ্টিশক্তি, মাতাহারা।
২. শব্দদ্বিত্বের ব্যবহার ঠিক রাখা
একই শব্দের দ্বিত্ব ব্যবহারে বহুবচন প্রকাশ পায় আবার অর্থহীন হয়ে যায়। অর্থহীন হলে সেটি হবে ব্যর্থ পদক্রম। যেমন: শুধুমাত্র, কেমলমাত্র, অশ্রুজল, ঘামজল, ভুলত্রুটি, ভুলভ্রান্তি। বিভিন্ন প্রকার শব্দ বা পদ দুবার ব্যবহার করে শব্দ বানাতে পারি। কিন্তু অর্থের দিকে খেয়াল করতে হয়। যেমন: ফলাফল (ফল + অফল) শব্দটি ঠিক ব্যবহার কিন্তু এর প্রতিশব্দ হিসেবে লেখা হয় ফলশ্রুতিতে’ তাহলে শব্দটি হবে ভুল। কারণ ‘ফলশ্রুতি’ অর্থ ‘শ্রবণ’ কোন বিষয়ের ফল নয়। ‘ভাষাভাষী’ অর্থ কোন একটি ভাষা ব্যবহারকারী। তাই ভাষাভাষীর পূর্বে কোন ভাষার নাম উল্লেখ করে লিখলে তা হবে ভুল। যেমন: বাংলা ভাষাভাষী। এমন কিছু দ্বিত্বশব্দ তৈরি করা হয় যা ভুল। যেমন: ভেদাভেদ, গুণাগুণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। যেমন: ভেদ+অভেদ বা গুণ+অগুণ। এদের অপপ্রয়োগ আজ প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘ভেদাভেদ ভুলে গেছে’ যা ভুল। আবার বলা হচ্ছে ‘আমাদের পন্যের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন’। আসলে হবে ‘ভেদ বা গুণ’। শব্দদ্বিত্ব কোন সময় একবচন আবার কোন সময় বহুবচন প্রকাশ পায়। এরা আলাদা বসে আবার হাইফেনযুক্ত হয়ে বা একশব্দেও বসতে পারে। তাই বাক্যে ব্যবহারের সময় এদিক খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় কবিগণ দুটি বিশেষ্য ব্যবহার করেন যা ত্রুটিপূর্ণ বলে অনেকেই সমালোচনা করেন। কিন্তু কবি যদি তাঁর ব্যবহৃত দুটি শব্দের প্রথম বিশেষ্য দিয়ে বিশেষণ এবং দ্বিতীয় বিশেষ্য দিয়ে বিশেষ্য বুঝাতে পারেন তাহলে ব্যবহার ত্রটিপূর্ণ হবে না। যেমন: তনু ও দেহ একই অর্থ অর্থাৎ শরীর অর্থ বহন করে তবে এখানে তনু— নমনীয়/কমনীয়/সরু অর্থ প্রকাশ করছে। শুভ্রসাদা=শুভ্র ও শাদা একই অর্থ বহন করে তবে এখানে শুভ্র—ধবধবে /অতিশয় শাদা/উজ্জ্বল অর্থ প্রকাশ করছে। কিন্তু অশ্রুজল দিয়ে তেমন বোঝায় না। অশ্রু অর্থ চোখের জল কিন্তু অশ্রু দিয়ে জলের কোন বিশেষণ প্রকাশ করছে না। ঘামজলে তার শার্ট ভিজে গেছে না হয়ে হবে ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে। অশ্রুজলে তার কপল ভিজে গেছে না হয়ে হবে অশ্রুতে তার কপল ভিজে গেছে।
৩. বাহুল্য দোষমুক্ত রাখা/বচন ব্যবহার ঠিক রাখা
শব্দের সংখ্যাগত ও পরিমাণগত ধারণাই (এক, অনেক বা কম, বেশি) বচন। সংখ্যা বা পরিমাণের ধারণা যদি একবার বহু দিয়ে বুঝানো যায় তাহলে দুবার বহুবচনচিহ্ন ব্যবহার করার দরকার হয় না। সংস্কৃত বা ইংরেজি বাক্যে সকল ছাত্রছাত্রীবৃন্দ বা All students বসে কিন্তু বাংলাতে এমন ব্যবহার ত্রুটিপূর্ণ। শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমেও বহুবচন প্রকাশ করা হয় তাই শব্দদ্বিত্বের পরে বহুবচনচিহ্ন বসে না। যেমন: ‘পাকা পাকা কথাগুলো’ ছোট ছোট গ্রামগুলো, ছোট ছোট সব গ্রামগুলো ইত্যাদি। বিভিন্নভাবে শব্দদিত্ব হতে পারে। যেমন:
বিশেষ্য—লোকে লোকে, দ্বারে দ্বারে।
বিশেষণ—ছোট ছোট, বড় বড়।
সর্বনাম—যারা যারা, কে কে।
যোজক—যখন যখন, সহচর-অনুচর, বন্ধু-বান্ধব।
ক্রিয়া—লেনদেন, বকাঝকা, খেলাধুলা, লালনপালন, খোঁজখবর, হেঁটে হেঁটে, খেয়ে খেয়ে, বলে বলে।
ক্রিয়াবিশেষণ—ধীরে ধীরে, ফিরে ফিরে, আস্তে আস্তে ইত্যাদি।
৪. নিদের্শকের ব্যবহার ঠিক রাখা
‘টা/টি/খানা/খানি’ ব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে ‘এই’ বা ‘ঐ’ ব্যবহার করা যায় না। যেমন: ‘এই ছেলেটি কার’ না হয়ে হবে ‘এই ছেলে কার বা ছেলেটি কার?’
৫. সন্ধির ব্যবহার ঠিক রাখা
সন্ধি শব্দ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম তবে সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দে সন্ধি করতে হয়। সংস্কৃত ও বাংলা শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ও বাংলা শব্দে সন্ধি না করে আলাদা লেখাই ভালো। উচ্চারণে সুবিধা করতে গিয়ে শব্দকে অশুদ্ধ করা ঠিক নয়। যেমন: লজ্জাস্কর না হয়ে হবে লজ্জাকর /লজ্জাজনক। আবার লিখতে হবে ‘মিশি কালো>মিশকালো, নাতি বউ>নাতবউ, নাত জামাই> নাজ্জামাই, ঘোড়া দৌড়> ঘোড়দৌড়, পিছে মোড়া>পিছমোড়া’ কিন্তু লেখা যাবে না ‘বচ্ছর, কুচ্ছিত, উচ্ছব, ঘোড়গাড়ি’।
৬. সমাসের ব্যবহার ঠিক রাখা
সমাসবদ্ধ শব্দ হলে একশব্দে লিখতে হবে। অথবা মাঝে হাইফেন দিতে হবে।র দিয়ে দুটি শব্দ যুক্ত হলে শব্দ দুটি এ-বিভক্তিযুক্ত হতে হবে। সহ অর্থ বুঝালে ‘স্ব’ না বসে ‘স’ বসে। সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সমাস হয়। সমাসজাত শব্দ ও ব্যসবাক্য একই সঙ্গে বসে না। সমাসবদ্ধ শব্দের বানানে শুধু মাঝের ঈ-কার ই-কার হয়। দুটি শব্দে বিভক্তি/নির্দেশক, প্রত্যয় (ই/ঈ/ইতা-প্রত্যয় বাদে), সন্ধি (বানান পরিবর্তন হয়), উপসর্গ যোগ করলে বানানের এমন কী বর্ণের কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন: নারীকে, নারীতে, নারীটি, নারীগুলো, নারীগণ কিন্তু পরিবর্তন হবে নারিবাচক বা নদিমাতৃক শব্দে। এখানে ‘নারী’+বাচক ও নদি+মাতৃক’ দুটি অর্থবোধক শব্দ)। ‘বনজ’ একটি সমাসজাত শব্দ। এই সূত্র বর্তমানে লেখা হচ্ছে ‘ফলজ’। ‘বনজ’ ব্যাসবাক্য করলে হয় ‘যা বনে জন্মে’। এ জাতীয় বহু সমাসজাত শব্দ রয়েছে। যেমন: জলজ, পঙ্কজ, অগ্রজ ইত্যাদি। কিন্তু ‘ফলজ’ ব্যাসবাক্য করলে হয় ‘যা ফলে জন্মে’ যা ভুল। শুদ্ধ করে লিখতে চাইলে লিখতে হবে ‘ফলদায়িগাছ। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ও ভাতে’ না লিখতে হবে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ও ভাতে’।
অর্থর গঠন অনুসারে শব্দ এককভাবে বা আলাদাভাবে বাক্যে বসে। যেমন: উড়া উড়ি (উড়াউড়ি), হয়না (হয় না), কথানয় (কথা নয়), হয় নি (হয়নি), এমনই (এতই, পরিমাণ, এরকমই), এমনি (অকারণ/শুধু শুধু), একরকম (সংখ্যা), একরকম (কোনভাবে), কোন ভাবে (কোনভাবে), তার পর (after that), তারপর (then তখন), নয় তো (কারণ/সময়), নয়তো (বিকল্প/ সম্ভাব্য, নিশ্চিত/অনিশ্চয়তা), না হয় (না বোধক) নাহয় (বরং নাহলে (অন্যথায় /অথবা /ছাড়া), কেন না (কেনো না বললে), কেননা (যেহেতু)
৭. উপসর্গের ব্যবহার ঠিক রাখা
উপসর্গে হাইফেন বসে না। যেমন: উপ-সচিব। ‘অ’ যদি নাবোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই শব্দের শেষে হীন যুক্ত হয় না। যেমন: অসচেতনহীনভাবে, অক্লান্তি হীনভাবে। ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য। ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য। অক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে। ক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
৮. বিভক্তির ব্যবহার ঠিক রাখা
শব্দের সঙ্গে বিভক্তি বসে পদেরূপান্তরিত হয়। একটি বাক্যে যেমন একাধিক বহুবচন চিহ্ন বাক্যের গুণকে নষ্ট করে তেমনি একটি শব্দে বহু বিভক্তিও (সপ্তমী/ষষ্ঠী) বাক্যের গুণকে নষ্ট করে। সামান্য সচেতনতায় এই দোষ গুণে পরিণত হতে পারে। দুটি বিভক্তি না বসিয়েও কিন্তু বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকে না। একই পদে দুটি বিভক্তি বসে না তবুও ব্যবহার করা হয়। কে একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয় বলে একে তির্যক বিভক্তি বলে। তবে যে কারকেই ব্যবহৃত হোক না কেনো সেটি হতে হবে একবচনে। বহুবচনজাতীয় শব্দে ‘কে’ বসে না। যেমন: তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না। আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে শুটিং করতে হয়েছে। সব পাগোলগুলোকে দিয়ে ক্লাস নেয়। একশব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন: তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। গেলাসে করে দুধ দাও। বস্তুবাচক একবচন পদে কোন বিভক্তি (কে, রে) বসে না। যেমন: ঘড়িকে হাতে দাও। বইকে পড়ো। এই কলমটাকে দিয়ে ভালো লেখা হয়। সংস্কৃত বিভক্তিতে তাহাদিগকে, আমাদিগকে ব্যবহার করা হয়। সংস্কৃত ব্যাকরণে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসে বস্তু বা প্রাণিবাচক কর্তায় ‘কে’ বসানো হচ্ছে। যেমন: বইকে পড়া=বইপড়া, গানকে শোনা=গানশোনা, সাপকে ধরা=সাপধরা, মাছকে ধরা=মাছধর, রথকে দেখা, ভয়কে প্রাপ্ত, কাপড়কে কাঁচা, ভাতকে রাঁধা, নথকে নাড়া, স্বর্গকে প্রাপ্ত ইত্যাদি কিন্তু আমরা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এমন ব্যবহার করি না। শুধু এই বিভক্তিতেই ব্যবহার করে থাকি।
৯. প্রত্যয়ের ব্যবহার ঠিক রাখা
কোন শব্দের সঙ্গে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয় তা খেয়াল রেখেই শব্দ তৈরি করতে হয়। ভুল প্রত্যয়ের ব্যবহারের কারণে বানান ভুল হয়ে যায়। আর বানান ভুল হলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই প্রত্যয় ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়। একই শব্দের সঙ্গে দুটি প্রত্যয়চিহ্ন বসে না। বিভক্তি না দেয়ার কারণে যেমন বাক্যের গুণ নষ্ট হয়ে যায় আবার বেশি দিলেও গুণ নষ্ট হয়ে যায়। যেমন: এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে, তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। তার সঙ্গে আমার সখ্যতা (সখ+য-ফলা+ তা) আছে। এটি তার দৈন্যতা।
১০. চিহ্নের ব্যবহার ঠিক রাখা
∙ সংস্কৃতিতে বিশেষণ ও বিশেষ্য দুটিকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: নর— সুন্দর বালক আর নারী— সুন্দরী বালিকা কিন্তু বাংলাতে বিশেষণকে ঠিক রেখে শুধু বিশেষ্যকে নর বা নারী প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ বাংলায় বিশেষণকে নারী বাচক করার দরকার হয় না। যেমন: সুন্দর বালক এবং সুন্দর বালিকা।
∙ সংস্কৃতিতে দুটি বিশেষ্যকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগলি, আসমা অস্থিরা কিন্তু বাংলাতে দুটি বিশেষ্যের একটিকে নারিচিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগল, আসমা অস্থির ইত্যাদি।
∙ সংস্কৃতিতে ঈ বা ইনি বা নী প্রত্যয়ই একসঙ্গে বসে কিন্তু বাংলায় বসে না। যেমন: অভাগা— অভাগী— অভাগিনী, ননদ— ননদী— ননদিনী, কাঙাল— কাঙালী— কাঙালিনী, গোয়াল— গোয়ালী— গোয়ালিনী কিন্তু বাংলায় অভাগি, ননদি, মায়াবি, কাঙালি, গোয়ালি, বাঘি বা বাঘিনি। তবে ক্লীববাচক শব্দে নী প্রত্যয় যুক্ত করে নারী বাচক শব্দ তৈরি করতে হয়। যেমন: মেধাবিনী, দুখিনী, যোগিনী, মায়াবিনী ইত্যাদি।
∙ সংস্কৃতিতে ক্ষুদ্রার্থবাচক কিছু ক্লীববাচক শব্দকে নর বা নারী বাচক করা যায় যা বাংলাতে সঠিক নয়। যেমন: নাটক— নাটিকা, উপন্যাস— উপন্যাসিকা, পুস্তক — পুস্তিকা, গীতি— গীতিকা ইত্যাদি।
∙ সংস্কৃতিতে নরবাচক শব্দ— বৃক্ষ, নারী বাচক শব্দ— লতার ক্লীববাচক শব্দ— জল আবার হিন্দিতে নরবাচক শব্দ—রুটি আর নারী বাচক শব্দ— দই।
∙ বাক্য দেখে নির্ণয় করতে হয় কোনটি নর আর কোনটি নারী বাচক শব্দ। যেমন: গরু গাড়ি টানে। গরু দুধ দেয়। সে/তিনি গর্ভবতী, সে কৃষিকাজ করে। বাংলায় সংস্কৃতের মতো ব্যবহার না করে এমন করে ব্যবহার করি।রহিমা খুব সুন্দর। সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখক।
১১. পক্ষের ব্যবহার ঠিক রাখা
প্রথমপক্ষ যদি অন্যপক্ষের সঙ্গে একই বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাহলে ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। একশেষ হলে নিয়ম অনুসারে প্রথমে সে, তুমি ও আমি বসে আর ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। আগে কবিতার বাক্যের ক্ষেত্রে কবিগণ পক্ষ অনুসারে ক্রিয়ার ব্যবহার ঠিক রাখেন নাই। যেমন: হাসঁগুলো যায় ভাসি। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই। কারণ সংস্কৃত ‘ভাসিয়া’ থেকে ‘ভাসি’ চলিত হয়েছে। আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না। আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে না। আমি, সে আর তুমি কাজটি করব। সে, তুমি আর আমি কাজটি করব।
১২. বিসর্গের ব্যবহার ঠিক রাখা
বাংলার বিসর্গ একটি বর্ণ তাই বিসর্গের স্থানে কোলন বসানো যাবে না। যেমন: পুন:প্রচার।
১৩. সমোচ্চারিত শব্দের ব্যবহার ঠিক রাখা
উচ্চারণের দিক থেকে এক হলেও অর্থের দিক থেকে ভিন্ন। বাক্যের অর্থ ঠিক রাখতে সমার্থক শব্দের সঠিক ব্যবহার জরুরি। তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে’ লিখলে বাক্যের অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হতে হয় কিন্তু যদি লিখি ‘তারা আমড়াতলায় বসে আমড়া খাওয়ার সময় মালির তাড়া খেয়েছে’ অর্থ সহজ হয়ে যায়।
১৪. ক্রিয়ার ব্যবহার ঠিক রাখা
ক্রিয়ার অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে। যেমন: জিজ্ঞাসিব জনে জনে অথবা জনে জনে জিজ্ঞাসিব অথবা আমি জিজ্ঞাসিব জনে জনে। তবে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারটা প্রচণ্ডভাবে খেয়াল করা উচিৎ। অসমাপিকাকে সমাপিকা করতে দুইটি ক্রিয়া লাগে।
১৫. প্রমিত বানানের দিকে খেয়াল রাখা
ভুল বানান বাক্যের গুণ নষ্ট করে। বানান ঠিক করে কথা বলা বা লেখা রুচিশীল ব্যাপার। সংস্কৃত শব্দকে তদ্ভব করলে এখানে ঈ-কার হয়ে যায় ই-কার। ঊ-কার হয়ে যায় উ-কার। ণ-হয়ে যায় ন। য-ফলা থাকে না। যেমন: বৈশাখী-বোশেখি, সূর্য-সুয্যি, পূর্ব-পুব, প্রাণ-পরান, কৃষাণ-কিষান/কিশান, বর্ণ-বরন, স্বর্ণ-সোনা, সন্ধ্যা-সন্ধে, শূন্য-শুন্যি। সন্দেহযুক্ত শব্দের শেষের-কার ব্যবহার করা। যেমন: মত, মতো। সমাপিকা ক্রিয়া হলে ও-কার প্রথম বর্ণের সঙ্গে যোগ না হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া হলে প্রথম বর্ণের সঙ্গে ও-কার যোগ হয়। উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে লিখিতরূপও এমন হতে পারে। যেমন:সে কাজটি করে। ‘করে’ ক-এর সঙ্গে ও-কার হবে না। কিন্তু সে কাজটি কোরে বাসায় যাবে। ‘করে’ ক-এর সঙ্গে ও-কার যোগ হবে। ও-কার ও উ-কার এর ক্ষেত্রেও উচ্চারিত হবে। আকাশে চাঁদ ওঠে। আকাশে চাঁদ উঠে জোছনা দেয়। সে বাগান থেকে ফুল তোলে। সে বাগান থেকে ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে। কিন্তু শব্দের শেষ বর্ণে যদি আ-কার থাকে তাহলে কোন পরিবর্তন হবে না। পাল তোলা/তুলা সব নাও। যেমন: কুটা-কোটা, খুঁটা-খোটা, শুনা-শোনা। য-ফলা প্রথমে থাকলে এ্যা-কার হয়। যেমন: জ্যান্ত। মাঝে ও শেষে দ্বিত্ব হয়। যেমন: কল্যাণ (কোললান), পদ্য (পোদদো)। আরও বলা যায়, যুক্তবর্ণ ভাঙলে শেষ বর্ণে ও-কার যুক্ত হয়। তবে বিশেষণ থেকে বিশেষ্য তৈরিকৃত শব্দ বাদে যুক্ত বর্ণে য-ফলা ব্যবহার না করা যেতে পারে। যেমন: অর্ঘ্য, লক্ষ্য, অন্ত্য, অন্ত্যমিল, উত্ত্যক্ত, গার্হস্থ্য, সন্ধ্যা, সামর্থ্য, স্বাচ্ছন্দ্য, সৌহার্দ্য, স্বাতন্ত্র্য, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। আবার সংস্কৃত শব্দ বলে, প্রথম বর্ণের পর য-ফলা ব্যবহৃত হয়। যেমন: জ্যেষ্ট, জ্যোষ্ট, জ্যৈষ্ঠ, দ্যুতি, জ্যোৎস্না, দ্যোতনা, ন্যূন ইত্যাদি। সংস্কৃত শব্দের এদের গুরুত্ব আছে কিন্তু বাংলা শব্দে নাই। বিশেষণ থেকে বিশেষ্য করতেও য-ফলা ব্যবহার করা হয়। যেমন: দীন-দৈন্য, বিচিত্র-বৈচিত্র্য। প্রাদেশিক ও বিদেশি শব্দ হলে /ছ/য/ণ/ষ/ঞ্জ/ঞ্চ/ঈ-কার/উ-কার বসে না। যেমন: লুংগি, ডেংগু, ঠান্ডা, ঝান্ডা, লন্ঠন, মিসরি, পসন্দ, নামাজ, ওজু, ইস্টার্ন, স্টোর, ইনজিন, ইনজিনিয়ার, সেনচুরি, তির (ধনুক অর্থে, পাড় অর্থে নয়), অ্যাকাডেমি/এ্যাকাডেমি/একাডেমি, রসুল, নুর ইত্যাদি। সংস্কৃত শব্দে য-ফলা চল আছে কিন্তু ইংরেজি শব্দে নাই তবু লেখা হচ্ছে। যেমন: ইস্যু, টিস্যু, গ্যেটে, স্যার। ইংরেজি কিছু শব্দ আছে যা সিলেবল করে বাংলায় না লেখা হলে বানান গোলমাল মনে হয়। যেমন: Degree>ডিগ্রি>ডিগরি, February>ফেব্রুয়ারি>ফেবরুয়ারি, April>এপ্রিল>এপরিল। ইংরেজি শব্দকে তদ্ভব করে লেখা হচ্ছে। যেমন: হসপিটাল>হাসপাতাল, চকোলেট> চকলেট।
ii. বাক্যের অবস্থান ঠিক রাখা
গদ্যের বাক্যগঠন: কর্তা +কর্ম +ক্রিয়া = আমি ছড়া লেখি।
কাব্যিক বাক্যগঠন
কর্তা+ক্রিয়া+কর্ম              = আমি লেখি ছড়া
ক্রিয়া+কর্তা+কর্ম              = লেখি আমি ছড়া
কর্ম+কর্তা+ক্রিয়া              = ছড়া লেখি আমি
কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়া নাও থাকতে পারে    = ছড়া লেখি
কর্তা দুটি অর্থাৎ সম্বন্ধপদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে সম্বন্ধপদ হলে একটি পদের সঙ্গে ‘র বা এর’ যোগ হয়। তদ্ভব শব্দে সম্বন্ধপদ বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন: আম্রকাননে ডাকছে পাখি মধুর কলতানে। আমের বাগানে ডাকছে পাখি মধুর কলতানে। দুটি কর্মের মধ্যে একটি মূখ্য যার সঙ্গে বিভক্তি বসে না। আর গৌণকর্মের সঙ্গে বিভক্তি বসে। যেমন: আমি রহিমকে কবিতাটি দিলাম। দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি মূখ্য যার সঙ্গে বিভক্তি বসে না। আর গৌণক্রিয়ার সঙ্গে বিভক্তি বসে। যেমন: আমি কবিতা পড়তে পছন্দ করি। বিশেষ বাক্যগঠন (বিশেষ বাক্য বলতে অলংকারপূর্ণ বা চমৎকার কাব্যিক বাক্যকে বোঝায় যা ভুল ব্যবহার নয়)।
বাক্যের প্রথমে সম্প্রসারক+কর্তা+সম্প্রসারক+ক্রিয়াপদ বসবে। যেমন: মনোযোগী কবিরাই রীতিমতো পড়াশুনা করেন। বিশেষণ+সাধারণ বিশেষ্য বসে। যেমন: কানা ছেলের নাম আবার পদ্মলোচন। সর্বনাম বিশেষ্য +নাম বিশেষণ +বিশেষ্য বসে। যেমন: সেই কালো মেয়েটি হারিয়ে গেছে অন্ধকারে। বিশেষণ পদ সাধারণত পদক্রম অনুসারে বিশেষ্যের আগে বসে। যেমন: খাঁটি গরুর দুধ। ‘কী খাঁটি’ প্রশ্ন করলে পাওয়া যায় গরুর দুধ (সংস্কৃত গোদুগ্ধ)। অনেকেই বর্তমানে এই বাক্যকে ভুল গণ্য করে শুদ্ধ করে লেখেন গরুর খাঁটি দুধ। ইংরেজিতে লেখা হয় Fresh Milk| অর্থৎ খাঁটি দুধ। লেখা হয় না Fresh Cow Milk। সাধারণত গরুর দুধই বিক্রি হয়। তাই গরুর খাঁটি লেখার প্রয়োজন হয় না। নারী বাচক বিশেষ্যের গুণ প্রকাশ করতে বিশেষণের সঙ্গে প্রত্যয় যোগ করতে হয় না। যেমন: সুন্দরী বালিকা>সুন্দর বালিকা, মেয়েটি পাগলি>মেয়েটি পাগল, আসমা অস্থিরা>আসমা অস্থির। ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: তারা ধীরে ধীরে হাঁটে। গুণবাচক, পরিমাণবাচক, সংখ্যাবাচক, সংজ্ঞাবাচক, নির্দেশকবাচক, সম্বন্ধবাচক, প্রশ্নবাচক, পরিচিতিবাচক, বিশেষণের বিশেষণবাচক, ক্রিয়াবিশেষণবাচক, সংকোচবাচক সবধরনের বিশেষণ বিশেষ্যের আগে আলাদা বসে। যেমন: সোনালি ধান, অনেক বই, এক টাকা, প্রধান অতিথি, ঢাকাই মসলিন, এই লোকটি, কত বই, কাঠের পুতুল, বিদ্রোহী কবি নজরুল, সবচে দামি বই, ধীরে ধীরে আসো। কিন্তু সমাসবদ্ধ কিছু বিশেষণ বিশেষ্যের আগে একশব্দ হয়। যেমন: নবজাতক, ঘনসবুজ, খাসকামরা, চিরসবুজ, দীর্ঘশ্বাস, ভগ্নদশা।
যোজক: (কি, কেনো, কিভাবে, কেমন, কবে, কোথায়, কখন) আশ্রিত খণ্ডবাক্যের আগে বসলে আশ্রিত খণ্ডবাক্যটি প্রধান খণ্ডবাক্যের পরে বসে। আশ্রিতবাক্য+যোজক শব্দ+প্রধানবাক্য। যেমন: তিনি জানেন না তিনি আমাকে কখন শেখালেন কবিতা। দুটি শব্দের যোগস্থলে যোজক বসিয়ে, একসঙ্গে অথবা হাইফেন দিয়ে শব্দ জোড়া লাগানো যায়। যেমন: ছেলেটি চোখে ও মুখে কথা বলে। ছেলেটি চোখেমুখে কথা বলে। অথবা ছেলেটি চোখে-মুখে কথা বলে। তবে ‘চোখ-মুখে’ লেখা যাবে না। দুটি শব্দেই বিভক্তি বসে। বিশেষ্যের আগে বসে অর্থাৎ বাক্যের প্রথমে বসে। সম্বন্ধপদের পর ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি বা কমা বসে। যেমন: ঘরের মানুষ পরের কাছে থাকে। ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। সম্বন্ধপদ+বিশেষণ+বিশেষ্য বসে। যেমন: নাম ধরে সম্বোধন করলে বাক্যের প্রথমে বা শেষে বসে। যেমন: সাবিত ছড়া খুব ভালো লেখে। ছড়া খুব ভালো লেখে সাবিত। যে শব্দে জোর দিতে হয় শুধু সেই শব্দেই ই/ও যোগ করতে হয়। যেমন: তুমিই কাল আসবে। অথবা তুমি কালই আসবে। তুমি কাল আসবেই। আমিও যাব। এমনই কিছু শব্দ আছে গদ্যর পদ্যে ব্যবহৃত হয়—কখনও/এখনও—কখনো/এখনো। শব্দ-শব্দ যুক্ত করতে ‘ও/আর’ বসে। বাক্য-বাক্য যুক্ত করতে ‘এবং/আর’ বসে। অনেকগুলো বিশেষ্য বা বিশেষণ বা ক্রিয়া ব্যবহার করলে শেষটার আগে ‘ও’ বসে অথবা কমা বসে শেষে ইত্যাদি/প্রভৃতি (বস্তু বসে) ও প্রমুখ (ব্যক্তি হলে) বসে।
১. কারকের ব্যবহার ঠিক রাখা                       
বস্তু ও প্রাণিবাচক শব্দে ‘কে’ বসে না। ব্যক্তির নামের সঙ্গেও ‘কে’ বসে না। সাপুড়ে সাপকে খেলায়। (সাপুড়ে সাপ খেলায়)।রবীন্দ্রনাথকে ভালো করে পড়ো (রবীন্দ্রনাথ ভালো করে পড়ো)।
২. বাচ্যের ব্যবহার ঠিক রাখা
বাচ্যের ক্রিয়ার রূপের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ইংরেজি প্যাসিভ ভয়েজে ক্রিয়া সবসময় পাস্ট পারটিসিপল হয়। বাংলায় ক্রিয়ার+ইত/ষ্ট ইত্যাদি যোগ করে ক্রিয়াকে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া করা হয়। আপনার কি মনে হয় না, বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। সঠিক হবে— আপনার কি মনে হয় না, বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।
৩. এককথায় প্রকাশের ব্যবহার ঠিক রাখা
এককথায় প্রকাশের ব্যবহার ঠিক রাখা দরকার। যেমন : ‘হাতে কলমে শিক্ষা বা ব্যবহারিক শিক্ষা’ যে কোন একটি বাক্য ব্যবহার করলে বাক্যটি শুদ্ধ হবে। পারলে চারিদিকে প্রদক্ষিণ করো-না হয়ে হবে-পারলে চারিদিকে ঘোর বা পারলে প্রদক্ষিণ কর)।সে হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে না হয়ে হবে ‘সে হাতেকলমে শিক্ষা গ্রহণ করেছে বা সে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
৪. প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার ঠিক রাখা
প্রবাদ-প্রবচন হলো অর্থপূর্ণ সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: স্বল্প (অল্পবিদ্যা) ভয়ংকরী, অভাবে চরিত্র (স্বভাব) নষ্ট, মোল্লার দৌড় ঘর (মসজিদ) পর্যন্ত লেখা যাবে না।
৫. বাগধারার ব্যবহার ঠিক রাখা
বাগধারায় যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয় বা হয়েছে শুধু সেসব শব্দ ব্যবহার করতে হবে। সেটি পরিবর্তন করে বাক্য তৈরি করলে বাক্যটি হবে অশুদ্ধ। যেমন: তারা গরিবের পাকা ধানে আগুন দিয়েছেন। (তারা গরিবের পাকা ধানে মই দিয়েছেন)।
অরণ্যে কান্না (রোদন), চিনির গরু (বলদ), আলু (পটল) তোলা, ভিজে ইঁদুর (বেড়াল) লেখা যাবে না। বাগধারার নিজস্ব গঠন যেমন ঐতিহ্যগত তেমনি এর অর্থও সুনির্ধারিত তাই এর কোনটি পরিবর্তন করে বাক্যে ব্যবহার করলে বাক্য তার যোগ্যতা হারায়।
৬.রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা বজায় রাখা
বাক্যে সবসময় প্রকৃতি ও প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দের অর্থ ব্যবহৃত না হয়ে রীতিসিদ্ধ অর্থ ব্যবহৃত হয়। তাই উচিৎ শব্দের অর্থ ঠিক রেখে বাক্য গঠন করা। যেমন: হাত+ই=হাতি না হয়ে হবে ‘হাত’ আবার পানজাব+ই=পানজাব দেশের লোক না হয়ে হেবে ‘লম্বা জামা’ বিশেষ।
৭. প্রাঞ্জলতা (সহজবোধ্য বাক্য) বজায় রাখা
তুমি যাহা লিখিবে লোকে পড়িবামাত্র যেন বুঝিতে পারে। যাহা লিখিলে, লোকে যদি তাহা না বুঝিতে পারিল, তবে লেখা বৃথা। ‘মনীক্ষোভাকুল কুবলয়’ কেহ কি সহজে বুঝিবে আর যদি বলি ‘মাছের তাড়নে যে পদ্ম কাঁপিতেছে’ তবে কেনা বুঝিবে? (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
৮. অর্থব্যক্তি (উপযুক্ত শব্দ নিবার্চন এবং ব্যবহার) বজায় রাখা
‘যে কথাটিতে কাজ হইবে, সেই কথাটি ব্যবহার করিবে’ (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)। অর্থাৎ যে শব্দ দিয়ে মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় সেই শব্দটি গ্রহণ করা এবং ওটা যদি ভাব ও বাক্যের উপযুক্ত শব্দ হয় তাহলে সেটি নিবার্চন করা।
৯. গুরুচণ্ডালী মুক্ত রাখা (বড় জাত ও ছোট জাত)
সংস্কৃতি ও দেশি শব্দের (ক্রিয়াশব্দ) সংমিশ্রণে তৈরি বাক্য, বাক্যের যোগ্যতা হারায়। কিন্তু জীবনানন্দ ও জসীমউদদীন ক্রিয়ার ব্যবহার অনেক করেছেন। ‘গরুর যুথ যেন মরুভূমির ঢেউ।’ এখানে ‘পাল’ না লিখে ‘যুথ’ লিখলে বাক্যের যোগ্যতা হারায়। ‘পয়লা বৈশাখ’ না হয়ে ‘পহেলা বৈশাখ’ বা ‘পয়লা বোশেখ’ হবে।
১০. যতির ব্যবহার ঠিক রাখা
আবেগশব্দের পরে আবেগচিহ্ন বসে শেষে দাঁড়ি বসে। বাক্যে আবেগ, বিস্ময়, ঘৃণা ইত্যাদি উল্লেখ থাকলে আবেগচিহ্ন না বসে দাঁড়ি বসে।
অনেকগুলো বিশেষ্য বা সর্বনাম বা বিশেষণ বা ক্রিয়া থাকলে সবগুলোর আগে কমা বসে আর শেষটির আগে ‘ও’ বসে অথবা ‘ও’ না বসে শেষে ‘ইত্যাদি/প্রভৃতি/প্রমূখ’ বসে। একই বাক্যে ‘ও’ আর ‘ইত্যাদি’ বসে না। অসমাপিকা ক্রিয়ার (এ-বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়া) পরে কমা বসে না। একক বা জোড়া যোজক বাক্যে কমা বা সেমিকোলন বসে না। কবিতার লাইনে যত্রতত্র যতির ব্যবহার কাম্য নয়। আবেগশব্দ বাক্যের শুরুতে বসে। যেমন: বাহ! কী সুন্দর। আ!, অ!, উহ! বাহ! এদের পরে কমা না বসে আবেগচিহ্ন বসে। আবেগচিহ্নের পরে দাঁড়ি বসে। বাক্যে আবেগ, বিস্ময়, ঘৃণা ইত্যাদি উল্লেখ থাকলে আবেগচিহ্ন না বসে দাঁড়ি বসে। যেমন: ‘বাহ! পাখিটি কত সুন্দর’ ‘বাহ, পাখিটি সুন্দর!’ হবে না। আবার ‘বাহ পাখিটি কত সুন্দর!’ হবে না। সে আবেগের কথা বলল! (এখানে আবেগচিহ্ন না বসে দাঁড়ি বসে)। একই সঙ্গে ‘ও’র ‘ইত্যাদি’ বসে না। তারিখের বেলায় সংখ্যা পাশাপাশি বসলে কমা বসে কিন্তু তারিখের মাঝে মাসের নাম থাকলে কমা বসে না। যেমন: ১২, ১২, ২০১২/১২ এপ্রিল ২০১৩। উক্তিজাতীয় বাক্যে বলল—এরপরে কমা বা ড্যাশ (হাইফেন নয়) বা কোলন বসে। তবে বলল— এরপরে আরেকটি কমা বসালে এরপরে বললে-এরপরে ড্যাশ ব্যবহার করা উচিত। কমার পরে এক বা জোড় উর্ধ্বকমা ব্যবহার করার দরকার নাই। যেমন: উপ-সচিব না হয়ে হবে উপসচিব। দুটি বাক্যকে যুক্ত বা বিযুক্ত করতে এমন ‘এবং, তাই /সেহেতু /কারণে/ফলে, কিন্তু/তবু /তবুও, যদিও তাহলে/তবে, যদিও— তথাপি, এ—যে— সেটি, এ—সেটি, যখন—তখন, শুধু—ও’ মাঝে বসলে এদের আগে বা পরে কমা বসে না। এরা পরস্পরের সঙ্গে মিল রেখে বাক্যে বসে। জটিল বাক্যে কর্তার পরে জটিলচিহ্ন (যা— তা, যত— তত) বসে। এদের পরে কমা বসে না। যেমন: যে যত পড়ালেখা করে সে তত ভালো করে।

বাক্য

বাক্য

অর্থবহ কথাকেই বাক্য বলে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য আর বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ আর শব্দের মূল উপাদান বর্ণ। বর্ণের মূল উপাদান ধ্বনি। অর্থবহ শব্দ বা শব্দসমষ্টি বা কিছু শব্দসমন্বয়ে মনের ভাব প্রকাশের প্রক্রিয়াই বাক্য। অন্যভাবে বলা যায়, পরস্পর অর্থবহ শব্দ দ্বারা গঠিত একটি সম্পূর্ণ বক্তব্যকে বাক্য বলে। সাহিত্যের বাহ্যিক উপকরণের মধ্যে বাক্যই প্রধান। তাই বাক্যকে যতই শুদ্ধ রাখা যায় ততই তার অর্থ ও রস আস্বাদন করতে সহজ হয়। বাংলা বাক্যের ধরন অনেক প্রকার। কোন বাক্যের কর্তা আছে। আবার কোন বাক্যের কর্তা নাই। কোন বাক্যের ক্রিয়া নাই, এসব বাক্যকে অনুক্ত ক্রিয়া বাক্য বলে। যেমন: এই আমাদের ছোট্ট গ্রাম। এ আমার শিক্ষকের কথা। বাংলাদেশ এক দরিদ্র দেশ। তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?

ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন :

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোনও বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সেই পদ বা শব্দ-সমষ্টিকে বাক্য বা Sentence বলে।

জ্যোতিভূষণ চাকী বলেন, যথাযথ বিন্যস্ত শব্দসমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।

ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, পরস্পর অর্থসম্বন্ধ-বিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সেই পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।

বিভিন্নভাবে আমরা বাক্যের ধারণা নিতে পারি। যেমন:

১. অংশগত বাক্য : উদ্দেশ্য/কর্তা ও বিধেয় (কর্ম+ক্রিয়া)

২. খণ্ডগত বাক্য : প্রধান খণ্ডবাক্য, নির্ভরশীল বা আশ্রিত বা পরাধীন খণ্ডবাক্য ও সংযুক্তি শব্দের খণ্ডবাক্য

৩. অর্থগত বাক্য    : বিবৃতিবাচক বা বিবরণবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক, আশিসবাচক ও আবেগবাচক

৪. গঠনগত বাক্য    : সরল বাক্য, জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য

৫. তুলনাগত বাক্য   : গুণবাচক বাক্য, উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বাক্য, সবচে তুলনীয় বাক্য

৬. বাচ্যগত বাক্য   : কর্তৃবাচ্য বাক্য ও কর্মবাচ্য বাক্য

৭. উক্তিগত বাক্য   : প্রত্যক্ষ বাক্য ও পরোক্ষ বাক্য

বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়

অংশের দিক দিয়ে বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

ক) উদ্দেশ্য

বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় বা যে কাজটি সম্পাদন করে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: হাসান — — । লেখক হাসান — ।

বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে মূল উদ্দেশ্যের আগে তার পরিচায়ক বিশেষণ বসিয়ে উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারিত করা হয়। যেমন :

সম্প্রসারণরীতি

উদ্দেশ্য সম্প্রসারক

উদ্দেশ্য (কর্তা)

বিধেয় (ক্রিয়া)

১. বিশেষণ যোগে

২. সম্বন্ধ পদ যোগে

৩. সমার্থক বাক্যাংশ যোগে

৪. অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষণ যোগে

৫. বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে

কুখ্যাত

হাসানের

যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী (খণ্ডবাক্য)

চাটুকার পরিবৃত হয়েই (খণ্ডবাক্য)

যার কথা তোমরা প্রায়ই বলে থাক

ডাকাতদল

ভাই

তারাই

রহিম

তিনি

ধরা পড়েছে।

পড়ছে।

উন্নতি করে।

থাকেন।

এসেছেন।

খ) বিধেয়

উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় বা কর্তা যেভাবে কাজ সম্পাদন করে তাকে বিধেয় বলে। যেমন: — পড়ান। — ভাল পড়ান। বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে বিধেয় সম্প্রসারণ বসিয়ে বিধেয় ক্রিয়াকে সম্পূরক করা হয়। এরা সমাপিকা ক্রিয়ার পরেও বসতে পারে। যেমন: তিনি প্রখ্যাত ভাষাবিদ ছিলেন অথবা তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ।

সম্প্রসারণরীতি

উদ্দেশ্য (কর্তা)

বিধেয় সম্প্রসারক

বিধেয় (ক্রিয়া)

১. ক্রিয়া বিশেষণযোগে

২. ক্রিয়া বিশেষণীয়যোগে

৩. কারকযোগে

৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশযোগে

৫. বিধেয় বিশেষণযোগে ঘোড়া

ঘোড়া

জেটবিমান

তিনি ভুবনের

তিনি

ফারজানা

দ্রুত

অতিশয় দ্রুত

ঘাটে ঘাটে

যেভাবেই

আমার বিশেষ

দৌঁড়ায়।

চলে।

ভাসছেন।

হোক আসবেন।

অন্তরঙ্গ বন্ধু (হয়)।

বাক্যের শ্রেণিবিভাগ

গঠন ও অর্থের দিক দিয়ে বাক্যকে  তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

কবিতার বাক্যগুলো সবসময় সরল হয়ে থাকে তবে গদ্যের বাক্য জটিল বা যৌগিক হয়ে থাকে। অনেক লেখক তার গদ্য সরল এবং ছোট ছোট বাক্যে গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হুমায়ূন আহমেদ। একাধিক বাক্যকে একবাক্যে পরিণত করতে গেলে দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত হয়। বিভিন্নভাবে বাক্য গঠন বা যোজন বা বিযোজন করা যায়। গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যেমন:

১. সরল বাক্য / Simple Sentence

একটি সমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্যই সরল বাক্য । এখানে একটি বাক্যই থাকবে তাই পরস্পর সম্পর্কিত কোন খণ্ডবাক্য থাকে না। তবে অনেকগুলো অসমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্য থাকতে পারে। এখানে একটি বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য (কর্তা) এবং একটিমাত্র বিধেয় (কর্ম + ক্রিয়া) থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: সে ভাত খায়। তিনি কাছে এসে ভালবেসে মায়া লাগিয়ে চলে গেলেন।

সরল বাক্য  চেনার উপায়গুলো হলো। একটি বাক্য, ক্রিয়া+এ, ক্রিয়া+য়, ক্রিয়া+নি বসে, অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া, না চাইলে, অত ইত্যাদি।

২. যৌগিকবাক্য/ Compound Sentence

পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই যৌগিকবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য যৌগিকচিহ্ন/যৌগিক যোজক থাকতে হবে। দুই বা এর অধিক সরল বাক্য  বা জটিলবাক্য মিলিত হয়ে যে বাক্য তৈরি করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। অথবা দুটি বাক্যকে এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিম্বা যোজক দ্বারা যুক্ত করলে যৌগিক বাক্য হয়। যেমন: সে ঠিক মতো স্কুলে যায় এবং পড়া শেষ করে। সে গরিব কিন্তু সৎ।

যৌগিকচিহ্ন: এবং, আর, ও, কিন্তু, তাই, তাহলে, সেহেতু, কারণে, ফলে, তবে, তবু, তবুও, পর, নইলে, আগে, তখনই, ফল/ ক্রিয়া+ও, কেবল, বটে— তবে, শুধু—আরও/ও, জন্য, উদ্দেশ্যে, বলে, সুতরাং, অন্যথায়, অথবা ইত্যাদি।

৩. জটিলবাক্য/মিশ্রবাক্য/ Complex Sentence

পরস্পর নির্ভরশীল একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই জটিলবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য জটিলচিহ্ন/জটিল যোজক থাকতে হবে। যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে জটিল বা মিশ্রবাক্য বলে। দুটি বাক্য জটিলচিহ্ন দ্বারা গঠিত হলে জটিল বাক্য হবে। যেমন: যে পরিশ্রম করে, সে সুখ লাভ করে। আমি দেখলাম, খেলা শেষ। যেমন: যে সবসময় এখানে আসে সে আমার ছোট ভাই।

জটিলচিহ্ন: যে/যা/ যে— তাকে, যে—সে/সেই, যত—তত, /যতদিন—ততদিন, যেহেতু—সেহেতু, যেই— অমনি, সে—কারণ, সে—বলে, যখন— তখন, যদি, যদিও, যদিও—তবুও, তবুও ইত্যাদি। এসব চিহ্নের আগে বা পরে কোন যতি বসে না।

বাক্যেরূপান্তরের নিয়ম

কিছু নিয়মের মাধ্যমে এক বাক্য থেকে অন্য বাক্যে রূপান্তর করাকে বাক্যরূপান্তর বলে। যেমন:

ক) সরল বাক্যকে জটিল বা মিশ্র বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

সরল বাক্য

জটিলবাক্য

যে— তাকে

(একবচন)

ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

যে ভিক্ষা চায় তাকে ভিক্ষা দাও।

/যে ভিক্ষুক তাকে ভিক্ষা দাও।

যেসব—তাদের

সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু আসা শব্দই সংস্কৃত শব্দ।

যেসব শব্দ সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু এসেছে তাদের সংস্কৃত শব্দ বলে।

যে— সে

সে আমার ছোট ভাই।

যে এসেছিল সে আমার ছোট ভাই।

যেই— সেই

তাদের দেখামাত্র আমরা রওনা দিলাম।

যেই তাদের দেখা পেলাম সেই আমরা রওনা হলাম।

যত— তত

যতদিন— ততদিন

ইচ্ছামত খাও।

সে আমাকে অনেকদিন ইংরেজি শিখিয়েছে।

আজীবন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।

যত পারো তত খাও।

যতদিন তার কাছে গিয়েছি ততদিন সে আমাকে ইংরেজি শিখিয়েছে।

যতদিন জীবিত থাকব ততদিন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।

যারা— তারা

(বহুবচন)

তারা খুব বুদ্ধিমান।

ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।

বুদ্ধিহীনরা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।

যারা এসেছিল তারা সবাই বুদ্ধিমান।

যারা ভাল ছেলে তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।

যারা বুদ্ধিহীন তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।

/যাদের বুদ্ধি নাই তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।



খ) সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

সরল বাক্য

যৌগিকবাক্য

এবং

হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক।

হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক।

হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক এবং কথাসাহিত্যিক।

হুমায়ূন আহমেদ শুধু বিখ্যাত পরিচালকই নয় বিখ্যাত সাহিত্যিকও।



তাই/সেহেতু

/কারণে/ফলে

আমি অসুস্থতার জন্য উপস্থিত থাকতে পারিনি।

আমি অসুস্থ ছিলাম তাই উপস্থিত থাকতে পারি নাই। আমি অসুস্থ থাকার কারণে (থাকায়) অনুপস্থিত ছিলাম।

কিন্তু/তবু

/তবুও

তার বয়স কম হলেও ভাল আলোচনা করে।

তার বয়স কম কিন্তু তবুও সে ভালো আলোচনা করে।

গ) জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

জটিলবাক্য

যৌগিকবাক্য

যদি— তাহলে

/তবে

যদি দোষ স্বীকার করো তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।

দোষ স্বীকার কর এবং তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।

যদিও— তথাপি

তিনি গরিব কিন্তু সৎ।

যদিও তিনি গরিব তবুও তিনি সৎ।

এ/এই— সেটি

এ— সেটি

এ/এই গ্রামে একটি পাঠাগার আছে সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সুতরাং এই গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।



যখন— তখন

আমি বাড়ি পৌঁছলাম এবং মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।

বিপদ ও দুঃখ এক সঙ্গে আসে।

যখন আমি বাড়ি পৌঁছলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।

যখন বিপদ আসে তখন দুঃখ আসে।

যেমন—তেমনি

ছেলেটি বুদ্ধিমান ও দুঃসাহসী।

ছেলেটি যেমন বুদ্ধিমান তেমনি দুঃসাহসী।

ও—র

ও— ই

আমরাও ভালো তারাও ভালো।

আমরাও ভালো সকলেই ভালো।

আমরা যখন ভালো থাকি তখন সকলেই ভালো থাকে।

বাক্য বিশ্লেষণ

বাক্যের বিভিন্ন অংশ পৃথক করে তাদের পারস্পারিক সম্বন্ধ নির্ণয় প্রণালীকে বাক্য বিশ্লেষণ বলে। গঠনগতভাবে বাক্যকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যেমন:

সরল বাক্য

উদ্দেশ্য সম্প্রসারক

উদ্দেশ্য (কর্তা)

বিধেয় (ক্রিয়া)

বিধেয় সম্প্রসারক

১. ---

২. ---

৩. ---

৪. ---

৫. তার সুন্দর

৬. মহারাজ শুদ্ধোধনের পুত্র

৭. ইসলামের প্রথম খলিফা

---

হাসান

হাসান

হাসান/লেখক হাসান

মুখখানি

শাক্যসিংহ

হযরত আবু বকর (রা.)

---

---

বই

গদ্য লিখতে

কেমনে

জীবনে সংসার

দীনের জন্য তার সর্বস্ব

পড় /লেখ।

পড়ান।

পড়ান।

পছন্দ করেন।

ভুলে থাকি।

ত্যাগ করেন।

দান করেন।

জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য

এখানে প্রধান ও খণ্ডবাক্যকে নির্ণয় করে বিশ্লেষণ করতে হয়। জটিল বাক্যের সংযোজক যোজক (যদিও) বাক্যের প্রথমেও বসতে পারে। যেমন :            

উদ্দেশ্য সম্প্রসারক

উদ্দেশ্য (কর্তা)

বিধেয় সম্প্রসারক

বিধেয় (ক্রিয়া)

সংযোজক যোজক

১. ---

২. ---



কন্যার বাপ

বরের বাপ

ত্যাগ

জ্ঞান

সবুর করিতে

সবুর করিতে

মানুষকে মুক্তির পথে

মানুষকে শান্তিতে  

পারিতেন

চাহিলেন না।

পরিচালিত করে

রাখে।

কিন্তু



এবং



বাক্য রূপান্তর

তবে জটিল ও যৌগিক বাক্যকে সরল করে আরো সুন্দর বাক্যে পরিণত করা যায়। যেমন: কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিলেও বরের বাপ তা চাহিলেন না। অথবা শুধু ত্যাগ না জ্ঞানও মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে/ত্যাগ ও জ্ঞান দুটিই মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে। বিভিন্ন নিয়মে বাক্য রূপান্তর করা যায়। যেমন :

ক) সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্য   : শিক্ষিত লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে।

জটিল বাক্য   : যে লোক শিক্ষিত তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে।

সরল বাক্য   : তিনি আসলে আর চিন্তা কী?

জটিল বাক্য   : যদি তিনি আসেন তাহলে আর চিন্তা কী?

সরল বাক্য   : ঈদের ছুটিতে আমরা বাড়ি যাব।

জটিল বাক্য   : যখন ঈদ আসবে তখন আমরা বাড়ি যাব।

সরল বাক্য   : তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।

জটিল বাক্য   : যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন তোমার কথা মনে থাকবে।

সরল বাক্য   : সৎ লোক কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।

জটিল বাক্য   : যে সৎ লোক সে কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।

সরল বাক্য   : অন্ধকে আলো দাও।

জটিল বাক্য   : যে অন্ধ তাকে আলো দাও।

খ) জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর

জটিল বাক্য   : যখন তার শৈশবকাল তখন তার বাবা মারা যান।

সরল বাক্য   : শৈশবে তার বাবা মারা যায়।

জটিল বাক্য   : যেহেতু যানজট সেহেতু গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।

সরল বাক্য   : যানজট থাকায় গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।

জটিল বাক্য   : যদিও লোকটি গরিব তথাপি সে অতিথিপরায়ণ।

সরল বাক্য   : লোকটি গরিব হলেও অতিথিপরায়ণ।

জটিল বাক্য   : যতই পরিশ্রম করবে ততই ফল পাবে।

সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।

গ) সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্য   : বাবা আমাকে একশ টাকা দিয়ে বাজারে যেতে বললেন।

যৌগিক বাক্য : বাবা আমাকে একশ টাকা দিলেন এবং বাজারে যেতে বললেন।

সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।

যৌগিক বাক্য : অধিক পরিশ্রম করবে এবং অধিক ফল পাবে।

ঘ) যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্য : তিনি বেড়াতে গেলেন এবং কেনাকাটা করলেন।

সরল বাক্য   : তিনি বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করলেন।

যৌগিক বাক্য : ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী।

সরল বাক্য   : ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী।

যৌগিক বাক্য : এখনই যাও নইলে তার দেখা পাবে না।

সরল বাক্য   : এখনই না গেলে তার দেখা পাবে না।

ঙ) জটিল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

জটিল বাক্য   : যদিও আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি তবুও কোন ফল হয়নি।

যৌগিক বাক্য : আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি।

জটিল বাক্য   : সে যেমন কৃপণ তেমন চালাক।

যৌগিক বাক্য : সে কৃপণ এবং চালাক।

জটিল বাক্য   : আমরা যখন স্টেশনে পৌঁছলাম তখন গাড়ি ছেড়ে দিল।

যৌগিক বাক্য : আমরা স্টেশনে পৌঁছলাম আর গাড়ি ছেড়ে দিল।

জটিল বাক্য   : আমরা যখন বাড়ি এসেছি তখন রাত্রি হয়েছে।

যৌগিক বাক্য : আমরা বাড়ি এসেছি আর রাত্রি হয়েছে।

জটিল বাক্য   : পিতা যখন আছেন তখন পুত্রকে খোঁজ কেনো?

যৌগিক বাক্য : পিতা আছেন সুতরাং পুত্রকে খোঁজ কেনো?

জটিল বাক্য   : যে রক্ষক সেই ভক্ষক।

যৌগিক বাক্য : সে রক্ষক এবং ভক্ষক।

চ) যৌগিক বাক্য থেকে মিশ্র বা জটিল বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্য      : তিনি বিদ্বান বটে কিন্তু বড়ই দুর্বিনীত।

মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদিও তিনি বিদ্বান তবুও বড়ই দুর্বিনীত।

যৌগিক বাক্য      : বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।

মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।

যৌগিক বাক্য      : নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করো স্বাস্থ্য ভালো হবে।

মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি নিয়মিত ব্যায়াম কর তাহলে স্বাস্থ্য ভাল হবে।

যৌগিক বাক্য      : দোষ করেছে অতএব শাস্তি পাবে।

মিশ্র বা জটিল বাক্য : যখন দোষ করেছে তখন শাস্তি পাবে।

বাংলায় সাপেক্ষ বাক্য

বাংলা ভাষায় সাপেক্ষ বাক্যের সংগঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। বাক্যের একটা অংশের সম্পাদন যখন অন্য আর একটা অংশের উপর নির্ভর করে তখন সেই বাক্যকেই বলে সাপেক্ষ বাক্য। একে শর্তবাক্য /conditional sentence বাক্য বলতে পারি। সাপেক্ষ জটিল বাক্যের স্বাধীন খণ্ডবাক্যে ‘যদি’, ‘যখন’ ‘যেদিন’ ইত্যাদি সাপেক্ষ পদ বসে এবং অধীন বা আশ্রিত খণ্ডবাক্যে ‘তবে’, ‘তাহলে’, ‘সেদিন’ ইত্যাদি ক্রিয়াবিশেষণ বাচক পদ বসে। আবার শুধু ‘যদি-তবে’ নয়, অন্য সাপেক্ষ পদ দিয়েও সাপেক্ষ বাক্য হয়। যেমন :

১. যদি তুমি যাও তবে আমিও যাব।

২. যদি আমায় তুমি বাঁচাও তবে তোমার নিখিল ভুবন ধন্য হবে।

৩. এই যদি তোমার মনে ছিল তবে আগেই তা বলতে পারতে।

৪. না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে?

৫. যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।

৬. যেদিন তোমার ইচ্ছে হবে সেদিন এসো।

৭. যেই বৃষ্টি এলো অমনি সে ঘরে ঢুকলো।

বাক্যের অর্থগত প্রকরণ

মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষা লাগে। ভাষা শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ লাভ করে। যেমন :

১. বিবৃতিবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্যবহুল বাক্যকে বিবৃতিবাচক বা বর্ণনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি ঢাকায় যাব। আমি ঢাকায় যাব না।

২. প্রশ্নবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাকে প্রশ্নবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি কি ঢাকায় যাব? আমি কি ঢাকায় যাব না? আমি কোথায় যাব?

৩. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, বা আমন্ত্রণমূলক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন: পড়, বৃষ্টিতে ভিজবে না, দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।

৪. আশিসবাচক বাক্য: ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশিসমূলক বাক্যকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: দীর্ঘজীবী হও, তোমার মঙ্গল হোক।

৫. আবেগবাচক বাক্য: দুঃখ, শোক, আনন্দ, বিস্ময়, ভয়, লজ্জা, ঘৃণা, করুণা বা প্রশংসামূলক বাক্যকে আবেগবাচক বাক্য বলে। যেমন: ছি! কত লজ্জা। হায়! সে কত দুখী। বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।

অর্থগত বাক্যের রূপান্তর

অর্থের রূপান্তর না করে একপ্রকার বাক্যকে অন্যপ্রকার বাক্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াই বাক্যরূপান্তর। যেমন:

বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে প্রশ্নবাচক : আমি ঢাকা যাব—আমি কি ঢাকা যাব না? আমি ঢাকায় যাব না—আমি কি ঢাকা যাব?

বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: তুমি বইটি পড়—বইটি পড়।

                             তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না—বৃষ্টিতে ভিজবে না।

                             দয়া করে তুমি একগ্লাস পানি দাও—দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।

বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে ইচ্ছাবাচক বাক্য    : আমাদের কবি দীর্ঘজীবী হউক—দীর্ঘজীবী হউক।

বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে বিস্ময়বাচক বাক্য: অনেক সুন্দর একটি পাখি— বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।

অর্থভিত্তিক বাক্য রূপান্তর

অর্থভিত্তিক বাক্য পরিবর্তন হলো অর্থ অপরিবর্তিত রেখে অস্ত্যক, নর্ঙ্থক, প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাবাচক, প্রার্থনাবাচক, আবেগবাচক ইত্যাদি বাক্যকে অর্থ ভিত্তিক ভিন্ন প্রকরণের বাক্যে রূপান্তরিত করা। এভাবে অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে, নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে, প্রশ্নবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে, আবেগবাচক বাক্যেকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বা প্রার্থনাবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন:

ক) অস্তি থেকে নেতিবাচক বাক্য রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. একটি না যোজক এবং নয় বা নাই (ক্রিয়ার) আগমন ঘটবে।

৩. এই না-বাচক যোজক বা ক্রিয়া ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণটির বিপরীতার্থক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। যেমন: সে বুদ্ধিমান। অর্থাৎ সে নির্বোধ নয় বা বুদ্ধিহীন নয়।

৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মূল বাক্যের বিশেষ্য বা বিশেষণ অপরিবর্তিত রেখে-ছাড়া, ভিন্ন, ব্যতীত, ব্যতিরেকে ইত্যাদি যোজক ব্যবহার করা যায়। যেমন: এটা দক্ষ লোকের কাজ। অর্থাৎ এটা দক্ষ ছাড়া অন্য লোকের কাজ নয়।

৫. মনে রাখা প্রয়োজন দুটি না-বাচক সমান একটি হ্যাঁ-বাচক (Two negatives make an affirmative)|

নমুনা

অস্তিবাচক    : তিনি সচ্চরিত্র ব্যক্তি।

নাস্তিবাচক    : তিনি অসচ্চরিত্র ব্যক্তি নন।

অস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে অনেক পোড়ো বাগান আছে।

নাস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে পোড়ো বাগানের অভাব নাই।

অস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

নাস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবা অপেক্ষা বড় ধর্ম আর কিছুই নাই।

অস্তিবাচক    : সে কথাই এরা ভাবে।

নাস্তিবাচক    : সে কথাই এরা না ভেবে পারে না।



খ) নাস্তি বা নেতিবাচক বাক্য হতে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. না বাচক যোজক বা ক্রিয়া বিলুপ্ত হবে।

৩. নর্ঙ্থক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণের বিপরীত শব্দ বসবে।

৪. বাক্যটি যদি মিশ্র বা জটিল হয় তবে অপ্রধান, পরনির্ভর অস্তিবাচক উপবাক্যটিকে নর্ঙ্থক এবং প্রধান স্বনির্ভর নর্ঙ্থক উপবাক্যটিকে অস্তিবাচক বাক্যেরূপান্তরিত করতে হবে।

নমুনা

নাস্তিবাচক বাক্য : এমন কোন লোক নাই যিনি দেশকে ভালোবাসেন না।

অস্তিবাচক বাক্য : সকলেই দেশকে ভালোবাসেন।

নাস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে আর বলা হলো না।

অস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে অব্যক্তরয়ে গেল।

নাস্তিবাচক বাক্য : সত্যের নাই পরাজয়।

অস্তিবাচক বাক্য : সত্যের জয় আছেই।



গ) নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. কি, কী, কে, কবে, কোথায়, কখন ইত্যাদি প্রশ্নবোধক সর্বনাম বা ক্রিয়া বিশেষণ যোগ করতে হয়।

২. অস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপে একটি না-বাচক যোজক কখনো ক্রিয়ার পরে বসাতে হয়।

৩. নাস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপান্তরে না-বাচক শব্দটি বাদ দিতে হয়।

৪. শেষে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন বসাতে হয়।

নমুনা

নির্দেশক বাক্য    : আমি তখন জাগ্রত ছিলাম।

প্রশ্নবোধক বাক্য   : আমি কি তখন জাগ্রত ছিলাম না?

নির্দেশক বাক্য    : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে।

প্রশ্নবোধক বাক্য   : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল কি অবশ্যই ভোগ করতে হবে না?



ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ‘কি’ যোজক বিলুপ্ত হবে।

৩. সঙ্গে সঙ্গে না বাচক যোজক লুপ্ত হবে।

৪. জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) হবে।

বাক্যটি যদি নর্ঙ্থক করতে হয় তবে-

১. অর্থ অপরিবর্তিত রাখতে হবে।

২. ‘কি’ যোজক বাদ দিতে হবে।

৩. সঙ্গে সঙ্গে একটি না বাচক যোজক আনতে হবে।

৪.জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) বসবে।

৫. জটিল ও যৌগিক বাক্যের ক্ষেত্রে প্রধান স্বনির্ভর উপবাক্যটি নর্ঙ্থক উপবাক্যে রূপান্তরিত হবে।

নমুনা

প্রশ্নবোধক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম কে শোনেনি?

নির্দেশক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম সকলেই শুনেছে।

প্রশ্নবোধক বাক্য : কে জানে অসিত কবে আসবে?

নির্দেশক বাক্য : অসিত কবে আসবে এ কথা কেউ জানে না।



ঙ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ক্রিয়ার অনুজ্ঞারূপ পরিবর্তিত হয়ে নির্দেশক (অস্তি বা নেতি)রূপ যুক্ত হবে। এ ব্যপারে সাধারণত ভাব বাচ্যের ক্রিয়া পদ ব্যবহৃত হয়। কোথাও তা না হলে কর্তা-অনুসারে অনুরোধ, উপদেশ, আদেশ, পরামর্শমূলক ক্রিয়া পদ ব্যবহার করতে হবে।

নমুনা

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দুর্জনকে দূরে রাখিও।

নির্দেশক বাক্য      : দুর্জনকে দূরে রাখা উচিত।

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : চুপ কর।

নির্দেশক বাক্য      : কথা বলিও না।

অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দরিদ্রের সেবা করবে।

নির্দেশক বাক্য      : দরিদ্রের সেবা করা কর্তব্য।



চ) নির্দেশক বাক্য থেকে কার্যকারণাত্মক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. নিয়ম, স্বীকৃতি, সংকেত বা শর্ত আরোপিত হবে।

৩. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।

৪. সংকেত বা শর্তাদি আরোপ করতে হলে ‘লে’ প্রত্যয়ান্ত একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে।

নমুনা

১. ঘরে আনামাত্র সবকিছুই তাদের। >ঘরে আনলে সবকিছুই তাদের।



ছ) কার্যকারণাত্মক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।

৩. শর্তমূলক অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষ্য পদে (কিংবা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য) রূপান্তর হবে।

নমুনা

১. এসব চিন্তা করলে মনে শান্তি আসে। >এসব চিন্তায় মনে শান্তি আসে।



জ) নির্দেশক বাক্য থেকে সন্দেহদ্যোতক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’ ইত্যাদি শব্দের যেকোনো একটি ব্যবহৃত হবে।

নমুনা

১. তার দুর্নিবার লোভরিপুই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ। >তার দুর্নিবার লোভরিপু নিশ্চয়ই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ।

২. আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই উপকার করতে পারি না। >আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই বোধহয় উপকার করতে পারি না।



ঝ) সন্দেহদ্যোতক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘বোধহয়’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’, ‘অবশ্য’ ইত্যাদি শব্দ বিলুপ্ত হবে।

৩. কর্তৃপদ বা অনুরূপ পদের সঙ্গে একটি নিশ্চয়সূচক ‘ই’ যোজক যুক্ত হয়।

নমুনা

১. সেগুলো বোড়াটোড়া হবে বোধ হয়। > সেগুলো বোড়াটোড়াই হবে।



ঞ) নির্দেশক বাক্য থেকে প্রার্থনাবোধক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াকে ‘উক’ বা ‘উন’ বিভক্ত্যন্ত হয়। যেমন: করুক, করুন। ইচ্ছামূলক বর্তমান কালের ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করতে হবে।

নমুনা

১. যম এদের ভুলে থাকবেন। > যমেএদের ভুলে থাকুন।

২. সেইদিন সমস্যার সমাধান হবে। > সেইদিনই সমস্যার সমাধান হউক।



ট) প্রার্থনাবোধক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যতকালের নির্দেশক ক্রিয়ার রূপান্তরিত হবে।

৩. প্রয়োজনবোধে ‘বক্তা কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যোগ করা যায়।

নমুনা

১. সমস্তলোক আমার আয়ত্তর বশীভূত থাকুক। > সমস্তলোক আমার আয়ত্ত ও বশীভূত থাকবে।

২. দেব দিবাকর আগে যাক অস্তাচলে। > দেব দিবাকর আগে যাবে অস্তাচলে।

৩. সন্ধ্যার তিমির আসুক নিবিড় হয়ে। > সন্ধ্যার তিমির আসবে নিবিড় হয়ে।



ঠ) নির্দেশক বাক্যকে বিস্ময়বাচক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. বাক্যের মধ্যে একটি বিস্ময়বোধক যোজক পদ যেমন: আহা, হায় ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।

৩. বিশেষণ পদের আগে একটি ‘কী’ বিশেষণীয় বিশেষণ বসবে।

৪. বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্যবোধক (!) চিহ্ন বসবে।

নমুনা

নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় চমৎকার।

বিস্ময়বাচক বাক্য    : আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।

নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় করুণ।

বিস্ময়বাচক বাক্য    : দৃশ্যটি কী করুণ!

নির্দেশক বাক্য      : এতো ভয়ানক দুঃখের কথা।

বিস্ময়সূচক বাক্য         : কী ভয়ানক দুঃখের কথা!



বিস্ময়বাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

বিস্ময়বাচক বাক্য    : বাড়িটি কী সুন্দর!

নির্দেশক বাক্য      : বাড়িটি বড় সুন্দর।

বিস্ময়বাচক বাক্য    : ত্যাগের কী অপূর্ব মহিমা!

নির্দেশক বাক্য      : ত্যাগের মহিমা বড় অপূর্ব।



ড) ইচ্ছাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

নিয়ম

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যৎ কালের নির্দেশক ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হবে।

৩. প্রয়োজন বোধে বক্তা ‘কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যুক্ত করতে হবে।

নমুনা

ইচ্ছাবাচক বাক্য : তুমি দীর্ঘজীবী হও।

নির্দেশক বাক্য : তোমার দীর্ঘজীবন কামনা করি।

ইচ্ছাবাচক বাক্য : জয় হোক ত

বাক্য

অর্থবহ কথাকেই বাক্য বলে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য আর বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ আর শব্দের মূল উপাদান বর্ণ। বর্ণের মূল উপাদান ধ্বনি। অর্থবহ শব্দ বা শব্দসমষ্টি বা কিছু শব্দসমন্বয়ে মনের ভাব প্রকাশের প্রক্রিয়াই বাক্য। অন্যভাবে বলা যায়, পরস্পর অর্থবহ শব্দ দ্বারা গঠিত একটি সম্পূর্ণ বক্তব্যকে বাক্য বলে। সাহিত্যের বাহ্যিক উপকরণের মধ্যে বাক্যই প্রধান। তাই বাক্যকে যতই শুদ্ধ রাখা যায় ততই তার অর্থ ও রস আস্বাদন করতে সহজ হয়। বাংলা বাক্যের ধরন অনেক প্রকার। কোন বাক্যের কর্তা আছে। আবার কোন বাক্যের কর্তা নাই। কোন বাক্যের ক্রিয়া নাই, এসব বাক্যকে অনুক্ত ক্রিয়া বাক্য বলে। যেমন: এই আমাদের ছোট্ট গ্রাম। এ আমার শিক্ষকের কথা। বাংলাদেশ এক দরিদ্র দেশ। তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?
ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন :
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোনও বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সেই পদ বা শব্দ-সমষ্টিকে বাক্য বা Sentence বলে।
জ্যোতিভূষণ চাকী বলেন, যথাযথ বিন্যস্ত শব্দসমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।
ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, পরস্পর অর্থসম্বন্ধ-বিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সেই পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।
বিভিন্নভাবে আমরা বাক্যের ধারণা নিতে পারি। যেমন:
১. অংশগত বাক্য : উদ্দেশ্য/কর্তা ও বিধেয় (কর্ম+ক্রিয়া)
২. খণ্ডগত বাক্য : প্রধান খণ্ডবাক্য, নির্ভরশীল বা আশ্রিত বা পরাধীন খণ্ডবাক্য ও সংযুক্তি শব্দের খণ্ডবাক্য
৩. অর্থগত বাক্য    : বিবৃতিবাচক বা বিবরণবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক, আশিসবাচক ও আবেগবাচক
৪. গঠনগত বাক্য    : সরল বাক্য, জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য
৫. তুলনাগত বাক্য   : গুণবাচক বাক্য, উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বাক্য, সবচে তুলনীয় বাক্য
৬. বাচ্যগত বাক্য   : কর্তৃবাচ্য বাক্য ও কর্মবাচ্য বাক্য
৭. উক্তিগত বাক্য   : প্রত্যক্ষ বাক্য ও পরোক্ষ বাক্য
বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়
অংশের দিক দিয়ে বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) উদ্দেশ্য
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় বা যে কাজটি সম্পাদন করে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: হাসান — — । লেখক হাসান — ।
বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে মূল উদ্দেশ্যের আগে তার পরিচায়ক বিশেষণ বসিয়ে উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারিত করা হয়। যেমন :
সম্প্রসারণরীতি
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় (ক্রিয়া)
১. বিশেষণ যোগে
২. সম্বন্ধ পদ যোগে
৩. সমার্থক বাক্যাংশ যোগে
৪. অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষণ যোগে
৫. বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে
কুখ্যাত
হাসানের
যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী (খণ্ডবাক্য)
চাটুকার পরিবৃত হয়েই (খণ্ডবাক্য)
যার কথা তোমরা প্রায়ই বলে থাক
ডাকাতদল
ভাই
তারাই
রহিম
তিনি
ধরা পড়েছে।
পড়ছে।
উন্নতি করে।
থাকেন।
এসেছেন।
খ) বিধেয়
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় বা কর্তা যেভাবে কাজ সম্পাদন করে তাকে বিধেয় বলে। যেমন: — পড়ান। — ভাল পড়ান। বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে বিধেয় সম্প্রসারণ বসিয়ে বিধেয় ক্রিয়াকে সম্পূরক করা হয়। এরা সমাপিকা ক্রিয়ার পরেও বসতে পারে। যেমন: তিনি প্রখ্যাত ভাষাবিদ ছিলেন অথবা তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ।
সম্প্রসারণরীতি
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় সম্প্রসারক
বিধেয় (ক্রিয়া)
১. ক্রিয়া বিশেষণযোগে
২. ক্রিয়া বিশেষণীয়যোগে
৩. কারকযোগে
৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশযোগে
৫. বিধেয় বিশেষণযোগে ঘোড়া
ঘোড়া
জেটবিমান
তিনি ভুবনের
তিনি
ফারজানা
দ্রুত
অতিশয় দ্রুত
ঘাটে ঘাটে
যেভাবেই
আমার বিশেষ
দৌঁড়ায়।
চলে।
ভাসছেন।
হোক আসবেন।
অন্তরঙ্গ বন্ধু (হয়)।
বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
গঠন ও অর্থের দিক দিয়ে বাক্যকে  তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
কবিতার বাক্যগুলো সবসময় সরল হয়ে থাকে তবে গদ্যের বাক্য জটিল বা যৌগিক হয়ে থাকে। অনেক লেখক তার গদ্য সরল এবং ছোট ছোট বাক্যে গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হুমায়ূন আহমেদ। একাধিক বাক্যকে একবাক্যে পরিণত করতে গেলে দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত হয়। বিভিন্নভাবে বাক্য গঠন বা যোজন বা বিযোজন করা যায়। গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যেমন:
১. সরল বাক্য / Simple Sentence
একটি সমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্যই সরল বাক্য । এখানে একটি বাক্যই থাকবে তাই পরস্পর সম্পর্কিত কোন খণ্ডবাক্য থাকে না। তবে অনেকগুলো অসমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্য থাকতে পারে। এখানে একটি বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য (কর্তা) এবং একটিমাত্র বিধেয় (কর্ম + ক্রিয়া) থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: সে ভাত খায়। তিনি কাছে এসে ভালবেসে মায়া লাগিয়ে চলে গেলেন।
সরল বাক্য  চেনার উপায়গুলো হলো। একটি বাক্য, ক্রিয়া+এ, ক্রিয়া+য়, ক্রিয়া+নি বসে, অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া, না চাইলে, অত ইত্যাদি।
২. যৌগিকবাক্য/ Compound Sentence
পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই যৌগিকবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরহীন অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ একাধিক খণ্ডবাক্য হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য যৌগিকচিহ্ন/যৌগিক যোজক থাকতে হবে। দুই বা এর অধিক সরল বাক্য  বা জটিলবাক্য মিলিত হয়ে যে বাক্য তৈরি করে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। অথবা দুটি বাক্যকে এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিম্বা যোজক দ্বারা যুক্ত করলে যৌগিক বাক্য হয়। যেমন: সে ঠিক মতো স্কুলে যায় এবং পড়া শেষ করে। সে গরিব কিন্তু সৎ।
যৌগিকচিহ্ন: এবং, আর, ও, কিন্তু, তাই, তাহলে, সেহেতু, কারণে, ফলে, তবে, তবু, তবুও, পর, নইলে, আগে, তখনই, ফল/ ক্রিয়া+ও, কেবল, বটে— তবে, শুধু—আরও/ও, জন্য, উদ্দেশ্যে, বলে, সুতরাং, অন্যথায়, অথবা ইত্যাদি।
৩. জটিলবাক্য/মিশ্রবাক্য/ Complex Sentence
পরস্পর নির্ভরশীল একাধিক খণ্ডবাক্য মিলে যে বাক্য গঠিত হয় সেই বাক্যই জটিলবাক্য। এইখানে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকতে হবে, বাক্যগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হতে হবে এবং বাক্যগুলো যুক্ত করার জন্য জটিলচিহ্ন/জটিল যোজক থাকতে হবে। যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে জটিল বা মিশ্রবাক্য বলে। দুটি বাক্য জটিলচিহ্ন দ্বারা গঠিত হলে জটিল বাক্য হবে। যেমন: যে পরিশ্রম করে, সে সুখ লাভ করে। আমি দেখলাম, খেলা শেষ। যেমন: যে সবসময় এখানে আসে সে আমার ছোট ভাই।
জটিলচিহ্ন: যে/যা/ যে— তাকে, যে—সে/সেই, যত—তত, /যতদিন—ততদিন, যেহেতু—সেহেতু, যেই— অমনি, সে—কারণ, সে—বলে, যখন— তখন, যদি, যদিও, যদিও—তবুও, তবুও ইত্যাদি। এসব চিহ্নের আগে বা পরে কোন যতি বসে না।
বাক্যেরূপান্তরের নিয়ম
কিছু নিয়মের মাধ্যমে এক বাক্য থেকে অন্য বাক্যে রূপান্তর করাকে বাক্যরূপান্তর বলে। যেমন:
ক) সরল বাক্যকে জটিল বা মিশ্র বাক্যে রূপান্তর  
নিয়ম
সরল বাক্য
জটিলবাক্য
যে— তাকে
(একবচন)
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
যে ভিক্ষা চায় তাকে ভিক্ষা দাও।
/যে ভিক্ষুক তাকে ভিক্ষা দাও।
যেসব—তাদের
সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু আসা শব্দই সংস্কৃত শব্দ।
যেসব শব্দ সংস্কৃতভাষা থেকে হুবহু এসেছে তাদের সংস্কৃত শব্দ বলে।
যে— সে
সে আমার ছোট ভাই।
যে এসেছিল সে আমার ছোট ভাই।
যেই— সেই
তাদের দেখামাত্র আমরা রওনা দিলাম।
যেই তাদের দেখা পেলাম সেই আমরা রওনা হলাম।
যত— তত
যতদিন— ততদিন
ইচ্ছামত খাও।
সে আমাকে অনেকদিন ইংরেজি শিখিয়েছে।
আজীবন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।
যত পারো তত খাও।
যতদিন তার কাছে গিয়েছি ততদিন সে আমাকে ইংরেজি শিখিয়েছে।
যতদিন জীবিত থাকব ততদিন তোমার ঋণের কথা ভুলব না বা ঋণ স্বীকার করব।
যারা— তারা
(বহুবচন)
তারা খুব বুদ্ধিমান।
ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
বুদ্ধিহীনরা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।
যারা এসেছিল তারা সবাই বুদ্ধিমান।
যারা ভাল ছেলে তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
যারা বুদ্ধিহীন তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।
/যাদের বুদ্ধি নাই তারা মাইলফলক কবিতা রচনা করতে পারে না।

খ) সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
সরল বাক্য
যৌগিকবাক্য
এবং
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক।
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক।
হুমায়ূন আহমেদ বিখ্যাত পরিচালক এবং কথাসাহিত্যিক।
হুমায়ূন আহমেদ শুধু বিখ্যাত পরিচালকই নয় বিখ্যাত সাহিত্যিকও।

তাই/সেহেতু
/কারণে/ফলে
আমি অসুস্থতার জন্য উপস্থিত থাকতে পারিনি।
আমি অসুস্থ ছিলাম তাই উপস্থিত থাকতে পারি নাই। আমি অসুস্থ থাকার কারণে (থাকায়) অনুপস্থিত ছিলাম।
কিন্তু/তবু
/তবুও
তার বয়স কম হলেও ভাল আলোচনা করে।
তার বয়স কম কিন্তু তবুও সে ভালো আলোচনা করে।
গ) জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
জটিলবাক্য
যৌগিকবাক্য
যদি— তাহলে
/তবে
যদি দোষ স্বীকার করো তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।
দোষ স্বীকার কর এবং তোমাকে কোন শাস্তি দেয়া হবে না।
যদিও— তথাপি
তিনি গরিব কিন্তু সৎ।
যদিও তিনি গরিব তবুও তিনি সৎ।
এ/এই— সেটি
এ— সেটি
এ/এই গ্রামে একটি পাঠাগার আছে সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  
সুতরাং এই গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

যখন— তখন
আমি বাড়ি পৌঁছলাম এবং মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
বিপদ ও দুঃখ এক সঙ্গে আসে।
যখন আমি বাড়ি পৌঁছলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
যখন বিপদ আসে তখন দুঃখ আসে।
যেমন—তেমনি
ছেলেটি বুদ্ধিমান ও দুঃসাহসী।
ছেলেটি যেমন বুদ্ধিমান তেমনি দুঃসাহসী।
ও—র
ও— ই
আমরাও ভালো তারাও ভালো।
আমরাও ভালো সকলেই ভালো।
আমরা যখন ভালো থাকি তখন সকলেই ভালো থাকে।
বাক্য বিশ্লেষণ
বাক্যের বিভিন্ন অংশ পৃথক করে তাদের পারস্পারিক সম্বন্ধ নির্ণয় প্রণালীকে বাক্য বিশ্লেষণ বলে। গঠনগতভাবে বাক্যকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যেমন:
সরল বাক্য
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় (ক্রিয়া)
বিধেয় সম্প্রসারক
১. ---
২. ---
৩. ---
৪. ---
৫. তার সুন্দর
৬. মহারাজ শুদ্ধোধনের পুত্র
৭. ইসলামের প্রথম খলিফা
---
হাসান
হাসান
হাসান/লেখক হাসান
মুখখানি
শাক্যসিংহ
হযরত আবু বকর (রা.)
---
---
বই
গদ্য লিখতে
কেমনে
জীবনে সংসার
দীনের জন্য তার সর্বস্ব
পড় /লেখ।
পড়ান।
পড়ান।
পছন্দ করেন।
ভুলে থাকি।
ত্যাগ করেন।
দান করেন।
জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য
এখানে প্রধান ও খণ্ডবাক্যকে নির্ণয় করে বিশ্লেষণ করতে হয়। জটিল বাক্যের সংযোজক যোজক (যদিও) বাক্যের প্রথমেও বসতে পারে। যেমন :              
উদ্দেশ্য সম্প্রসারক
উদ্দেশ্য (কর্তা)
বিধেয় সম্প্রসারক
বিধেয় (ক্রিয়া)
সংযোজক যোজক
১. ---
২. ---

কন্যার বাপ
বরের বাপ
ত্যাগ
জ্ঞান
সবুর করিতে
সবুর করিতে
মানুষকে মুক্তির পথে
মানুষকে শান্তিতে    
পারিতেন
চাহিলেন না।
পরিচালিত করে
রাখে।
কিন্তু

এবং

বাক্য রূপান্তর
তবে জটিল ও যৌগিক বাক্যকে সরল করে আরো সুন্দর বাক্যে পরিণত করা যায়। যেমন: কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিলেও বরের বাপ তা চাহিলেন না। অথবা শুধু ত্যাগ না জ্ঞানও মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে/ত্যাগ ও জ্ঞান দুটিই মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে। বিভিন্ন নিয়মে বাক্য রূপান্তর করা যায়। যেমন :
ক) সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্য   : শিক্ষিত লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে।
জটিল বাক্য   : যে লোক শিক্ষিত তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে।
সরল বাক্য   : তিনি আসলে আর চিন্তা কী?
জটিল বাক্য   : যদি তিনি আসেন তাহলে আর চিন্তা কী?
সরল বাক্য   : ঈদের ছুটিতে আমরা বাড়ি যাব।
জটিল বাক্য   : যখন ঈদ আসবে তখন আমরা বাড়ি যাব।
সরল বাক্য   : তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।
জটিল বাক্য   : যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন তোমার কথা মনে থাকবে।
সরল বাক্য   : সৎ লোক কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।
জটিল বাক্য   : যে সৎ লোক সে কখনও মিথ্যার সঙ্গে আপোস করে না।
সরল বাক্য   : অন্ধকে আলো দাও।
জটিল বাক্য   : যে অন্ধ তাকে আলো দাও।
খ) জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্য   : যখন তার শৈশবকাল তখন তার বাবা মারা যান।
সরল বাক্য   : শৈশবে তার বাবা মারা যায়।
জটিল বাক্য   : যেহেতু যানজট সেহেতু গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
সরল বাক্য   : যানজট থাকায় গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
জটিল বাক্য   : যদিও লোকটি গরিব তথাপি সে অতিথিপরায়ণ।
সরল বাক্য   : লোকটি গরিব হলেও অতিথিপরায়ণ।
জটিল বাক্য   : যতই পরিশ্রম করবে ততই ফল পাবে।
সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।
গ) সরল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্য   : বাবা আমাকে একশ টাকা দিয়ে বাজারে যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্য : বাবা আমাকে একশ টাকা দিলেন এবং বাজারে যেতে বললেন।
সরল বাক্য   : পরিশ্রম করলে ফল পাবে।
যৌগিক বাক্য : অধিক পরিশ্রম করবে এবং অধিক ফল পাবে।
ঘ) যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্য : তিনি বেড়াতে গেলেন এবং কেনাকাটা করলেন।
সরল বাক্য   : তিনি বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা করলেন।
যৌগিক বাক্য : ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী।
সরল বাক্য   : ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী।
যৌগিক বাক্য : এখনই যাও নইলে তার দেখা পাবে না।
সরল বাক্য   : এখনই না গেলে তার দেখা পাবে না।
ঙ) জটিল বাক্য থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্য   : যদিও আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি তবুও কোন ফল হয়নি।
যৌগিক বাক্য : আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি।
জটিল বাক্য   : সে যেমন কৃপণ তেমন চালাক।
যৌগিক বাক্য : সে কৃপণ এবং চালাক।
জটিল বাক্য   : আমরা যখন স্টেশনে পৌঁছলাম তখন গাড়ি ছেড়ে দিল।
যৌগিক বাক্য : আমরা স্টেশনে পৌঁছলাম আর গাড়ি ছেড়ে দিল।
জটিল বাক্য   : আমরা যখন বাড়ি এসেছি তখন রাত্রি হয়েছে।
যৌগিক বাক্য : আমরা বাড়ি এসেছি আর রাত্রি হয়েছে।
জটিল বাক্য   : পিতা যখন আছেন তখন পুত্রকে খোঁজ কেনো?
যৌগিক বাক্য : পিতা আছেন সুতরাং পুত্রকে খোঁজ কেনো?
জটিল বাক্য   : যে রক্ষক সেই ভক্ষক।
যৌগিক বাক্য : সে রক্ষক এবং ভক্ষক।
চ) যৌগিক বাক্য থেকে মিশ্র বা জটিল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্য      : তিনি বিদ্বান বটে কিন্তু বড়ই দুর্বিনীত।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদিও তিনি বিদ্বান তবুও বড়ই দুর্বিনীত।
যৌগিক বাক্য      : বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি বিদ্বান হও তবে লোকে শ্রদ্ধা করবে।
যৌগিক বাক্য      : নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করো স্বাস্থ্য ভালো হবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যদি নিয়মিত ব্যায়াম কর তাহলে স্বাস্থ্য ভাল হবে।
যৌগিক বাক্য      : দোষ করেছে অতএব শাস্তি পাবে।
মিশ্র বা জটিল বাক্য : যখন দোষ করেছে তখন শাস্তি পাবে।
বাংলায় সাপেক্ষ বাক্য
বাংলা ভাষায় সাপেক্ষ বাক্যের সংগঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। বাক্যের একটা অংশের সম্পাদন যখন অন্য আর একটা অংশের উপর নির্ভর করে তখন সেই বাক্যকেই বলে সাপেক্ষ বাক্য। একে শর্তবাক্য /conditional sentence বাক্য বলতে পারি। সাপেক্ষ জটিল বাক্যের স্বাধীন খণ্ডবাক্যে ‘যদি’, ‘যখন’ ‘যেদিন’ ইত্যাদি সাপেক্ষ পদ বসে এবং অধীন বা আশ্রিত খণ্ডবাক্যে ‘তবে’, ‘তাহলে’, ‘সেদিন’ ইত্যাদি ক্রিয়াবিশেষণ বাচক পদ বসে। আবার শুধু ‘যদি-তবে’ নয়, অন্য সাপেক্ষ পদ দিয়েও সাপেক্ষ বাক্য হয়। যেমন :
১. যদি তুমি যাও তবে আমিও যাব।
২. যদি আমায় তুমি বাঁচাও তবে তোমার নিখিল ভুবন ধন্য হবে।
৩. এই যদি তোমার মনে ছিল তবে আগেই তা বলতে পারতে।
৪. না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে?
৫. যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।
৬. যেদিন তোমার ইচ্ছে হবে সেদিন এসো।
৭. যেই বৃষ্টি এলো অমনি সে ঘরে ঢুকলো।
বাক্যের অর্থগত প্রকরণ
মনের ভাব প্রকাশ করতে ভাষা লাগে। ভাষা শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ লাভ করে। যেমন :  
১. বিবৃতিবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্যবহুল বাক্যকে বিবৃতিবাচক বা বর্ণনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি ঢাকায় যাব। আমি ঢাকায় যাব না।
২. প্রশ্নবাচক বাক্য: ঘটনা, ভাব, বক্তব্য বা তথ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তাকে প্রশ্নবাচক বাক্য বলে। যেমন: আমি কি ঢাকায় যাব? আমি কি ঢাকায় যাব না? আমি কোথায় যাব?
৩. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, বা আমন্ত্রণমূলক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন: পড়, বৃষ্টিতে ভিজবে না, দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।
৪. আশিসবাচক বাক্য: ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশিসমূলক বাক্যকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাবাচক বাক্য বলে। যেমন: দীর্ঘজীবী হও, তোমার মঙ্গল হোক।
৫. আবেগবাচক বাক্য: দুঃখ, শোক, আনন্দ, বিস্ময়, ভয়, লজ্জা, ঘৃণা, করুণা বা প্রশংসামূলক বাক্যকে আবেগবাচক বাক্য বলে। যেমন: ছি! কত লজ্জা। হায়! সে কত দুখী। বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।
অর্থগত বাক্যের রূপান্তর
অর্থের রূপান্তর না করে একপ্রকার বাক্যকে অন্যপ্রকার বাক্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াই বাক্যরূপান্তর। যেমন:
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে প্রশ্নবাচক : আমি ঢাকা যাব—আমি কি ঢাকা যাব না? আমি ঢাকায় যাব না—আমি কি ঢাকা যাব?
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: তুমি বইটি পড়—বইটি পড়।
                             তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না—বৃষ্টিতে ভিজবে না।
                             দয়া করে তুমি একগ্লাস পানি দাও—দয়াকরে একগ্লাস পানি দাও।
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে ইচ্ছাবাচক বাক্য    : আমাদের কবি দীর্ঘজীবী হউক—দীর্ঘজীবী হউক।
বিবৃতিবাচক বাক্য থেকে বিস্ময়বাচক বাক্য: অনেক সুন্দর একটি পাখি— বাহ! পাখিটা কত সুন্দর।
অর্থভিত্তিক বাক্য রূপান্তর
অর্থভিত্তিক বাক্য পরিবর্তন হলো অর্থ অপরিবর্তিত রেখে অস্ত্যক, নর্ঙ্থক, প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাবাচক, প্রার্থনাবাচক, আবেগবাচক ইত্যাদি বাক্যকে অর্থ ভিত্তিক ভিন্ন প্রকরণের বাক্যে রূপান্তরিত করা। এভাবে অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে, নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে, প্রশ্নবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে, আবেগবাচক বাক্যেকে নির্দেশক বাক্যে, নির্দেশক বাক্যকে অনুজ্ঞাবাচক বা প্রার্থনাবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন:
ক) অস্তি থেকে নেতিবাচক বাক্য রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. একটি না যোজক এবং নয় বা নাই (ক্রিয়ার) আগমন ঘটবে।
৩. এই না-বাচক যোজক বা ক্রিয়া ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণটির বিপরীতার্থক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। যেমন: সে বুদ্ধিমান। অর্থাৎ সে নির্বোধ নয় বা বুদ্ধিহীন নয়।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মূল বাক্যের বিশেষ্য বা বিশেষণ অপরিবর্তিত রেখে-ছাড়া, ভিন্ন, ব্যতীত, ব্যতিরেকে ইত্যাদি যোজক ব্যবহার করা যায়। যেমন: এটা দক্ষ লোকের কাজ। অর্থাৎ এটা দক্ষ ছাড়া অন্য লোকের কাজ নয়।
৫. মনে রাখা প্রয়োজন দুটি না-বাচক সমান একটি হ্যাঁ-বাচক (Two negatives make an affirmative)|
নমুনা
অস্তিবাচক    : তিনি সচ্চরিত্র ব্যক্তি।
নাস্তিবাচক    : তিনি অসচ্চরিত্র ব্যক্তি নন।
অস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে অনেক পোড়ো বাগান আছে।
নাস্তিবাচক    : পাহাড়তলিতে পোড়ো বাগানের অভাব নাই।
অস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
নাস্তিবাচক    : দরিদ্র সেবা অপেক্ষা বড় ধর্ম আর কিছুই নাই।
অস্তিবাচক    : সে কথাই এরা ভাবে।
নাস্তিবাচক    : সে কথাই এরা না ভেবে পারে না।

খ) নাস্তি বা নেতিবাচক বাক্য হতে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. না বাচক যোজক বা ক্রিয়া বিলুপ্ত হবে।
৩. নর্ঙ্থক বাক্যের মূল বিশেষ্য বা বিশেষণের বিপরীত শব্দ বসবে।
৪. বাক্যটি যদি মিশ্র বা জটিল হয় তবে অপ্রধান, পরনির্ভর অস্তিবাচক উপবাক্যটিকে নর্ঙ্থক এবং প্রধান স্বনির্ভর নর্ঙ্থক উপবাক্যটিকে অস্তিবাচক বাক্যেরূপান্তরিত করতে হবে।
নমুনা
নাস্তিবাচক বাক্য : এমন কোন লোক নাই যিনি দেশকে ভালোবাসেন না।
অস্তিবাচক বাক্য : সকলেই দেশকে ভালোবাসেন।
নাস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে আর বলা হলো না।
অস্তিবাচক বাক্য : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে অব্যক্তরয়ে গেল।
নাস্তিবাচক বাক্য : সত্যের নাই পরাজয়।
অস্তিবাচক বাক্য : সত্যের জয় আছেই।

গ) নির্দেশক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. কি, কী, কে, কবে, কোথায়, কখন ইত্যাদি প্রশ্নবোধক সর্বনাম বা ক্রিয়া বিশেষণ যোগ করতে হয়।
২. অস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপে একটি না-বাচক যোজক কখনো ক্রিয়ার পরে বসাতে হয়।
৩. নাস্ত্যর্থক বাক্যের প্রশ্নরূপান্তরে না-বাচক শব্দটি বাদ দিতে হয়।
৪. শেষে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন বসাতে হয়।
নমুনা
নির্দেশক বাক্য    : আমি তখন জাগ্রত ছিলাম।
প্রশ্নবোধক বাক্য   : আমি কি তখন জাগ্রত ছিলাম না?
নির্দেশক বাক্য    : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
প্রশ্নবোধক বাক্য   : সৎ বা অসৎ কর্মের ফল কি অবশ্যই ভোগ করতে হবে না?

ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘কি’ যোজক বিলুপ্ত হবে।
৩. সঙ্গে সঙ্গে না বাচক যোজক লুপ্ত হবে।
৪. জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) হবে।
বাক্যটি যদি নর্ঙ্থক করতে হয় তবে-
১. অর্থ অপরিবর্তিত রাখতে হবে।
২. ‘কি’ যোজক বাদ দিতে হবে।
৩. সঙ্গে সঙ্গে একটি না বাচক যোজক আনতে হবে।
৪.জিজ্ঞাসা চিহ্নের (?) জায়গায় দাঁড়ি (।) বসবে।
৫. জটিল ও যৌগিক বাক্যের ক্ষেত্রে প্রধান স্বনির্ভর উপবাক্যটি নর্ঙ্থক উপবাক্যে রূপান্তরিত হবে।
নমুনা
প্রশ্নবোধক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম কে শোনেনি?
নির্দেশক বাক্য : শরৎচন্দ্র মহাশয়ের নাম সকলেই শুনেছে।
প্রশ্নবোধক বাক্য : কে জানে অসিত কবে আসবে?
নির্দেশক বাক্য : অসিত কবে আসবে এ কথা কেউ জানে না।

ঙ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ক্রিয়ার অনুজ্ঞারূপ পরিবর্তিত হয়ে নির্দেশক (অস্তি বা নেতি)রূপ যুক্ত হবে। এ ব্যপারে সাধারণত ভাব বাচ্যের ক্রিয়া পদ ব্যবহৃত হয়। কোথাও তা না হলে কর্তা-অনুসারে অনুরোধ, উপদেশ, আদেশ, পরামর্শমূলক ক্রিয়া পদ ব্যবহার করতে হবে।
নমুনা
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দুর্জনকে দূরে রাখিও।
নির্দেশক বাক্য      : দুর্জনকে দূরে রাখা উচিত।
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : চুপ কর।
নির্দেশক বাক্য      : কথা বলিও না।
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য    : দরিদ্রের সেবা করবে।
নির্দেশক বাক্য      : দরিদ্রের সেবা করা কর্তব্য।

চ) নির্দেশক বাক্য থেকে কার্যকারণাত্মক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. নিয়ম, স্বীকৃতি, সংকেত বা শর্ত আরোপিত হবে।
৩. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।
৪. সংকেত বা শর্তাদি আরোপ করতে হলে ‘লে’ প্রত্যয়ান্ত একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে।
নমুনা
১. ঘরে আনামাত্র সবকিছুই তাদের। >ঘরে আনলে সবকিছুই তাদের।

ছ) কার্যকারণাত্মক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. মূল ক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকবে।
৩. শর্তমূলক অসমাপিকা ক্রিয়া বিশেষ্য পদে (কিংবা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য) রূপান্তর হবে।
নমুনা
১. এসব চিন্তা করলে মনে শান্তি আসে। >এসব চিন্তায় মনে শান্তি আসে।

জ) নির্দেশক বাক্য থেকে সন্দেহদ্যোতক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’ ইত্যাদি শব্দের যেকোনো একটি ব্যবহৃত হবে।
নমুনা
১. তার দুর্নিবার লোভরিপুই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ। >তার দুর্নিবার লোভরিপু নিশ্চয়ই তাদের পরিতাপ প্রাপ্তির একমাত্র কারণ।
২. আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই উপকার করতে পারি না। >আমরা পরের উপকার করব মনে করলেই বোধহয় উপকার করতে পারি না।

ঝ) সন্দেহদ্যোতক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ‘বুঝি’, ‘হয়তো’, ‘বোধহয়’, ‘সম্ভবত’, ‘নিশ্চয়’, ‘অবশ্য’ ইত্যাদি শব্দ বিলুপ্ত হবে।
৩. কর্তৃপদ বা অনুরূপ পদের সঙ্গে একটি নিশ্চয়সূচক ‘ই’ যোজক যুক্ত হয়।
নমুনা
১. সেগুলো বোড়াটোড়া হবে বোধ হয়। > সেগুলো বোড়াটোড়াই হবে।

ঞ) নির্দেশক বাক্য থেকে প্রার্থনাবোধক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াকে ‘উক’ বা ‘উন’ বিভক্ত্যন্ত হয়। যেমন: করুক, করুন। ইচ্ছামূলক বর্তমান কালের ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করতে হবে।
নমুনা
১. যম এদের ভুলে থাকবেন। > যমেএদের ভুলে থাকুন।
২. সেইদিন সমস্যার সমাধান হবে। > সেইদিনই সমস্যার সমাধান হউক।

ট) প্রার্থনাবোধক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যতকালের নির্দেশক ক্রিয়ার রূপান্তরিত হবে।
৩. প্রয়োজনবোধে ‘বক্তা কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যোগ করা যায়।
নমুনা
১. সমস্তলোক আমার আয়ত্তর বশীভূত থাকুক। > সমস্তলোক আমার আয়ত্ত ও বশীভূত থাকবে।
২. দেব দিবাকর আগে যাক অস্তাচলে। > দেব দিবাকর আগে যাবে অস্তাচলে।
৩. সন্ধ্যার তিমির আসুক নিবিড় হয়ে। > সন্ধ্যার তিমির আসবে নিবিড় হয়ে।

ঠ) নির্দেশক বাক্যকে বিস্ময়বাচক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. বাক্যের মধ্যে একটি বিস্ময়বোধক যোজক পদ যেমন: আহা, হায় ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।
৩. বিশেষণ পদের আগে একটি ‘কী’ বিশেষণীয় বিশেষণ বসবে।
৪. বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্যবোধক (!) চিহ্ন বসবে।
নমুনা
নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় চমৎকার।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।
নির্দেশক বাক্য      : দৃশ্যটি বড় করুণ।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : দৃশ্যটি কী করুণ!
নির্দেশক বাক্য      : এতো ভয়ানক দুঃখের কথা।
বিস্ময়সূচক বাক্য         : কী ভয়ানক দুঃখের কথা!

বিস্ময়বাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
বিস্ময়বাচক বাক্য    : বাড়িটি কী সুন্দর!
নির্দেশক বাক্য      : বাড়িটি বড় সুন্দর।
বিস্ময়বাচক বাক্য    : ত্যাগের কী অপূর্ব মহিমা!
নির্দেশক বাক্য      : ত্যাগের মহিমা বড় অপূর্ব।

ড) ইচ্ছাবাচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর
নিয়ম
১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।
২. ইচ্ছাবাচক বর্তমান কালের ক্রিয়া ভবিষ্যৎ কালের নির্দেশক ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হবে।
৩. প্রয়োজন বোধে বক্তা ‘কামনা করেন’ ইত্যাদি উপবাক্য যুক্ত করতে হবে।
নমুনা
ইচ্ছাবাচক বাক্য : তুমি দীর্ঘজীবী হও।
নির্দেশক বাক্য : তোমার দীর্ঘজীবন কামনা করি।
ইচ্ছাবাচক বাক্য : জয় হোক ত